গুরুমহারাজ:—না-না, ঐরূপ অবস্থা হয়েছিল নির্বিকল্পের অনেক আগে। সাধনার একটা বিশেষ অবস্থায় adrenal gland এতো ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে—যেন বৃকাগ্নি বা জঠরাগ্নি জ্বলে ওঠে। সে সময় যত খাদ্যই খাওয়া হোক না কেন পেটে যাওয়া মাত্রই উধাও ! সেই অবস্থায় আমি একদিন ১০-১৫ জনের খাদ্য একা খেয়ে নিয়েছিলাম। সাধন চলাকালীন সময়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনেও এইরকম একটা অবস্থা এসেছিল। যোগেশ্বরী ভৈরবী এর বিধান দিয়েছিলেন যে, একটা ঘরে নানাবিধ খাদ্য সাজিয়ে রেখে ঠাকুরকে সেই ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। মথুরবাবুর মতো জমিদার যাঁর রসদদার—তার পক্ষে এ ব্যবস্থা করার কোনো অসুবিধাই হয়নি। ২/৩ দিন ঠাকুর যা মন তাই খুব খেয়েছিলেন, তারপর আবার যা কে তাই ! অর্থাৎ উনি পুনরায় স্বাভাবিক স্থিতিতে ফিরে এসেছিলেন।
চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। উনি উড়িষ্যায় কাশীশ্বর মিশ্রের জামাই-এর বাড়ীতে ২৫ জনের খাদ্য একাই খেয়ে নিয়েছিলেন।
তবে এগুলি বিশেষ অবস্থায় খাদ্যগ্রহণ, শরীরধারণের জন্য প্রতিদিন তো অতো খাদ্যগ্রহণের প্রয়োজন হয় না। যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু হোলেই যথেষ্ট। যোগীরা অর্থাৎ যাদের ঐ বিশেষ গ্ল্যাণ্ডের উপর দখল আছে, তারা প্রয়োজনে প্রচুর খেতে পারে কোনো অসুবিধা হয় না।
বুদ্ধদেবের জীবনীতেও পাওয়া যায় __উনি সাধারণ অবস্থাতেও বেশ পরিপাটি করে খাদ্যগ্রহণ করতে পছন্দ করতেন। সুগন্ধি পায়েস, সুরুয়া ইত্যাদি তাঁর প্রিয় খাদ্য ছিল।
চৈতন্যচরিতামৃতে শ্রীচৈতন্যদেবের ৫০ ব্যঞ্জন সহযোগে খাদ্যগ্রহণের বর্ণনা আছে। তবে এগুলি কখনোই সাধারণ মানুষের অনুকরণীয় নয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে যার পেটে যা সয় বা যার যতটুকু প্রয়োজন _তার অতিরিক্ত না খাওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত। দুপুরে পেট ভরে খাদ্যগ্রহণ, রাত্রে মিতাহার বা উপবাসই শরীরের জন্য ভালো। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্যগ্রহণের সঠিক সময়। সূর্যাস্তের পর শরীরে আর পাচনক্রিয়া বড় একটা হয় না, তাই খাদ্যগ্রহণ না করলেও চলে।
এখন আবার বিভিন্ন উৎসবাদি রাত্রেই বেশী হোচ্ছে। ফলে গুরুপাক খাদ্য রাত্রে গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়ছে মানুষের। এটা ইংরেজদের কাছ থেকে পাওয়া। ওরা শীতপ্রধান দেশের লোক। ওরা রাত্রে faest করে, খাওয়া-দাওয়া করে ! তাই বলে ভারতীয় জলবায়ুতে এটা ঠিক নয়। তাছাড়া ওদের খাদ্য হালকা, আমাদের ভারী খাবার, তার উপর খাবারটা যদি মশলাযুক্ত হয়, তাহলে কতটা গুরুপাক হবে বুঝতেই পারছো ! তাই বলছিলাম রাত্রে উৎসবাদিতে খাওয়া-দাওয়া একদম না করাই ভালো।