জিজ্ঞাসু—আপনি মানুষকে দেখে তার অতীত বা ভবিষ্যৎ বলে দিতেন—এখন তো ওরকম করেন না ?

গুরুমহারাজ—ওটা একটা অবস্থা গেছে। মা যে কখন কিভাবে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছেন – তা তিনিই জানেন। এখন আমাকে যা দেখছ সেটা আর এক অবস্থা। তবে শুধু মানুষ কেন আগামী পঞ্চাশ হাজার বছরের পৃথিবীর ভবিষ্যৎও বলে দেওয়া যায়। যিনি নিত্যবর্তমানে থাকেন তাঁর কাছে অতীত বা ভবিষ্যৎ বলে কোন কথা নেই—সবই বর্তমানের মতই তাঁর কাছে প্রকটিত। আমি যা কিছু করছি—যা কিছু বলছি – সেগুলো মনে হতে পারে অতি সাধারণ আবার মনে হতে পারে হয়তো অসাধারণ কিন্তু এগুলো সবই আগে ঘটেছিল তাই ঘটছে। আবার আগামীদিনেও অনেক ঘটনা ঘটবে যা কিন্তু already ঘটে আছে। মানুষ অজ্ঞান, সে জানে না, হয়তো আশা করে বসে আছে এটা ঘটবে—ওটা ঘটবে কিন্তু সব সময় তা হয় না, হয়তো উল্টো হয় আর এতেই তার দুঃখ হয়। আবার তার আশা বা বাসনা পূর্ণ হবে কি হবে না এই নিয়ে হয় tension ( উৎকণ্ঠা )। এর ফলে মানুষ নানান রোগে ভোগে—শরীর জীর্ণ হয়। কিন্তু যিনি জ্ঞানী, যিনি সব জানছেন, দেখছেন, তিনি যে কোন ঘটনা ঘটুক না কেন—নিরুদ্বিগ্ন থাকেন—শান্ত থাকেন, কোন কিছুতেই আকুল বা ব্যাকুল হন না। তাঁর কোন কিছুতেই মোহ না থাকায় শোকগ্রস্তও হন না। এটাই রহস্য।

ভবিষ্যৎ জানার আগ্রহ মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি। গনতকার বা জ্যোতিষীদের কাছে তাই মানুষের লম্বা লাইন। কিন্তু এটা জানবে, তোমার বর্তমানই তোমার ভবিষ্যৎ রচনা করে চলেছে। তোমার বর্তমান যদি সুন্দর হয় – ভবিষ্যৎ সুন্দর হবেই। আর এখন যেটা বর্তমান সেটা অতীতের ফলস্বরূপ। একটা মানুষ দুঃখ পাচ্ছে—শোকাহত হচ্ছে, এসব দেখে হয়তো মানুষ ভাবছে ঈশ্বর কি নিষ্ঠুর, ঈশ্বরের রাজ্যে মমতা কোথায় ? কিন্তু ঘটনা সেরূপ নয়, পূর্ব-পূর্ব জন্মে যে মানুষ অত্যাচারী ছিল, এবার সে অত্যাচারিত হচ্ছে। কোন মানুষ পূর্বে বহু মানুষকে নির্যাতন করেছিল, এবার সে নির্যাতিত হচ্ছে। ঘটনাটা এরকমই ঘটে। ধর কোন ধনীলোক তার কোন প্রতিবেশীর সম্পত্তি জোর করে, মকদ্দমা করে অসৎ উপায়ে কেড়ে নিল, ফলে লোকটি আপাতভাবে আরও ধনী হ’ল এবং প্রতিবেশীটি গরীব হয়ে গেল এবং শোকে-দুঃখে মারা গেল। এবার মজাটা কিরকম হতে পারে দেখো —ঐ গরীব ব্যক্তিটি কিন্তু এই ধনী পরিবারে ঐ ভদ্রলোকের নাতি হয়ে জন্মাবে এবং তার সম্পত্তিই সে ভোগ করবে। অপরপক্ষে ধনী ব্যক্তিটি ঐ প্রতিবেশীর ঘরে। জন্মে সারাজীবন অভাবগ্রস্ত হয়ে দুঃখ-দরিদ্রতা ভোগ করবে। ঈশ্বরের রাজ্যে এইরকমই বিচিত্র বিধান। যাইহোক যা বলছিলাম, ভবিষ্যৎ জানতে চায় মানুষ। কিন্তু জেনে কি লাভ ? ভবিতব্য খণ্ডন করার জন্য খরচ করে রত্ন-ধারণ করবে কিন্তু তাতে কি হবে ? জীবনের Food habit & Life style বদলালে তবু কিছুটা পরিবর্তন হবে কিন্তু সেটা কি করবে ? নস্ত্রাদামুস অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছে। সেগুলোর বেশীরভাগই তো ঘটে যাচ্ছে—সেগুলো আটকানোর চেষ্টাই বা কই আর তার উপায়ই বা কি ? সুতরাং ভবিষ্যৎ বলে দেওয়াটা মানবজীবনের কোন মঙ্গল বা কল্যাণ করা নয়। প্রকৃত কল্যাণ হয় যখন জীবনের সঙ্গে মহাজীবনের যোগ হয়। জীবনে জীবন যোগ করেই জীবনের উত্তরণ ঘটানো যায়। মহাপুরুষগণ এটাই করে থাকেন। যখন যেখানে থাকেন, তখন সেখানকার চতুঃপার্শ্বস্থ মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে নেন গভীর প্রেমের দ্বারা। এর পরই তাদের জীবনের উত্তরণ শুরু হয়। তারা বুঝতেও পারে না তাদের এই জন্মেই হয়তো জন্ম-জন্মান্তর অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। এইজন্যই মহাপুরুষগণ বা অবতারসমূহের পৃথিবীতে অবতরণ। এই কাজটাই করে চলেছেন তাঁরা। মানুষের চেতনার উত্তরণ ঘটিয়ে চলেছেন। আগামী দিনে –হয়তো পঞ্চাশ হাজার বছর পর এই পৃথিবীগ্রহের মানুষের চেতনার এতটাই উন্নতি ঘটবে যে, ঈশ্বরের আর অবতরণেরই প্রয়োজন হবে না। এখানকার কোন উন্নত Soul-ই এখানকার আচার্য হয়ে কাজ করে দেবেন।