জিজ্ঞাসু—বর্তমানে উন্নত হঠযোগীরা কি এখনও আছে ?

গুরুমহারাজ—আছে বই কি ! একজনের সাথে তো আমার খুবই পরিচয় আছে। উনি বাবা বালস্বামী নামে বেশী পরিচিত। ছোটখাটো শরীর, একটা ছোট ঘোড়ায় চেপে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানোই তাঁর কাজ—খুব মজার মানুষ। উনি তিনবার কায়াকল্প করে শরীর পরিবর্তন করেছেন। এখন যেটা আছে সেটা নেপালী বালকের শরীর। ওনার প্রথম শরীর থেকেই আমি ওনাকে চিনতাম—তখন ওঁর নাম ছিল কুলাইয়া দাস। এবার দেখা হতেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি গো কেমন চলছে ?’ উনি হেসে চলে গেলেন। উনি একবার উত্তরভারতে শংকরাচার্যকে খুব মার খাইয়েছিলেন। ঘটনাটা হয়েছিলো কি—উনি পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ উল্টো দিক থেকে শংকরাচার্যের চতুর্দোলা লোকলস্কর সমেত সেখানে এসে হাজির। শংকরাচার্যের সঙ্গে অনেক লোকজন ছিল, তারা ‘তফাৎ যাও’, ‘তফাৎ যাও’ করে চিৎকার করল। ওরা বাবা বালস্বামীকেও সরে যাবার জন্য বলল। কিন্তু বাবা বালস্বামীর বালকের স্বভাব, তিনি গোঁ ধরে বসলেন – আগে যাবেন। পাহাড়ি সংকীর্ণ রাস্তা, ফলে চতুর্দোলা এবং ঘোড়া পাশাপাশি যাবে না। যে কোন একজনকে অপেক্ষা করতেই হবে, তবে অন্যজন যেতে পারবে। ঐ অবস্থায় যেহেতু শংকরাচার্যের দলবল বেশী, ওরা জবরদস্তি বালস্বামীকে রাস্তার পাশে সরিয়ে দিয়ে শংকরাচার্যের চতুর্দোলা নিয়ে বেরিয়ে গেল। এতে বাবা বালস্বামী নিজেকে খুব অপমানিত বোধ করলেন এবং প্রতিশোধ নেবার উদ্দেশ্যে তিনি ঘোড়া ছুটিয়ে পাহাড়ি পথে খাড়া খানিকটা নেমে এসে পুনরায় শংকরাচার্যের দলের আগে এসে দাঁড়ান। তারপর সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনি একটা বিশেষ যৌগিক ক্রিয়া করে দিয়ে আড়ালে চুপ করে বসে থাকলেন। শংকরাচার্যের চতুর্দোলা পাকদণ্ডী পথ ঘুরে যেই সেখানে এসে পড়লো আর মাঠে কর্মরত যত লোক ছিল তারা কাস্তে, কাটারি, লাঠি হাতে হৈ হৈ করতে করতে ছুটে এসে শংকরাচার্যসমেত সমস্ত লোকজনকে মারতে শুরু করল। আর বাবা বালস্বামী তাই দেখে বালকের মত হাততালি দিয়ে নাচতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠের লোকেদের সম্বিৎ ফিরে এল এবং ওরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ
করতে লাগলো। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলো—তারা অকারণে সাধুদের দলটিকে মারতে লাগলো কেন ? ওরা উত্তর দিয়েছিল যে, সঠিক কারণ তারাও জানে না তবে ঘোড়ায় চড়া কেউ একজন ওদেরকে মারতে বলায় ওরা ঐ কাজ করেছিলো – এরকম নানান অলৌকিক ক্ষমতা আছে বাবা বালস্বামীর।

একবার আনন্দময়ী মায়ের সাথে ওঁর দেখা হয়েছিল। সেবার কিন্তু ওঁর কোন জারিজুরি খাটেনি। আনন্দময়ী মা ছিলেন প্রেমিক সাধিকা -মাতৃভাব। তিনি বালস্বামীকে সন্তানবৎ নানান সৎ পরামর্শ দিয়েছিলেন। বালস্বামী উত্তরভারতের বিভিন্ন স্থানে একটা ছোট্ট টাট্টু ঘোড়ায় চেপে ঘুরে বেড়ান। মীরাট শহরে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন কর্তারা—এমনকি রাজনীতিক নেতারাও ওঁকে খুব খাতির করে দেখলাম। আমি মীরাটের S. P. চণ্ডোলাদের বাড়ী যাই। ওখানেই ওঁকে দেখেছিলাম। সবাই কেন ওঁকে এত খাতির করে তার কারণ জানতে চাইলাম চণ্ডোলার কাছে। ও বললো যে, বাবা বালস্বামী বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হঠাৎ হঠাৎ অঘটন ঘটান আবার সময় সময় বিভিন্ন গোলযোগ থেকে ওদেরকে রক্ষাও করেন। ফলে ওরা সবাই জানে যে, বাবা বালস্বামী একজন উন্নত যোগী, তাই সবাই ওঁকে খাতির করে। একবার একটা সাধুসম্মেলন ভেস্তে দিয়েছিলেন বালস্বামী। স্টেজে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত ছিল। সভা চলাকালীন হঠাৎ বাবা বালস্বামী ঘোড়াসমেত স্টেজে উঠে গিয়ে মাইক কেড়ে নিয়ে নিজেই সাধুদের সম্বন্ধে এবং নেতাদের সম্বন্ধে ‘ইয়ে লোক ভ্রষ্ট হ্যায়, পাখণ্ডী হ্যায়’ এইসব বলতে থাকে ফলে সভা ভেঙে যায়। এইরকম কত হঠযোগী সমাজেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাহলে হিমালয়ের বিভিন্ন স্থানে আরও কত উচ্চকোটির যোগী রয়েছেন তাঁদের হিসাব কে রাখে !