গুরুমহারাজ — জড়েরও প্রাণ আছে, চেতনা আছে। প্রাণ বলতে তোমার ধারণা কি ? প্রাণবায়ু ? না এটা ভুল। পঞ্চপ্রাণ বা পঞ্চবায়ুকে বলা হয়—প্রাণ, অপান, সমান, উদান, ব্যান। কিন্তু উপনিষদের যে প্রাণবিদ্যা সেখানে বলা হয়েছে প্রাণই ঈশ্বর। সেই প্রাণের concept কিন্তু ভিন্ন । সেখানে প্রাণ সর্বান্তর্যামী, সবকিছুর মূলে হোচ্ছে প্রাণ। জড়ে, জীবে এবং সর্বত্র প্রাণ পূর্ব থেকেই বিদ্যমান। আর চেতনার কথা বলছো ? চেতনার outward manifestation হোলো জড় এবং চেতনার inward manifestation হোচ্ছে জীব। চেতনার inward ক্রিয়া থেকেই evolution শুরু হয়। যার চূড়ান্ত পর্যায় হোলো মানুষ। মানুষের পর আর evolution হয় না —হয় envolution অর্থাৎ আত্মিক উত্তরণ বা চেতনার upward mani- festation ! জড় আর জীবের মধ্যবর্তী অবস্থায় রয়েছে virus ! virus-এর মধ্যে চেতনার inward এবং outward দুটো ক্রিয়াই বিদ্যমান। এরপরের অবস্থা হোলো উদ্ভিজ্জ এর highest manifestation অশ্বত্থাদি বৃক্ষ। গীতায় বিভূতি-যোগে পাবে, ভগবান বলছেন বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ জীবের সংস্কার বোঝাতে উদাহরণ দিতেন, অশ্বত্থের গোড়া যতই কাটো আবার ফেকড়ি বেরোবে” অর্থাৎ এর প্রচন্ড জীবনীশক্তি । এখনও অশ্বত্থ বৃক্ষ নিয়ে ঠিকমতো research হয়নি, হোলে দেখা যাবে পরবর্তীতে এখান থেকে প্রচুর জীবনদায়ী ঔষধ আবিষ্কার হবে।
প্রাণীর দেহে প্রাণ কিভাবে এসেছে – এ সম্বন্ধে এখনও বিজ্ঞানীদের ধারণা অস্পষ্ট। কেউ কেউ বলেছে D.N.A বা R.N.A এর জন্য দায়ী। কিন্তু এটা ঠিক নয়—ভুল। কারণ D. N. A বা R.N.A-র যে composition অর্থাৎ নিউক্লিও অ্যাসিড বা প্রোটিন ইত্যাদি – এগুলি তো রসায়নাগারে তৈরী করা যায় ! তাহলে গবেষণাগারে প্রস্তুত করা কেমিক্যালের মধ্যে প্রাণের ক্রিয়া শুরু হোচ্ছে না কেন ? হবেও না কোনোদিন।
প্রকৃতপক্ষে মহাপ্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আপন খেয়ালে লক্ষ লক্ষ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাণীর। তখনকার নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, চাপ এবং vibration-এ বিশেষ পরিস্থিতিতে চেতনার অন্তর্মুখীনতা এসেছিল এবং সৃষ্টি হয়েছিল প্রাণী। তারপর থেকেই অভিবিকাশ বা evolution হয়ে চলেছে। এই চেতনার inward ক্রিয়া এবং upward ক্রিয়া এখন হয়ে চলেছে—এটা চলবেও অনেক কাল। এখন মহাবিশ্বের expansion period চলছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, প্রতিটি মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে । এইটা extreme পর্যায়ে পৌঁছালে তখন আবার শুরু হবে contraction ! এটাও চলতে থাকবে অনেকদিন। অবশেষে যখন gravitation খুব বেড়ে যাবে তখন মহাজাগতিক বস্তুসমূহ একে অপরের সঙ্গে collide করবে। এটাকেই বিজ্ঞানীরা বলে থাকে ‘লয়’ বা ‘প্রলয়’ । এইভাবেই সৃষ্টি এবং ‘লয়’ হয়ে চলেছে অনন্তকাল ধরে।
