গুরুমহারাজ:—রাত্রে কোনো খাদ্যই বিশেষ হজম হয় না, পৌষ্টিকনালীতে undigested (হজম না হওয়া) অবস্থায় থেকে যায়। যারা রাত্রে খাদ্যগ্রহণের পরও কিছু কাজ করে বা অন্ততঃপক্ষে হাঁটা-হাঁটিও করে, তাদের কিছুটা হজম হয়_ আর যারা রাত্রের খাবার খেয়েই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে তাদের ঐ খাদ্য সারা রাতে মোটেই হজম হয় না ! এর ফলেই শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাচীনকালে আর্য-রীতিতে এই ব্যাপারটা খুবই মেনে চলা হোতো। এখনও দেখবে যে কোনো পরিবারের ঠাকুরঘরে অথবা মন্দিরের ঠাকুরকে মধ্যাহ্নে নানারকম রান্না করে ভোগ দেওয়া হয়, কোথাও কোথাও তো ৫০ ব্যঞ্জন বা ৫৬ ব্যঞ্জন দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায় সন্ধ্যার সময় শীতল দেওয়া হয় অল্প কিছু শুকনো খাবার দিয়ে। এইটাই সঠিক পদ্ধতি __যে কোনো ব্যক্তিই দুপুরে চব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় খাবার গ্রহণ করতে পারে কিন্তু রাতে তাকে খুবই স্বল্প আহার গ্রহণ করতে হবে। যারা পরিশ্রমী বা যাদের অল্প বয়স তাদের জন্য স্বল্প আহারের ব্যবস্থা নয়_তাদের সন্ধ্যার প্রাক্কালেই রাত্রির খাবার খেয়ে নিতে বলা হয়েছে।
রাত্রিতে feast বা ভূরি-ভোজের অনুষ্ঠানটি চালু করলো ইংরেজরা। অবশ্য মরুভূমিতেও উৎসব-অনুষ্ঠান রাত্রিতেই হয় কারণ ওখানে সারাদিন যা প্রচণ্ড উত্তাপ, বাইরে বেরোনোরই সুযোগ নাই _তো দিনের বেলায় আনন্দ-অনুষ্ঠান করবে কি করে! ফলে মুসলমানেরাও এদেশে এসে রাত্রে উৎসব করতো। কিন্তু পুরোপুরিভাবে grand-feast বা ভূরি-ভোজের ব্যাপারটা চালু করলো ইংরেজরা। ওদের ঠাণ্ডার দেশ তাই জীবাণু-সংক্রমণ কম হওয়ায় খাদ্য সহজে নষ্ট হয় না । এছাড়া ওদের খাদ্যসামগ্রী তো আমাদের মতো heavy নয় _light ! ওদের খাবার টেবিলে নানা ধরণের খাদ্যবস্তুর ব্যবস্থা থাকে ! যেমন __ফল-মূল, স্যাণ্ডউইচ, মাংস বা মাছের পেষ্ট, পনীর, লিকুইড চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি। এছাড়া Alcohol বা ওয়াইন অবশ্যই থাকে। Alcohol মানে যা শর্করাজাতীয় খাদ্যশস্য থেকে fermantation করে উত্তাপ প্রয়োগে প্রস্তুত করা হয়, আর wine হোচ্ছে _ যে কোনো ফলের রসকে দীর্ঘদিন ধরে জারিত ও পাতিত করে প্রস্তুত করা হয় ! wine প্রস্তুতির জন্য কোনো তাপ লাগে না, শুধু সময় লাগে। আসলে wine যত old বা পুরানো হবে _ততই তার মর্যাদা । ইউরোপে এক-একটা অভিজাত পরিবারে বাড়ীর basement-এ ২০০বছর বা ৩০০ বছরের পুরানো পিপে রয়েছে, যেখানে পারিবারিকভাবে এই ধরনের পুরানো wine সংরক্ষিত করা রয়েছে। বিশেষ কোনো সম্মানীয় অতিথি বাড়িতে এলে সেগুলি বের করা হয়। ওদের দেশে আভিজাত্যের বা বনেদিয়ানার এটি একটি পরিচায়ক।
যাই হোক, আমরা প্রসঙ্গান্তরে যেতে চাই না, যেটা বলছিলাম_ প্রাচীন ভারতীয় যে আর্যচিন্তা সেটা সবসমই বিজ্ঞানসম্মত ও সম্পূর্ণ। পৃথিবীর বাকী অংশের যে সকল দার্শনিক-চিন্তা _ সেগুলির source খুঁজলে দেখা যাবে বিভিন্ন অসভ্য- অনুন্নত জাতির মাথা থেকে এসেছে। ফলে সেগুলি সমাজের পক্ষে মঙ্গলকর কি করে হোতে পারে ? ভারতবর্ষের সমস্ত বিধান, সমস্ত নির্দেশ প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের মতামত অনুসারেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। Semitic চিন্তাধারা, Semitic culture ভারতীয় সমাজে ঢুকে পড়ার পর থেকেই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক,আধ্যাত্মিক ইত্যাদি সবরকম দিক থেকেই অবক্ষয় শুরু হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং ভারতীয়রা ঐ সব চিন্তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পুনরায় পূর্ণরূপে আর্যচিন্তাকে গ্রহণ করা যাবে _ততই ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে।।