গুরুমহারাজ—না-না ! কেউ বিরোধ করতে চাইলেও বা তোমরা বিরোধ করবে কেন __বিরোধ করতে নাই। একটা গল্পের মাধ্যমে এই ব্যাপারটা তোমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি _ শোনো !
ভ্রমর পদ্মমধু খায় আর গুবরে পোকা গোবর খায়—কিন্তু তাদের মধ্যে হঠাৎ করে একদিন বন্ধুত্ব হয়ে গেল ? কিছুদিন পরে ভ্রমরের মনে হোলো যে_ ‘বেচারা গুবরে পোকা সারাজীবন গোবর খেয়েই গেল _ তাকে একবারের জন্য অন্তত মধুর আস্বাদ দেওয়া যাক্ !’ এই ভেবে সে গুবরে পোকাকে রাজী করিয়ে পদ্মবনে আনলো, গোবরের থেকে একটু better taste- দেওয়ার জন্য ।
এখানে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করো__ ভ্রমর কি গুবরে পোকাকে পদ্মবনে না নিয়ে গিয়ে _শুধুমাত্র ‘পদ্মমধুর taste কেমন’ এইসবের বর্ণনা দিয়ে বোঝাতে যাবে ? সেটা করতে গেলে তো নিছক বোকামি হবে !
যদি গুবরে পোকা মধুর taste জানতেও চায়, তাহলে ভ্রমরের বলা উচিত—’তাতো বলতে পারবো না, একদিন আমার সঙ্গে সেখানে চল্, নিজে পদ্মমধু খেয়ে তার আস্বাদ কেমন_তা দেখে আয়!
যাই হোক, পদ্মবনে গিয়ে ওরা দুজনেই পদ্মের উপর বসে পড়লো। খানিক পদ্মমধু খাবার পর আনন্দে ভ্রমর গুনগুনৃ শব্দে গান করতে লাগলো—কিন্তু গুবরে পোকা চুপ ! ভ্রমর জিজ্ঞাসা করল—’কি বন্ধু! পদ্মমধুর কেমন taste ! গুবরে পোকা উত্তর দিল–’taste আর কেমন হবে_ ঐ গোবরেরই মতো।’ এই ধরণের কথা শুনে ভ্রমর আসল কারণটা বুঝতে পারলো, তাই সে গুবরে পোকার কাছে গিয়ে বললো – ‘হাঁ করোতো দেখি !’ সে ‘হাঁ’ করতেই দেখা গেল__তার মুখের ভিতরে একদলা গোবর! সেটা দেখেই ভ্রমর বললো, ‘আগে তুই মুখ থেকে গোবর ফ্যাল্, তবে তো মধুর taste পাবি !’ গুবরে পোকা মুখ থেকে গোবর ফেলে দেবার পর তবে সে মধুর taste পেল !
গল্পের তাৎপর্যটা ধরতে পারলে কি ! সমাজজীবনে চলার পথে _বিরোধ কেন হয়, সেই কারণটা বললাম। যে কোনো মানুষের মনোজগতে একটা project থাকে, এবার তুমি হয়তো তাকে যখন better কিছুর সন্ধান দিচ্ছো বা সেই সম্বন্ধে কোনো কথা বলছো–তখন কিন্তু ওর সেই ভালোর taste হোচ্ছে না ! কারণ গুবরে পোকার মুখে রাখা এক দলা গোবরের মতো ওর মনে যে project রয়েছে _ সেটাই তো এই teste-কে resist করছে। এখন যদি তোমাকে নতুন কিছুর taste পাওয়াতে হয়, তাহলে ওর মুখে রাখা গোবরকে ‘ওয়াক থু’ করে ফেলে দিতে হবে। অর্থাৎ ওর মনে যে project রয়েছে সেটাকে ভেঙ্গে চুরমার করতে হবে _তবে তো সে নতুন কিছুর taste পাবে।
তবে সাধারণতঃ সাধারণ মানুষ বা কোনো lay man অন্য কারোর মনের project নষ্ট করতে পারে না—একমাত্র আধ্যাত্মিক ভাবে উন্নত ব্যক্তিরা বা বলা যায় চাপরাশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এটা করতে পারেন। তাই তো যখনই পৃথিবী গ্রহে কোনো মহাপুরুষ শরীর গ্রহণ করেন_ তখন বন্যার জলের মতো বহু মানুষের অন্তঃকরণে ঐ মহাপুরুষের ভাবরাশি হু হু করে ঢুকে পড়ে ৷ আর এই ভাবেই শত শত মানুষকে আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান দিয়ে তাঁরা সমাজের প্রকৃত কল্যাণ সাধন করে থাকেন ৷।