লয়ের পর আবার শুরু হয় নতুন সৃষ্টি। এই ক্রমেই মহাপ্রাকৃতিক লীলা ঘটে চলছে অনন্ত কাল ধরে!ফলে, এই মহাবিশ্বের যে মহাজাগতিক নিয়ম—এখানে মানুষের চিন্তা-ভাবনা বা ক্রিয়াশীলতার ভূমিকা এতই নগণ্য যে, তা উপেক্ষা করা যেতেই পারে। এইজন্যই জ্ঞানীগণ সাধারণ মানুষকে বাজিকরের পুতুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এই যে মহাবিশ্বের ‘লয়’ হওয়া, এর পিছনেও অজস্র কারণ রয়েছে। যেমন প্রচণ্ড গরম গুমোট আবহাওয়ার পর এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস মানুষকে স্বস্তি দেয়, সমস্ত রকম গুমোট-অস্বস্তি কাটিয়ে fresh-ness এনে দেয়__ তেমনি মহাবিশ্বে নানারকম ঝঞ্ঝাট, বিশৃঙ্খলা, বেনিয়ম ধীরে ধীরে যখন প্রকট হোতে থাকে, তখনই আসে প্রলয়। শুধু যদি পৃথিবীগ্রহের বিচার করো তাহলেও দেখতে পাবে এখানে যেমন অসহজতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, বেনিয়ম বাড়ছে ঠিক তেমনি মহাবিশ্বেরও একই নিয়ম।
যাইহোক, মাঝে মাঝে মহাজাগতিক সৌরঝড় পৃথিবীর অবাঞ্ছিত বর্জিত পদার্থকণাদের ঝেঁটিয়ে নিয়ে যায় এবং আবার কিছু নতুন particle দিয়েও যায়—এইভাবে কিছুটা শৃঙ্খলা বজায় থাকে। অনেকে ধূমকেতুকে অমঙ্গলের চিহ্ন হিসাবে চিহ্নিত করে, কিন্তু ধূমকেতু পৃথিবীর সামগ্রিক কি ক্ষতি করবে ? ধূমকেতু তো সৌর পরিবারেরই সদস্য ! ওরও নির্দিষ্ট কক্ষপথ রয়েছে, না হোলে বিজ্ঞানীরা কি করে বলছে যে, ওটা আবার এত বছর পর ফিরে আসবে ? ফলে ধূমকেতুও নির্দিষ্ট নিয়মেই প্রদক্ষিন করে চলেছে। কিন্তু ধূমকেতুর লেজের area-টা বড়, তাই ওটা একটা বিরাট field –carry করে বেড়ায়। এর ফলে ও যখন পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে, তখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কমবেশী হয়ে যেতে পারে। এর ফলে পৃথিবীতে প্লাবন, ভূমিকম্প হয়ে যেতে পারে—উভয়ের মাধ্যাকর্ষণের হঠাৎ তারতম্যের ফলে একটা ঝাঁকুনিও হোতে পারে। এইজন্য ধূমকেতুর উদয় হোলে আবহাওয়া মণ্ডলের কিছু কিছু পরিবর্তন হোতে পারে, কোনো নতুন virus জন্ম নিতে পারে বা কোনো সুপ্ত virus ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে। এসবের জন্যই মানুষ ধূমকেতু এলে আশঙ্কা করে। হয়তো বহু পূর্বে কোনো ধূমকেতু পৃথিবীর কাছাকাছি হওয়ার ফলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল। মানুষের মনে পুরুষানুক্রমে সেই ভয়টা সঞ্চারিত হয়েছে।
তবে মহাপ্রলয় —যেটা বললাম সেটা শুধু পৃথিবীর বা সৌরজগতের ক্ষেত্রে নয়, ওটা সমগ্র মহাবিশ্বে একইসাথে একইভাবে হয়। এই মহাজাগতিক নিয়মকেই ঈশ্বরের ইচ্ছা বলা হয় ।