গুরুমহারা:—‘অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে’ —গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে একথা বলেছিলেন। অভ্যাসযোগেই মন বশীভূত হয়। অভ্যাসের দ্বারা কিনা হয় বলো__আর সামান্য মন বশে আসবে না ? প্রয়াগের কুম্ভমেলায় একজন সাধুবাবা কে দেখেছিলাম __সে শরীরের যে কোনো অঙ্গকে নাচাতে পারতো ! একটা অঙ্গ নাচাচ্ছে বা কাঁপাচ্ছে কিন্তু অন্য অঙ্গগুলি স্থির রয়েছে। এইটা অভ্যাস করতে তার কত বছর লেগেছে বলতো ? হয়তো দশ অথবা বারো বছর।।
এই যে বর্তমানের ভারতীয় ব্যায়ামবিদ রয়েছেন মনোহর আইচ্, তিনি তাঁর বাইসেপ্স পেশি দেখিয়ে গোটা পৃথিবীতে নাম করেছেন কিন্তু এটা করতে তাঁর কি কম সময় লেগেছে ? খুব ছোটো বয়েস থেকে practice করতে হয়েছে ওনাকে __তবেই আজকের মনোহর আইচ্-কে আমরা দেখতে পাচ্ছি। একজন তুর্কী মহিলাকে আমি দেখেছিলাম, তিনি তাঁর নাভিতে পর পর আটটি মুদ্রা রেখে দিয়ে সেগুলিকে নাচাতে পারতেন। এই অভ্যাস করতে করতে শেষে তাঁর এমন সিদ্ধি এসে গিয়েছিল যে, তিনি ঐ মুদ্রাগুলির একটিকে স্থির রেখে বাকি সাতটিকে নাচাতে পারতেন অথবা ১/৩/৫/৭ সংখ্যক মুদ্রাগুলি স্থির রেখে ২/৪/৬/৮ সংখ্যক মুদ্রাগুলিকে নাচাতে পারতেন ! আশ্চর্য মনে হোচ্ছে না !!!! কিন্তু বলতো কি অসাধারণ অভ্যাসের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে !
আরো একজনের কথা বলছি শোনো __বাঁকুড়া অঞ্চলে গ্রামের দিকে একজন মহিলা যোগী ছিলেন গিরিবালা, উনি কোনো স্থূল খাদ্য গ্রহণ করতেন না ! সূর্য থেকে উনি ওনার নিজের শরীরের পুষ্টির জন্য যাবতীয় রসদ সংগ্রহ করে নিতেন। এইরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতীর হঠযোগ জানা ছিল। একবার তিনি খেতরীর মহারাজার অতিথি হয়েছিলেন। রাজার দুটো বিলেতি ‘জোকো’ গাড়ি ছিল। তৎকালীন গাড়ি মানে বুঝতেই পারছো কেমন heavy engine । দয়ানন্দ রাজার সঙ্গে challenge করেছিলেন যে, ঐ গাড়ি দুটির মাঝখানে তাঁকে রেখে যদি লম্বা দড়ার সঙ্গে তাঁকে ও গাড়ি দুটিকে পৃথকভাবে বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে গাড়ি দুটি, এক ইঞ্চিও আগাতে পারবে না। মহারাজ একথা শুনে বিস্মিত হয়ে সমস্তরকম ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। গাড়ি দুটিকে বিপরীত দিকে রেখে দয়ানন্দকে লম্বা দুটি পৃথক শক্ত দড়া দিয়ে গাড়ির সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। গাড়ি দুটোকে চালু করার পর টপ গিয়ারে দিয়েও একটু আগানো যায় নি। এই ঘটনা নিজের চোখে দেখে খেতরীর মহারাজা দয়ানন্দকে খুব মানতো।
জানো ,দয়ানন্দর মতো এমন শক্তিশালী লোক পৃথিবীতে খুব কম দেখা যায়। একবার উনি লাহোরে জনসভায় বক্তৃতা করছেন, সভায় অনেক শিখ, পাঞ্জাবি শ্রোতাও রয়েছে, এমন সময় হঠাৎ উনি বলে বসলেন, ‘নানকের ব্যাকরণ জ্ঞান নেই তো ব্রহ্মজ্ঞান কি করে হবে ?” হয়তো নানকের কোনো লেখায় ব্যাকরণগত কোনো ভুল ছিল_তাই উনি আলোচনা প্রসঙ্গে একথা বলেছিলেন। সে যাইহোক, এদিকে হয়েছিল কি __যেমনি একথা বলা—একজন পাঞ্জাবী সর্দার সঙ্গে সঙ্গে একলাফে কৃপাণ হাতে স্টেজে উঠে পড়েই ‘বাহে গুরুজী কা খালসা’ বলেই এক কোপ ! কিন্তু ওরা দয়ানন্দকে তো চেনে না ! উনি কি নিজের সামর্থ্যের কথা না জেনে মৌচাকে ঢিল মেরেছেন ? ফলে উনি প্রত্যাঘাত আসতে পারে _ এই ব্যাপারে ready -ই ছিলেন। যেই শিখ-সর্দারটি কৃপাণ বের করার সাথে সাথেই দয়ানন্দ প্রচন্ড ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কৃপাণটি ধরে ফেলেছিলেন এবং অবলীলায় সেটাকে দু’টুকরো করে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন। এতেই উনি থেমে থাকেন নি_তারপর ঐ সর্দারজীকে এক হাতে ধরে দু’পাক ঘুরিয়ে উঁচু স্টেজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন অন্তত ৩০ ফুট দূরে ! ওনার এইরকম অলৌকিক ক্ষমতা দেখে অন্যান্য সর্দারজী যারা সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা ‘যো বোলে সো নিহাল, সৎশ্রী অকাল’ বলে মারলো ছুট্। তাহলেই ভাবো, দীর্ঘ অভ্যাসের দ্বারা লব্ধ যোগশক্তির সাহায্যে কি অসাধারণ দৈহিক শক্তিই না লাভ করেছিলেন দয়ানন্দ !
কথা বলতে বলতে আমার এই ধরণের বহু ঘটনাই মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের রায়না আশ্রমের ভক্তদের মধ্যে অনেকেই দেখেছে যে, রায়না(পূর্ব বর্ধমান)-র কাছে জামালপুরের একজন ব্যক্তি এক হাতে চাগিয়ে একটা পূর্ণবয়স্ক মোষ তুলতে পারতো। হয়েছিল কি _ঐ মোষটি যখন বাচ্ছা, তখন থেকেই ওই ব্যক্তি প্রতিদিন একহাতে করে সেই বাচ্চাটিকে তোলা অভ্যাস করতো। ফলে, মোষটা যখন পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেল তখন আর তাকে তুলতে ওর অসুবিধা হোতো না।
হরিদ্বার থেকে কঙ্খলের দিকে যাবার পথে একজন সাধু থাকতো, সে দেড় কুইন্টাল মাল তুলতে পারতো। এইভাবে তুমি হাজার প্রমাণ পাবে যে, নিয়মিত ও নিষ্ঠার সঙ্গে অভ্যাস করলে সব কিছুই তোমার বশীভূত হোতে পারে। মনকে বশ করা তো কঠিন কিছু নয়—কিছুদিন অভ্যাস করো, আমার কথার সত্যতা তুমি নিজেই টের পাবে।।