জিজ্ঞাসু—কি সেই ঘটনা যদি একটু বলেন ?

গুরুমহারাজ —হ্যাঁ বলছি। আমার তখন বয়স কত হবে—এই ধরো তেরো-চোদ্দ। আমি একা একা হিমালয়ে ঘুরছি। একদিন কোন এক স্থান থেকে যমুনোত্রীর দিকে ফিরছি কিন্তু সময়জ্ঞান না থাকায় পথে রাত্রি হয়ে গেল। ঘুটঘুটে জমাট অন্ধকার, সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না, এমনকি আমার নিজের শরীরটাকেও আমি ভাল দেখতে পাচ্ছি না। ঐ অবস্থায় পার্বত্যপথে চলা কি মুস্কিল বুঝতেই পারছো ! এদিকে রাত্রি বাড়ছে, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় শরীর শীতল হয়ে যাচ্ছে, ফলে একটা আশ্রয় খুবই দরকার, এটা বুঝতে পেরে দূরে একটা আলো লক্ষ্য করে সেদিকেই হাঁটতে লাগলাম। ভাবলাম আলো যখন জ্বলছে তখন নিশ্চয়ই কোন সাধুর কুঠিয়া অথবা গ্রামের কোন উপজাতির ঘর বা কোন না কোন আশ্রম তো মিলবে। বাইরের লক্ষ্য আলোর রোশনি কিন্তু অন্তরের লক্ষ্য তো অন্য ; ফলে পথ চলছি সম্পূর্ণ আত্মস্থ হয়ে। চলতে চলতে মাঝে খানিকটা পথ আমার যেন নরম নরম মনে হল কিন্তু দেখার উপায় ও ছিল না আর সে রকম ইচ্ছাও ছিলনা, ফলে পেরিয়ে চলে এসেছি। কিছুটা আসার পর আলো কাছে এসে গেল, দেখলাম একটা সাধুর কুঠিয়া। তিনি ঐ রাত্রে আমাকে দেখেই প্রথমটা চমকে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কোনদিক থেকে এলে ?’ আমি দিক-নির্দেশ করলাম। উনি আর কিছু না বলে আমাকে বসতে বলে নিজের কাজ করতে লাগলেন। তিনি ছিলেন একজন শৈব-সাধক। তাঁর পূজা ও ভোগ নিবেদন হয়ে গেলে তিনি আমাকে প্রসাদ দিলেন, নিজেও গ্রহণ করলেন এবং আমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেন। সাধুটি স্বল্পভাষী ছিলেন ফলে বেশী কথা হল না। পরের দিন সকালে আমি বিদায় নিয়ে চলে আসছি। যে পথে এসেছিলাম সেই পথেই ফিরবো তবে নীচে নামার রাস্তা পাবো। কিন্তু খানিকটা আসার পর আমার চক্ষু চড়কগাছ ! একি
! এদিকে তো কোন রাস্তা নেই ! অন্তত ৫০0/600 হাত ধস নেমে পুরো জায়গাটা একটা বিরাট গহ্বর হয়ে গেছে – কমপক্ষে ১০০০ ফুট খাদ। তাহলে কাল রাত্রে আমি এপথে এলাম কি করে ! তবে কি মা জগদম্বা আমার প্রতিটি চলার পদক্ষেপে তাঁর হাত পেতে পেতে আমাকে এই বিশাল খাদটা পার করে দিয়েছেন । সেইজন্য কি কিছুটা রাস্তা আমার নরম নরম মনে হয়েছিল । মায়ের অপরিসীম করুণার কথা মনে করে তাঁর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতায় আমার সমগ্র অন্তঃকরণ আপ্লুত হয়ে গেল, আমি সেইখানেই বসে গেলাম। আর আমার চলার কোন শক্তি ছিল না। এদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে— আশ্রমের সাধুবাবা কিন্তু ঠিক খেয়াল করছেন কিন্তু আমাকে disturb করেননি। নিত্যদিনের মতই উনি সকাল থেকে যা কিছু ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন করেছেন আর মাঝে মাঝেই আমার দিকে খেয়াল রেখেছেন। তারপর ভোগ নিবেদনের পরও যখন উনি দেখেছেন যে, আমি সকাল থেকেই ঠিক একই জায়গায় বসে আছি তখন উনি ধীরে ধীরে আমার কাছে গিয়ে পিছন থেকে কাঁধে হাত দিয়ে সস্নেহে আমাকে প্রসাদ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালেন। ওনার স্পর্শ পেয়ে আমার বিহ্বলতা কাটল এবং আমি ওনাকে সব ঘটনা বললাম। উনি অবাক হলেন না। বললেন—কাল রাত্রে তোমাকে এই দিক থেকে আশ্রমে প্রবেশ করতে দেখেই আমি এই রকমই কিছু একটা আন্দাজ করেছিলাম। ‘শিবজীকা অনন্ত মহিমা’, উনিই তোমাকে রক্ষা করেছেন। যাইহোক ঐ ঘটনার পর থেকে আর কোনদিন নিজের শরীর রক্ষার জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, মা যেন আমাকে কোলে বসিয়ে রেখেছেন—সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন। তাহলে কেন আমি অকারণে নি