জিজ্ঞাসু–হোলি উৎসবের কি কোন ভাল দিক আছে ?

গুরুমহারাজ—ভালভাবে utilise করলে সব অনুষ্ঠানেরই ভাল দিক থাকে। হোলি তো বসন্তোৎসব। গোটা বিশ্বে নানান নামে নানান উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বসন্তোৎসব পালিত হয়। ভারতবর্ষে এটা হোলি নামে পালিত হয়। ভারতবর্ষের প্রাচীন সংস্কৃতির ধারাটিই হচ্ছে যে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠানের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতাকে জুড়ে দেওয়া। এখানেও তাই হয়েছে, কৃষ্ণ-ভগবানের লীলা-কাহিনীকে স্মরণ-মনন করে মানুষ বসন্তোৎসবে মেতে ওঠে। নাচগান হয়—হৈ-হুল্লোড় করে, প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হয়, পোশাক পরে –এইভাবেই তো অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তবে যদি hygienic বা সামাজিক দিক থেকে দেখা যায় তাহলে বলা যায় যে, এই উৎসবের পিছনে নানান কারণ রয়েছে। যেমন ধরো হোলির প্রাক্কালে যে চাঁচর হয়—এটা আবর্জনা পোড়ানোর ব্যবস্থা। শীতকাল মানুষকে কুঁড়ে করে দেয়। তখনকার দিনে মানুষের অভাব ছিল। রাজতন্ত্রে সাধারণ মানুষ কখনও ভাল থাকে না, ফলে পোশাক-পরিচ্ছদ ও বাসস্থানের অভাব থাকে। এবার শীত চলে গেলে মানুষ শরীরে উদ্যম পায়, নতুনভাবে আবার বাঁচার বা টিকে থাকার চিন্তা- ভাবনা শুরু করে। তাই জড়তাপূর্ণ পুরাতনকে বিদায় দেয় এইভাবে।

তারপর ফাগুয়া বা ফাগ অর্থাৎ আবির আগে natural জিনিস দিয়ে তৈরী হত, এখন chemical মেশাচ্ছে। তাই অনেকের মাথায় বা গায়ের skin-এ effect হয়। যাইহোক বলা হত ফাগ নাকি anti-pox। ব্যাপারটা কিছুই নয়, এইসব ছাইভস্ম মেখে ভাল করে স্নান করা—এই আর কি ! শীতকালে হয়তো ভাল স্নান হয় না—এই সুযোগে সেটা হয় । তবে বৃন্দাবনে হোলিতে খুবই ধূমধাম হয়। এখানে সাত্ত্বিকভাবে হোলি- উৎসব পালন করা হয়। বর্তমানে শান্তিনিকেতনেও সুশৃঙ্খলভাবে হোলি- উৎসব পালন করা হচ্ছে। আমাদের ওখানে
কবিলপুর, বাঘনাপাড়া, কালনায় এইসময় বাজি পোড়ানো হয় – বহু লোক বাজিকরদের বাজির কারসাজি দেখতে জড়ো হয়।

জিজ্ঞাসু—উৎসব আবার সাত্ত্বিক, তামসিক আছে নাকি ?

গুরুমহারাজ—প্রকৃতিতে এই তিনটি গুণ সদাসর্বদাই রয়েছে, উৎসব তো করে মানুষ, অন্যান্য জীব তো করে না। সুতরাং সে নিজে যে গুণসম্পন্ন তার সমস্ত আচরণেই সেই বিশেষ গুণটি প্রকাশ পাবে। কোন জায়গায় হয়তো কোন শুদ্ধসাত্ত্বিক মানুষ কোন নিয়ম চালু করে গেছেন, পরবর্তীতে সবাই সেটা মেনে চলে। তবে এদের সবাইকে সাত্ত্বিক হতে হবে তার কোন মানে নেই কিন্তু এরা প্রচলিত system টা মেনে চলে।

জেনে রাখবে প্রকৃতিতে সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ সবসময়ই রয়েছে। যেমন ধরো এখানেই রয়েছে—ফুল। ভোরে ফোটে পদ্ম, চাঁপা – সাত্ত্বিক, এদের গন্ধ মস্তিষ্ককে relax করে—ক্লান্তি দূর করে। দুপুরে-সন্ধ্যায় ফোটে রাজসিক ফুল–বেশীরভাগ ফুলই তুমি এই দলে পাবে, এদের মধ্যে বেল ফুল ভাল। আর গভীর রাত্রে যারা ফোটে এরা বেশীরভাগই সাদা হয়, কিন্তু তীব্র গন্ধযুক্ত, এরা তামসিক। এদের বর্ণের বৈচিত্র্যের প্রয়োজন নেই, তাই গন্ধ দিয়েই এরা মথকে আকর্ষণ করে। আর দিনের ফুলের বিচিত্র বর্ণে মৌমাছি আকৃষ্ট হয়। সুগন্ধে মস্তিষ্কে harmony ফিরে আসে। তাই মানুষ প্রাকৃতিক সুগন্ধের মধ্যে থাকলে শান্ত থাকবে, ভাল থাকবে। আর বাজে গন্ধে মস্তিষ্ক বিকৃতি হতে পারে। লাফিং গ্যাস মানুষকে শুকিয়ে দিলে – সে হাসতে থাকবে অর্থাৎ মস্তিষ্ককোষে সরাসরি effect করবে। এবার ভাবো, কোন মানুষ হয়তো natural-ভাবে দুঃখিত —সে কাঁদতে চাইছে, এমন সময় যদি তাকে লাফিং গ্যাস শুকিয়ে দেওয়া হয় তা কি সহ্য করতে পারবে ? পায়খানা-পেচ্ছাব করে ফেলবে। এমন তীব্র দমক আসবে যে সহ্য করতে পারবে না।