গুরুমহারাজ:—আমি দেখেছি __খুব বেশী খাবার আমার শরীরে প্রয়োজন হয় না, তাই আমি পরিমাণে বেশী খেতে চাই না ! দ্যাখো, আহার্য গ্রহণে আমার শরীরের অতোটা অসুবিধা হয় না, তবে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অপরের বিছানায় শুতে দিলে খুবই অসুবিধা হয়। বিছানায় এতো Negative কাজকর্ম হয় যে, ঐ সমস্ত ভাবসমূহ হু হু করে আমার ভিতরে ঢুকে পড়ে শরীরটার ক্ষতি করে। কিন্তু এইসব কথা সব জায়গায় বলাও যায় না, বললে পরবর্তীতে আবার এটাই untouchability- র রূপ দিয়ে দেবে উত্তরকালের গবেষকরা।
জানোতো একটা কথা আছে, “গুরু মোতে খাড়াইয়া তো শিষ্য মোতে পাক দিয়া !” আমাদের সমাজেই বিভিন্ন উন্নত মহাত্মা-মহাপুরুষদেরকে কেন্দ্র করে যে সব পরম্পরা গড়ে উঠেছে, সেখানেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় উচ্চ -নীচের ভেদ, ছোঁয়া-ছুঁয়ির বাছবিচার ইত্যাদি খুবই রয়েছে। পরম্পরার প্রতিষ্ঠাতা বাবাজী হয়তো এক রকমের ছিল কিন্তু তার শিষ্যরা হয়ে উঠেছে আবার এককাঠি সরেস! কোথাও ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ ভেদ, অব্রাহ্মণ হোলে আর ছোঁয় না ! কোথাও গৃহী-সন্ন্যাসী ভেদ, সন্ন্যাসীদের সাথে গৃহীদের এক পঙতিতে বসতে দেয় না। তাই আমি কি আমার সুবিধা-অসুবিধার কথা বলে এইরকম ধরণের আরও একটা মত বানাবো ? সেইজন্যই আমার অসুবিধা হোলেও আমি এসব কথা কাউকে বলি না।
তবে জেনে রাখবে, প্রকৃতপক্ষে এইগুলো untouchability নয় কিন্তু এটাও ঠিক যে, নিজের জীবনে practical না হোলে, বোধ না হোলে __স্পর্শদোষে বা অন্নদোষে কিভাবে আধ্যাত্মিকতার হানি হয়, তা বুঝতেও পারা যাবে না। কিছুদিন যদি কোনো মানুষ স্বপাক রান্না খায়, তারপর আজেবাজে লোকের হাতে খায় __তাহলে অন্নদোষের ব্যাপারটা সে বুঝতে পারবে। আবার কিছুদিন সাধন-ভজন, ধ্যান খুব ভালোভাবে অভ্যাস করলে স্পর্শদোষের কুফলও টের পাবে। সাদা কাপড় পরে কাজলের ঘরে ঢুকলে যে অসুবিধা হয়, তেল-মবিল মাখা প্যান্ট পরে সেখানে গেলে আর সেই পরিমাণ অসুবিধা হয় না_তাই নয় কি !!
আমার ক্ষেত্রে অবশ্য এইসব অসুবিধা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কারণ আমার সারাদিনের সমস্ত negative charge রাত্রি বারোটার পর discharge হয়ে যায়। তখন আমি আবার ফ্রেস হয়ে যাই। স্বামী বিবেকানন্দ চেতনার এই স্তরে পৌঁছে ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে প্রথম থেকেই অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। প্রকৃত তত্ত্বটি অনেকেই জানে না অথচ ছোঁয়া-ছুঁয়ির ব্যাপারে সবাই স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। তাই স্বামিজী সিংহ গর্জন করে উঠলেন এইসব কুপ্রথার বিরুদ্ধে ! নিজেই চণ্ডালের কাছ থেকে চেয়ে তামাক খেলেন, মুচি-মেথর সবাইকে ‘ভাই” বলে সম্বোধন করলেন।
পরবর্তীতে সমাজনেতা হিসাবে মোহনদাস গান্ধী অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে কিছুটা আন্দোলন করেছিলেন। তবে এটা জানবে যে, কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়__স্বামী বিবেকানন্দজীর প্রচেষ্টারই বাস্তবরূপ আজকের এই ছোঁয়া-ছুঁয়ি মুক্ত, অস্পৃশ্যতা মুক্ত মানবসমাজ।।