জিজ্ঞাসু—শিরডির সাইবাবাই কি বর্তমানের সাইবাবা ?

গুরুমহারাজ:— না—না ! শিরডি সাইবাবা উত্তরভারতের মানুষ, আর বর্তমানের সত্য সাইবাবা দক্ষিণভারতের মানুষ। তাছাড়া শিরডির সাইবাবা অনেকদিন হোলো মারা গেছেন, অপরদিকে বর্তমানের(১৯৯০-৯১) সাইবাবা এখনও বেঁচে।

শিরডির সাইবাবার জন্ম হয়েছিল শিপ্রা নদীর ধারে একটি গ্রামে। তাঁর পিতা পেশায় মাল্লা(নদীর মাঝি) ছিলেন। পিতা ও মাতা উভয়েই শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন কিন্তু তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। একদিন ঝড়জলের রাত্রি, হঠাৎ পিতার মনে হোলো নৌকাটা বোধহয় ঠিকমত বাঁধা হয়নি, তাই তিনি নৌকাটিকে ঠিকমতো বাঁধার জন্য অন্ধকারের মধ্যে একাই বেরিয়ে গেলেন। মা-ও ঘরে একা ছিলেন, এমন সময় বাইরে দরজায় ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ হোলো। মা ভাবলেন হয়তো বা স্বামী এসেছে কিন্তু দরজা খুলে দেখেন এক বৃদ্ধ —ভিজে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছে। তিনি এইটা দেখে তাড়াতাড়ি বৃদ্ধকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মাথা মুছিয়ে ভিজে কাপড় ছাড়িয়ে শুকনো কাপড় পরতে দিলেন এবং কিছু গরম পানীয় দিলেন। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃদ্ধ একটু সুস্থ হোলো কিন্তু সে জানালো যে, সে বড়ই ক্ষুধার্ত। তখন মা ঘরে খুঁজে খুঁজে সামান্য আহার্য জোগাড় করে বৃদ্ধকে খেতে দিলেন। কিন্তু তা খেয়েও বৃদ্ধের ক্ষুন্নিবৃত্তি হোলো না । মা আর কি করেন __ঘরে থাকা সমস্ত কৌটো-বাটা থেকে যেটুকু খাবার যোগাড় করতে পারলেন, তার সবটুকু বৃদ্ধকে এনে দিলেন ! বৃদ্ধ সেইটা খেয়ে জল পান করে ঢেকুর তুলে বললেন – “আঃ এতক্ষণে শান্তি হোলো, এবার আমি ঘুমাবো।” এই বলে সেই বৃদ্ধ তাঁদের শয্যার দিকে তাকালো। মা পড়লেন মহা মুস্কিলে ! স্বামী অনুপস্থিত _ বৃদ্ধ হোলেও পরপুরুষ তো, তাকে তাদের শয্যায় শুতে দেন কি করে ! এইসব সাত-পাঁচ ভাবছেন হঠাৎ দরজায় আবার আঘাত ! ‘এবার নিশ্চয়ই স্বামী এসেছেন’ _ এই ভেবে দরজা খুলতেই দেখেন সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা! বৃদ্ধাটি ঘরে ঢুকেই বৃদ্ধকে ঐ অবস্থায় দেখে রেগে আগুন। দুজনে লেগে গেল ঝগড়া ! ঝগড়াঝাঁটি থেকে প্রায় হাতাহাতি হবার জোগাড় ! মা আর কি করেন, হাতজোড় করে একবার একে থামানোর চেষ্টা করছেন আর একবার ওকে। কিন্তু কেউ শান্ত হোচ্ছে না দেখে নিরুপায় হয়ে তিনি বিপদের ত্রাতা মহাদেবকে একমনে স্মরণ করতে লাগলেন। হঠাৎ বন্ধ চোখে আলোর জ্যোতি অনুভব করতেই তিনি চোখ খুললেন। চোখ খুলে দেখেন কোথায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা! সারাঘর আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত, আর তার মাঝে শিব ও শিবানী প্রসন্ন-দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চেয়ে রয়েছেন । এই অপার্থিব দৃশ্য দেখে মা আর স্থির থাকতে পারলেন না —অচৈতন্য হয়ে ঘরেই পড়ে গেলেন।

এদিকে সত্যিই জলের ধাক্কায় নৌকার কাছি খুলে নৌকা ভেসে গিয়েছিল—সেই নৌকাকে ঠিকমতো জায়গায় এনে শক্ত করে বেঁধে ঘরে.ফিরতে পিতার প্রায় ভোর হয়ে গেছিলো। তিনি এসে স্ত্রীকে ডেকে তুললেন—আর তাঁর কাছে সমস্ত কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁকে নিয়ে শিবমন্দিরে গিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম ও প্রার্থনা করতে লাগলেন। তাঁদের ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে শিব বর দেন যে, তাঁদের পুত্র সন্তান হবে এবং তাঁর দ্বারা জগৎকল্যাণ হবে।

এই ঘটনার পর ঐ দম্পতির যে পুত্র হয়েছিল—সেই ছেলেই পরবর্তীকালের শিরডির সাইবাবা। সাইবাবার জন্মের পরই তার পিতা ও মাতা দুজনেরই মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনা ঘটেছিল কি, আসন্ন প্রসবা স্ত্রীকে নিয়ে স্বামী শিপ্রা নদীর তীর ধরে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যেই প্রসব বেদনা ওঠায়—বিপন্ন স্বামী সাহায্যের খোঁজে পাগলের মতো ছুটে বেরিয়ে যান এবং শিপ্রা নদীতে অন্ধকারে পড়ে ভেসে যান। এদিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্তান প্রসব হয়ে যায়। মা নিজের চোখে স্বামীর মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে সহ্য করতে না পেরে নবজাতককে ভাল করে কাপড়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে শুইয়ে রেখে নিজেও তৎক্ষণাৎ শিপ্রা নদীতে আত্মবিসর্জন দিয়ে দিয়েছিলেন। … [ক্রমশঃ]