গুরুমহারাজ:—তপস্যায় সিদ্ধি আসে, আর আরাধনায় ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। তপস্যায় প্রাপ্ত সিদ্ধি আবার ততক্ষণই থাকে যতক্ষণ মহামায়ার নিয়মকে অতিক্রম না করা হয়, মহাজাগতিক মহানিয়ম লঙ্ঘন করলে সাধনায় প্রাপ্ত সিদ্ধিও নষ্ট হয়ে যায়। উত্তরকাশীতে একজন সাধু প্রায় বারো বছর ঊর্ধ্ববাহু হয়ে তপস্যা করছিল। তার ডান হাতটা উপর দিকে থেকে থেকে কাঠের মত শক্ত হয়ে গিয়েছিল। ন’কাকা যখন আমার সাথে উত্তরভারত গিয়েছিল(১৯৮১/৮২ সাল) তখন ন’কাকাও সাধুটিকে দেখেছিল।
যাইহোক__ মহামায়ার এমনিই মোহিনী মায়া, সাধুটির ঐরকম কঠোর সাধনার বারো বছর পূর্ণ হোতে আর মাত্র ৭দিন বাকি ছিল—এমন সময় সে এমন একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেললো যে, তার দীর্ঘ বারো বছরের তপস্যা ভঙ্গ হয়ে গেল! সম্ভবত সাধুটি একটা বিশেষ কিছু সৃষ্টি করার সংকল্প নিয়ে তপস্যা করছিলো কিন্তু মা জগদম্বার ইচ্ছা নয় যে__ সেটা হোক, তাই ওর তপোভঙ্গ হোলো।
আর মজার ঘটনাটা কি ঘটেছিল জানো, সাধুটির তপোভঙ্গ হবার ঠিক দু-একদিন আগে থেকেই আমরা ওখানে হাজির ছিলাম। আমার সাথে তপীমায়ের মা-বাবা এবং আরও কিছু ভক্তরাও ছিল। ফলে ঠিক কোন্ ঘটনায় ওর তপোভঙ্গ হয় তা আমরা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছিলাম। কয়েকটি স্থানীয় যুবক ওনার আশ্রমের কাছাকাছি পিকনিক করছিল। তাদের একটি দল আশ্রম দেখতে এসে হয়তো আশ্রমের গাছের কোনো ডাল-পাতা ভেঙেছে বা ফুল-ফুল ছিঁড়েছে—ব্যস্ এই নিয়েই অশান্তি শুরু । আশ্রমিকদের সঙ্গে ছেলেগুলির ঝগড়াঝাঁটি থেকে মারামারি শুরু হয়ে গেল। সাধুবাবা চোখের সামনে এসব দেখে স্থির থাকতে না পেরে তার আসন থেকে নেমে ছুটে এলো ছেলেগুলিকে মারতে ! এতে গণ্ডগোল থেমে গেল কিন্তু ক্রোধবশত সাধুটির হাত নীচে নেমে যাওয়ায় তার এতোদিনকার তপস্যা ভঙ্গ হয়ে গেল। পরে যখন আমি আবার হিমালয়ের দিকে গিয়েছিলাম, তখন আমি খবর নিয়ে জেনেছিলাম—সাধুটি একটি জার্মানী মেয়েকে বিবাহ করে সুখে সংসার করছে। তার তপস্যার ফল হয়তো এইভাবেই লাভ হোলো !!!!