গুরুমহারাজ:—না-না, গান্ধীর অহিংস ভাবের সাথে জৈনদের অহিংস-নীতির কিছুটা মিল পাওয়া যায়। বুদ্ধের অহিংসা আরও bold ! আর জৈনদের অহিংসা কেমন জানতো —ওরা মাথায় উকুন পোষে, একটা উকুন যদি মাটিতে পড়ে যায়, তো আবার সযত্নে সেটিকে মাথায় তুলে দেয়। হয়তো কোনো জৈন সন্তকে দেখবে আধঘন্টা খটমল্(ছাড়পোকা) সেবা করছে অর্থাৎ খাটে হয়তো প্রচুর ছারপোকা আছে, তারা রক্ত খাবে বলে শরীরের কোনো একটা অঙ্গ সেখানে ঠেকিয়ে দীর্ঘসময় বসে থাকে। বুদ্ধের অনুগামীরা বুদ্ধির জগতে এতটা হীন কখনোও হয় নি। দ্যাখো না __বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা আত্মরক্ষার জন্য ক্যারাটে, কুফু, তাইচি শিখেছে এবং অপরকে শিখিয়েছে। চীনকে একটা সময় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাই সামাজিক ও নৈতিক অধঃপতন থেকে রক্ষা করেছে। তবে বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের ৫০০ বছর পর থেকে এই ধর্মের খানিকটা deviation বা চ্যুতি ঘটেছে।
ভারতবর্ষের রাজা-মহারাজারা যখন থেকে এই ধর্ম গ্রহণ করলো এবং রাজধর্ম হিসাবে বৌদ্ধধর্ম সাধারণের কাছে এলো, তখন থেকেই এই ধর্মের বারোটা বেজে গেছিলো। সম্রাট অশোক হয়ে গেল বৌদ্ধধর্মপ্রচারক—কোনো বৌদ্ধভিক্ষু নয়, ব্যাপারটা বুঝতে পারছো কি !
জানো তো _সব ধর্মমতেরই অধঃপতন এইভাবেই হয়। যীশুর প্রচারিত শিক্ষাকে যতদিন ওখানকার জেলেরা এবং সাধারণ দরিদ্র মানুষেরা ধরে রেখেছিল _ ততদিন খ্রীষ্টধর্ম ঠিক ছিল কিন্তু যেই রোমের সম্রাট খ্রীষ্টান হোলো, তারপর থেকেই ঐ ধর্মমতের আধ্যাত্মিক অধঃপতন শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশেও বিভিন্ন মঠ-মিশন বর্তমানে Elite Society-র হাতে চলে যাচ্ছে—এটা কিন্তু ধর্মজগতে খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়।
এই সব ব্যাপারে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কিছু শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে একজন মাড়োয়ারি ভক্ত দশ হাজার টাকা দিতে এসেছিল, ঠাকুর নেননি। তৎকালীন যুগে এই টাকার মূল্য ছিল অনেক এবং পরবর্তীকালে টাকার অভাবে সন্ন্যাসী-ভক্তরা কি কষ্টই না করেছিল। তবু বেলুড়মঠ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা হয়েছে—কোনো অসুবিধা তো হয়নি ! কিন্তু এখনকার কর্মকর্তারা সরকারী অনুদান পাবার জন্য নিজেদেরকে সংখ্যালঘু হিসাবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। নানান বিষয় নিয়ে ওদের ভিতরে ভিতরে বিরোধও চলছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রের Reporter-রা রামকৃষ্ণ মিশনকে শ্রদ্ধা করে তাই এইসব কথা পত্রিকায় ছাপাচ্ছে না।
রাজ-অন্নই কদন্ন__ এটা বুঝতে না পারাটাই বিভিন্ন সংঘের পতনের কারণ । বৌদ্ধরা তৎকালীন সম্রাটদের সহায়তায় চারটে সংঘ বানিয়েছিল। তারপর থেকেই বৌদ্ধ সংঘারামগুলোর আধ্যাত্মিক অবনতি ঘটতে শুরু করেছিল। এইভাবে ভগবান বুদ্ধ, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বা অন্যান্য অবতার পুরুষেরা সবসময়ের জন্যই সঠিক আছেন, কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংঘগুলিতে সময়ের সাথে সাথে বেনোজল ঢুকে পড়ে এবং নানারকম ভুলভাল কাজকর্ম হয়। তবে, কোনো ভুল করলে তার মাশুল গুনতে হবে সংঘকেই—অবতারগণ বা ভগবানকে নয়।।