জিজ্ঞাসু—বৈষ্ণবদের ‘জীবে দয়া’ বলে যে আচার আছে এটা তো ভালো ?
গুরুমহারাজ—‘জীবে দয়া ?’ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, ‘জীবে সেবা জীবে দয়া নয়—তুই কীটাণুকীট, জীবে দয়া করার কে ?’ যাইহোক জীবসেবাই না হয় হোল কিন্তু তাই বা হয় কোথায়—সব “জিভসেবা” হয়। আমি অনেক বৈষ্ণব আখড়ায় গেছি-দেখেছি মোহান্তবাবাজীদের খাওয়া-দাওয়ার বহর—সাধারণের জন্য খিচুড়ী আর বাবাজীদের জন্য এলাহি ব্যবস্থা ! তাই বলছিলাম জীবসেবা নয় জিভসেবা। ভালো ভালো কথা বলে আবার নিজেরাই আচরণে তা আনে না—এটাও এক ধরণের জিভসেবা। প্রকৃত বৈষ্ণব যাঁরা আছেন, তাঁরা দলগঠন করেন না, চুপচাপ আছেন—বাকীরা সব ঐ দলে। গুরুদেব রামানন্দ বলতেন, “বওয়াশ”, অর্থাৎ আবোল-তাবোল বকা। পৃথিবীতে বেশীর ভাগ মানুষই কথা বলে কিন্তু যেন “বক্ওয়াশ”। আমাদের এখানে একজন গাঁজা টেনে নিজের পিসেমশাইকে বলেছিল, ‘কি উমাদা কেমন আছেন ?’ এইরকমই মানুষ, কোন না কোন জাগতিক মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, আর তাতেই ঐ গাঁজাখোর নেশাচ্ছন্ন লোকটির মতো আবোল-তাবোল বকছে।
যারা প্রকৃতই কিছু করে, তারা বলে না। আসল কথাটা কি জানো—জেনে বা উপলব্ধি করে কোন কথা বললে সেটাই কালের বুকে গ্রহণযোগ্য হয় আর না জেনে বা বা উপলব্ধি করে যে কথা প্রতিনিয়ত বলা হয় সেগুলি বক্ওয়াশ্—তাতে তোমার কথা positive-ই হোক বা negative-ই হোক।
জিজ্ঞাসু—চিত্ত আর মন কি এক ?
গুরুমহারাজ—না, চিত্তের তিনটি বৃত্তি আছে, তার মধ্যে মন ‘সংকল্প-বিকল্পাত্মিকা বৃত্তি’, বুদ্ধি ‘নিশ্চয়াত্মিকা বৃত্তি’ এবং অহংকার “অভিমানাত্মিকা বৃত্তি’। চিত্ত যেন সরোবর আর বৃত্তিগুলি তার তরঙ্গ। মনেই প্রথম তরঙ্গের অভিঘাত হয়, এরপর বুদ্ধি তাকে নিশ্চয় করে, অহংকার তাতে কর্তৃত্বের অভিমান আরোপ করে। এইভাবে এই চারটিকে একসঙ্গে অন্তঃকরণচতুষ্টয় বলা হয়। মনের লয় হয় সমাধিতে। তখন অন্য বৃত্তিগুলিও লুপ্ত হয়ে যায়। তাই একে বলা হয় চিত্তবৃত্তিনিরোধ অবস্থা।
এককথায় বলতে গেলে চিত্তের একটি ক্রিয়া মন। যেমন গরুর দুধ থেকেই ছানা, দই ইত্যাদি তৈরী হয় কিন্তু দুধটা এখানে আদি, তেমনি চিত্ত যেন দুধ আর ছানা ইত্যাদি রূপগুলি চিত্তের বৃত্তিসকল।