জিজ্ঞাসু—কিন্তু মহারাজ, বীভৎসতাও তো মা জগদম্বারই একটা রূপ—এটা আপনার ভাল লাগে না কেন ?
গুরুমহারাজ—হ্যাঁ, বীভৎসতাও মায়ের একটা রূপ, তা আমি জানি। ধর তোমার মায়েরও তো নানান রূপ আছে। কোন না কোন সময় তিনি রাগান্বিতা হয়ে কোন ছেলেমেয়েকে মারধর করেন অথবা কোমর বেঁধে কারও সাথে ঝগড়া করেন এগুলো তো তোমার মায়েরই এক-একটা রূপ। কিন্তু তুমি যখন মাকে ভাবো তখন স্নেহময়ী জননীর রূপটিই তোমার মনে আসে, তাই নয় কি ? এছাড়া তোমার মায়ের ক্রোধান্বিতা রূপ দেখতে কি তোমার ভাল লাগে, নিশ্চয়ই লাগে না। তবে তুমি জোর করে বলতে পারো যে, তোমার ভাল লাগে কিন্তু আমার ভাল লাগে না। এটাই বোঝাতে চাইছিলাম—ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছো ?
জিজ্ঞাসু—স্বামী বিবেকানন্দ এক জায়গায় বলেছেন, যোগ বা ভোগ জীবনে যে কোন একটা করতে হবে—এরকম বলার কারণ কি ?
গুরুমহারাজ—স্বামিজী সাধারণ সভায় বক্তৃতা-প্রসঙ্গে একথা কখনই বলেননি, হয়তো ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসার উত্তরে কাউকে একথা বলেছিলেন। তোমরা যুবক, সুতরাং তিনি যুবকদের উদ্দেশ্য করে যে কথাগুলি বলেছেন বা যা নির্দেশ দিয়েছেন তোমরা সেগুলি পালন করবে —এসব কথা ধরছো কেন ? শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে কোন এক সময় উনি একথা বলে থাকবেন। একজন মহাপুরুষের সমস্ত জীবন বা তাঁর সকল কথা কখনই সার্বজনীন হতে পারে না। স্থান, কাল, পাত্রের উপর কোন জিজ্ঞাসার উত্তর নির্ভর করে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেশ, কাল, পাত্র ভেদে একই কথার বিভিন্ন উত্তর দিয়েছেন—এটা কথামৃত পড়লে জানতে পারবে। যাইহোক তবু তোমার কথার উত্তরে বলছি যে, এখানে ভোগ কথাটি কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। তুমি যে অর্থে ভোগ ভাবছ—সেটা উপভোগ, ভোগ নয়। কারণ প্রকৃত ভোগ মানুষকে অনাসক্ত করে আর উপভোগ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে তোলে। একটি মানুষকে নৈতিক ও সুশৃঙ্খল জীবনের সন্ধান দেয় এবং অপরটি বিশৃঙ্খল ও অনৈতিক জীবন-যাপনে মানুষকে অভ্যস্ত করে। সুতরাং মহাপুরুষের বাক্যকে কখনই হালকাভাবে নিও না। মহাপুরুষের কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করতে হবে।