জিজ্ঞাসু—’উৎসব’ ও কি আবার সাত্ত্বিক, তামসিক ইত্যাদি হয় নাকি ?

গুরুমহারাজ—প্রকৃতিতে এই তিনটি গুণ সদাসর্বদাই রয়েছে ! সুতরাং মানুষ ও এই তিনটি গুনের ই অন্তর্গত।উৎসব করে তো মানুষ, অন্যান্য জীব এটা করে না। সুতরাং কোনো মানুষ নিজে যে গুণসম্পন্ন, তার সমস্ত আচরণেই সেই বিশেষ গুণটি প্রকাশ পাবে। কোনো জায়গায় হয়তো কোনো শুদ্ধসাত্ত্বিক মানুষ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম চালু করে গেছেন, পরবর্তীতে অনেকেই সেটাকেই মেনে চলে। তবে ঐ ‘মেনে চলা’-দের সবাইকে সাত্ত্বিক হোতেই হবে_ তার কোনো মানে নাই । কিন্তু দেখা গেছে সব পরম্পরাতেই প্রচলিত system টা অনুগামীরা মেনে চলে।

ঐ যে আগে বলা হয়েছে যে, প্রকৃতিতে তিনটি গুন সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ সবসময়ই রয়েছে। যেমন ধরো– এখানেই রয়েছে_ ফুল। ভোরে ফোটে পদ্ম, চাঁপা –এই ফুলগুলি সাত্ত্বিক, এদের গন্ধ মস্তিষ্ককে relax করে—ক্লান্তি দূর করে।

দুপুরে-সন্ধ্যায় ফোটে রাজসিক ফুল–বেশীরভাগ রঙিন ফুলকেই তুমি এই দলে পাবে ! এদের মধ্যে বেল ফুল খুব ভালো, মস্তিস্ক ঠান্ডা রাখে । আর গভীর রাত্রে যে সমস্ত ফুল ফোটে__ তারা বেশীরভাগই সাদা হয়, কিন্তু তীব্র গন্ধযুক্ত, এরা তামসিক !

এদের বর্ণের বৈচিত্র্যের প্রয়োজন নেই, তাই গন্ধ দিয়েই এরা মথ জাতীয় পতঙ্গ কে আকর্ষণ করে। আর দিনের বেলায় ফোটা ফুলের বিচিত্র বর্ণ ___যার দ্বারা মৌমাছি আকৃষ্ট হয়। এইসব ফুলের সুগন্ধে মস্তিষ্কে harmony ফিরে আসে।
এই হিসাবে দ্যাখা গেছে__ মানুষ প্রাকৃতিক সুগন্ধের মধ্যে থাকলে শান্ত থাকে, ভাল থাকে। আর বাজে গন্ধে মস্তিষ্ক বিকৃতি পর্যন্ত হোতে পারে। জানতো “লাফিং গ্যাস” মানুষকে শুঁকিয়ে দিলে – সে হাসতে থাকবে অর্থাৎ মস্তিষ্ককোষে সরাসরি effect করবে। এবার ভাবো, কোনো মানুষ হয়তো natural-ভাবে দুঃখিত —সে কাঁদতে চাইছে, এমন সময় যদি তাকে লাফিং গ্যাস শুকিয়ে দেওয়া হয় তা কি সহ্য করতে পারবে ? পায়খানা-পেচ্ছাব করে ফেলবে। এমন তীব্র দমক আসবে যে সহ্য করতে পারবে না ।।

জিজ্ঞাসু—নেশার বস্তু গ্রহণ করলেও এমনটা অনেক সময় হয় না কি ?

গুরুমহারাজ – হ্যাঁ, নেশা করে না বা নেশায় অভ্যস্ত নয়, এমন লোককে গাঁজা বা মদ একটু বেশী পরিমাণে খাইয়ে দিলে যদি তার কোষ্ঠ পরিষ্কার না থাকে, তাহলে পায়খানা করে ফেলবে। নেশার দ্রব্যের ক্রিয়াও সরাসরি মস্তিষ্কে হয়, তাই দেখবে মাথা তুলতে কষ্ট হচ্ছে আর মাথার balance থাকে না বলেই পা টলমল করছে। মানুষে বলে ‘মাতালের পা টলছে’ –কিন্তু এটা ভুল কথা ।

জানতো __একপ্রকার নেশার দ্রব্য ‘চণ্ডু’ খাইয়ে একটা সুস্থ লোককে পাগল করে দেওয়া যায় ! শত্রুতা করে পানের সঙ্গে এটা মিশিয়ে খাইয়ে দিলে একটা মানুষ পাগল হয়ে যেতে পারে। কচি তামাক পাতা ঘসে ঘসে তার রস থেকে ‘চণ্ডু’– তৈরী হয়। এক কুইণ্টাল তামাক পাতা থেকে হয়তো ১০০ গ্রাম ‘চণ্ডু’–পাওয়া যায়। এই জন্যই ‘চণ্ডু’-র খুব দাম। আমি বিভিন্ন নেশার দ্রব্য—চন্ডু, চরস, গাঁজা, তামাক, মদ সবই খেয়ে দেখেছি—শরীরের উপর এই সব দ্রব্যগুলির কিরকম ক্রিয়া হয়। গাঁজা যে খায়, তার যদি ব্রহ্মচর্য না থাকে, তাহলে তার শরীরের ব্যপক ক্ষতি হবে। T. B. কিংবা হাঁপানি হয়ে যাবে আর prostate gland-এর বারোটা বাজবে। এই জন্যই দেখবে সাধুরা গাঁজা খেয়েও ঠিক আছে, সাধন-ভজন করছে। বামদেব মদ খেয়েই সাধনা করেছিলেন, মাতৃদর্শন হয়েছিল। সেই দেখে অনেকেই তা করতে গিয়ে তারা মাতাল হয়ে যাচ্ছে—আসল তালটাই ভুলে যাচ্ছে। সব্য আমার সঙ্গে ১০/১২ দিন তারাপীঠ, বক্রেশ্বর, জয়দেব এই সমস্ত অঞ্চল ঘুরেছিল। জয়দেবে দেখেছিলাম গাঁজার ধূম। গাঁজার ধূম মানে গাঁজার ধোঁওয়া—এমন ধোঁওয়া যে, সেই স্থানে খানিকক্ষণ থাকলেই তোমার নেশা হয়ে যাবে। সব্যকে বলা ছিল যে, কোনো সাধুর কাছে গেলে যেন আমার পরিচয়টা না দেয়। ওর দাড়ি-গোঁফ রয়েছে আর আমার মুখ পরিষ্কার, ফলে ওকে বললাম- -“তুমি মহারাজ বনে যাও আর আমি তোমার চেলা।’ ও ওসব খেতে পারে, আমি ready করে দিচ্ছিলাম ফলে সবাই তাই ভেবে নিল। কয়েকজন মহাত্মার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ওখানে। তবে দেখলাম প্রকৃত সাধুরা অন্য একজন সাধুর কাছেই আধ্যাত্মিক কথা বলে, lay-man- এর কাছে ধরা দেয় না। ঠক্ বা ভেকধারী সাধুরা প্রকৃত সাধু দেখলে শঙ্কিত হয়, আর layman-এর কাছে বড়াই করে।।