জিজ্ঞাসু—এসব কথা বললে তো ওদের সঙ্গে বিরোধ হয়ে যাবে ?
গুরুমহারাজ—বিরোধ করতে নেই। ভ্রমর পদ্মমধু খায়, গুবরে পোকা গোবর খায়—কিন্তু তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতে পারে। এবার ভ্রমর গুবরে পোকাকে পদ্মবনে আনতে পারে better taste-এর জন্য কিন্তু পদ্মমধুর বর্ণনা দিয়ে তাকে তা বোঝাতে যাবে কেন ? সেটা তো নিছক বোকামি। বলবে—তাতো বলতে পারবো না—একদিন আমার সঙ্গে সেখানে চল, গিয়ে দেখে আয়। এরপর একদিন হয়তো গেল, দুজনাই খানিক পদ্মমধু খাবার পর ভ্রমর গুনগুন করতে লাগল—গুবরে পোকা চুপ ! ভ্রমর জিজ্ঞাসা করল—কেমন taste ! ও
বলল–গোবরেরই মত। ভ্রমর বুঝতে পারল, বলল – ‘হাঁ করতো দেখি !’ দেখে মুখের ভিতরে একদলা গোবর! বলল, ‘ফ্যাল গোবর তবে তো taste পাবি !’—গোবর ফেলার পর তবে taste পেল।
গল্পের তাৎপর্যটা ধরতে পারলে ! বিরোধ হবার কারণটা বললাম। যে কোন মানুষের মনোজগতে একটা project রয়েছে, এবার তুমি যখন better কিছুর সন্ধান দিচ্ছ বা সে কথাগুলো বলছ-ওর তো সে গুলোর taste হচ্ছে না কারণ মুখে রাখা এক দলা গোবরের মতো ওর মনে যে project রয়েছে সেটাই তো এই teste-কে resist করছে। এখন যদি তোমাকে এর teste পাওয়াতে হয় তা হলে ওর মুখে রাখা গোবরকে ‘ওয়াক থু’ করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ ওর মনে যে project রয়েছে সেটাকে ভেঙ্গে চুরমার করতে হবে তবে নতুনের taste পাবে। তবে সাধারণত কোন সাধারণ মানুষ অন্যের মনের project নষ্ট করতে পারে না—একমাত্র চাপরাশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এটা করতে পারেন। নাহলে প্রাকৃতিক নিয়মে বা কোন মহাপুরুষ শরীর গ্রহণ করলে বন্যার জলের মতো বহু মানুষের অন্তঃকরণে তাঁর যুগোপযোগী ভাবরাশি হু হু করে ঢুকে পড়ে।
জিজ্ঞাসু—আনন্দময়ী মা এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য সম্প্রদায় তাঁর বিরোধ করে – মানতে চায় না, এরকম কেন হয় ?
গুরুমহারাজ— দ্যাখো—আধ্যাত্মিক ব্যক্তির কাছে মানুষের মানা না মানার কি মূল্য আছে ? সবাই তাঁকে মেনে নেবে না—এটা তো তিনি জানেন, তাই বিরোধ করেন না। আমি দেখেছি—করপাত্রীজী দশনামী সম্প্রদায়ের একজন মধ্যমণি ছিলেন, উনি আচার্য শঙ্করের reference দিয়ে নারীর বিরোধ করতেন । বলতেন, ‘আত্মা পুরুষায় শাশ্বতে’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আত্মায় স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নেই। এযুগে সারদা মা প্রথম দীক্ষা দিয়ে এটা প্রমাণ করে দেখালেন নারীরও দীক্ষা দেবার অধিকার রয়েছে যদি তার জ্ঞান থাকে । আনন্দময়ী মা দীক্ষা দিতেন বলে করপাত্রীজী মার নিন্দা করতো। কোন কারণে একদিন করপাত্রীজী কনখলে আনন্দময়ী মায়ের আশ্রমে এসে হাজির হ’ন, মা সঙ্গে সঙ্গে সন্তানভাবে তাঁর পায়ের কাছে বসে বয়স্ক সন্ন্যাসী করপাত্রীজীর পদসেবা করতে লাগলেন। উনি কাজ মিটিয়ে চলে গেলেন –হয়তো মনে একটু অহংকারও নিয়ে গেলেন। মায়ের ভক্তরা ক্ষুণ্ণ হ’ল, ভাবল মা ছোট হয়ে গেল। মাকে পদসেবার কারণ জিজ্ঞাসা করায় মা উত্তর দিলেন, ‘সন্তানের গায়ে ময়লা লাগলে মা-ই তো তাকে কোলে নেয়, ধুয়ে মুছে সাফ করে—মা কি তাকে ফেলে দেয় !’ এই জন্যই বলি—আধ্যাত্মিক জগতের বিচিত্র বিধান !