জিজ্ঞাসু—বর্তমানের শংকরাচার্যরা কিন্তু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে ভালোভাবে নেয়নি–এর কারণ কি ?
গুরুমহারাজ – ঠিকই বলেছ বর্তমানের চারজন শংকরাচার্যই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বা স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধে খুব একটা ভাল ধারণা পোষণ করেনি। আমাদের মিরাটের রমেশ শর্মাজী একবার যোশী মঠের শংকরাচার্যের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। ওর হাতে একটা বই ছিল। যেটা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে হিন্দিতে প্রকাশিত। রমেশজী খুব ভক্তিভরে শংকরাচার্যকে প্রণাম করে ওনার হাতে বইটি ধরিয়ে দেয়। শংকরাচার্য বইটা হাতে নিয়ে না খুলেই ছুঁড়ে বাইরের দিকে ফেলে দেয়, কারণ বই- এর মলাটে শ্রীরামকৃষ্ণ এবং স্বামীজীর ছবি ছিল। এই ঘটনায় রমেশ শর্মাজী খুব ব্যথিত হয়। শর্মাজী নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ, ফলে এই ঘটনায় খুবই কষ্ট পেয়েছিল। পরে আমাকে পুরো ঘটনাটা বলায় আমি ওর ভুল ভেঙে দিই। আদি শংকরাচার্য প্রতিষ্ঠিত দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী তোতাপুরীর শিষ্য হিসাবে ঠাকুর যদি নিজেকে ‘পুরী’ সম্প্রদায়ভুক্ত বলে পরিচয় দিতেন, তাহলে হয়তো ওরা ঠাকুরের কথাটা মাথায় রাখতো। কিন্তু ঠাকুর কখনোই কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের হয়ে কথা বলেননি, উনি ছিলেন সকল সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে—ঠাকুরের এই ভাবটি ওরা ধরতেই পারেনি। এছাড়া ঠাকুর বিবাহিত ছিলেন এবং মৃত্যুকাল পর্যন্ত স্ত্রী ত্যাগও করেননি—এই সব বিভিন্ন কারণে ওরা ঠাকুরকে এড়িয়ে চলতে চায়। আর স্বামীজীকে এড়িয়ে চলে—তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্বের কাছে পাত্তা পায় না বলে।
বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন প্রধান করপাত্রীজী, শংকরাচার্য নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। তাই করপাত্রীজীর মতামতকে সব শংকরাচার্যরাই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। একমাত্র কাঞ্চীর শংকরাচার্য জয়েন্দ্র মুক্ত চিন্তার লোক, বদ্ধতা ভালবাসে না, ফলে ও একবার করপাত্রীজীর বিরোধ করেছিল। এই নিয়ে অনেক কাণ্ডও হয়েছিল। যাইহোক করপাত্রীজী লোকটা কিন্তু ত্যাগী সন্ন্যাসী। হাত অর্থাৎ কর পেতে যা জোটে তাই খেয়ে শরীর ধারণ করে, সেজন্যই ওর এরূপ নাম। কিন্তু করপাত্রীজীর সম্প্রদায় সেন্টিমেন্ট প্রচণ্ড। বিশ্বহিন্দু পরিষদের বিভিন্ন movement ওর গোঁড়ামির জন্য পিছিয়ে গেছে। রাজস্থানে একবার একসাথে কয়েকহাজার সংখ্যালঘু হিন্দু হতে চেয়েছিল কিন্তু করপাত্রীজী বিধান দিলেন, ‘হিন্দু জন্মায়, হিন্দু হওয়া যায় না’। ব্যস ওদের আর হিন্দু হওয়া হল না। বর্তমানে করপাত্রীজী মারা গেছেন ফলে এখন হয়তো হিন্দু সমাজ অনেকটা গোঁড়ামিমুক্ত হতে পারবে।