জিজ্ঞাসু –মহারাজ, একটা কথা আমার মনে হচ্ছে—হঠযোগীরা যখন এতকিছু পারেন তখন তাঁরা মানুষের মাথা কেটে তার মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটিয়ে আবার জুড়ে দিতেও পারেন ? এইভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে উন্নত মানব সৃষ্টি করেন না কেন তাঁরা ?

গুরুমহারাজ—প্রথমকথা খণ্ডযোগ যিনি জানেন তিনি তাঁর নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই খুলতে বা জোড়া লাগাতে
পারেন–তোমার নয়। আর দ্বিতীয়ত, মা জগদম্বা এই জগৎ-সংসারের নিয়ন্তা। ইচ্ছাময়ী তিনি, তাঁর ইচ্ছাতেই সবকিছু চলছে। এর বাইরে কোন নিয়ম তুমি প্রতিষ্ঠা করতে পার না। বিশ্বামিত্র চেয়েছিলেন নতুন একটা পৃথিবী করতে পারেননি। তন্ত্রে যে বিভিন্ন যন্ত্রের উল্লেখ আছে বা প্রয়োগবিধি আছে, বাস্তুবিজ্ঞানসম্মতভাবে অর্থাৎ সঠিক স্থান ও কালে সঠিকভাবে সেগুলির প্রয়োগ করলে শক্তির field তৈরী করা যায়। বনগ্রাম আশ্রমে আমার যে ঘরটি আছে, এখানে ঐরকম যন্ত্র স্থাপন করার পরিকল্পনা আমার ছিল কিন্তু বিশ্বমন থেকে বাধা পেলাম। ঐরকম যন্ত্র স্থাপন করে তার বিশেষ বিশেষ point-এ বিশেষ আধ্যাত্মিক লোকদের বসিয়ে রাখতে হবে। এবার যে কোন ব্যক্তিকে ঐ যন্ত্রের middle point-এ বসিয়ে দিলেই পৃথিবীর magnetic field ঐ শরীরের মধ্য দিয়ে প্রচণ্ডভাবে ক্রিয়াশীল হবে। এবার ঐ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের উন্নত চিন্তার তরঙ্গ দিয়ে তাকে ধীরে ধীরে intoxicated করলে সে অচৈতন্য হয়ে যাবে কিন্তু তার মস্তিষ্কের সুপ্ত কোষগুলি পদ্মফুলের পাপড়ির মতো খুলে যাবে—এটা একটা উন্নত বিজ্ঞান। এরকম আরও কত উন্নত চিন্তা বা বিজ্ঞান প্রকৃতিতেই আছে, উপযুক্ত সময় না হলে সেগুলির প্রকাশ বা প্রয়োগ করা যাবে না।

তোমার লণ্ডন বেড়াবার সখ থাকলে, নিজের চেষ্টায় তুমি যদি সেখানে যাও তাহলে যে আনন্দ পাবে, তোমাকে অজ্ঞান করে নিয়ে গিয়ে লণ্ডন শহরে ছেড়ে দিলে নিশ্চয়ই তোমার সে আনন্দ হবে না। এই যে জীবনপ্রবাহ—এখানে শুধু আনন্দেরই আস্বাদন হয়ে চলেছে—এটাই লীলাবিলাস। একসাথে দল বেঁধে আধ্যাত্মিকতা হয় না, এতে মজা নেই। দল বেঁধে চুরি-ডাকাতি, রাজনীতি এসব হয়— আধ্যাত্মিকতা হয় কি ? আধ্যাত্মিক জগতে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির মধ্যে যার যখন পাকা ধারণা তৈরী হচ্ছে, তখন থেকেই তার vertical-এ চলা শুরু হচ্ছে। তার আগে সব চলাই বা সব কলাই horigental। কিন্তু সেখানেও স্বরূপে কোন পার্থক্য নেই জানো—শুধু ঢং বা ভঙ্গিমার পার্থক্য রয়েছে। একটা শুঁয়োপোকা অথবা পিঁপড়ে থেকে শুরু করে তোমার মধ্যেও কার আর্তি ফুটে উঠছে —সেই পরমেশ্বরেরই নয় কি ? আবার সকলের অন্তরের অন্তর্যামীরূপেও তিনি। সুতরাং তুমি কাকে হীন ভাববে বল ? যে হীন সেও তো ব্রহ্মেরই প্রকাশ। আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে—সে তোমারই আর একটা রূপ নয় কি ? এই জন্যই ভেদের ভিতর সেই অভেদকে প্রত্যক্ষ করার কথা বলা হয়েছে কারণ সবার ভিতর সেই একই অখণ্ড পরম সত্তা রয়েছে । যতক্ষণ এই ভেদাভেদ থাকছে ততক্ষণই দুঃখের বোধ আর এটা দূর হলেই আনন্দ। স্বভাবে সবাই ভিন্ন ভিন্ন হলেও স্বরূপত সবই এক—এটা বোধ করাই মানবজীবনের উদ্দেশ্য। ভঙ্গিমার পার্থক্য থাক না—এনিয়ে বিরোধ করো না।