জিজ্ঞাসু—এই আশ্রমের দীক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ?

গুরুমহারাজ—আর বাবা, মানুষ এই রকমই ! লেনি বলে একটি মেয়ে এসেছিল নরওয়ে থেকে। এখানে এসে থাকলো, দীক্ষাও নিল, তারপর একদিন কোন কারণে আমার ঘরে ঢুকে আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে লাগল যে, আমাকে মারবেই। আমি দেখলাম—এতো মহাবিপদ ! ধরে এমন ছুঁড়ে দিলাম যে, ঘরের কোণে গিয়ে ধড়াস্ করে পড়ল। তারপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেল, বলে গেল আমাকে বুঝে নেবে।

রাত্রিবেলা বলে আমি আর খোঁজ নিইনি, সকালে মুরারীর কাছে জানতে পারলাম ও রাত্রেই পালিয়েছে। আমি ভাবলাম কোথায় আবার যাবে হয়তো কাছেই কোথাও আছে ফিরে আসবে কিন্তু দু’চারদিন কেটে গেল, ফিরল না। এমনিতে কোন ভয় ছিল না কারণ নামে মেয়ে হলেও ও ছিল dangerous মহিলা। ক্যারাটে-জুডো জানতো, ২/৪ জনকে কাছে ভিড়তে দেবে না, তবু হয়তো কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে এসব ভাবছিলাম। কি আর করা যায় আশে-পাশের গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেল—ও রাতারাতি এখান থেকে বেরিয়ে মাঠে মাঠে হেঁটে বণ্ডুল গ্রামে চলে গিয়েছিল, ভোরে ওখানকার মাঠের ধারে একটা পুকুরে স্নান করে naked হয়ে জামা-কাপড় মেলে শুকাচ্ছিল আর সোনালি চুল চারিদিকে ছড়িয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে বসেছিল। যাবার সময় সে ব্যাগ-পত্র, জামা-কাপড়, ওর Pass Port, Visa-র কাগজপত্র কিছুই সঙ্গে নেয়নি। ফলে ঐ কাপড়-জামাটিই না শুকালে পরতে পারবে না, তাই এই ব্যবস্থা।

এদিকে ভোরে গ্রামের একটা লোক প্রাতঃকৃত্য সারতে ওখানে গিয়ে সাদা খালি গা আর সোনালী চুলে ঢাকা-পড়া মুখমণ্ডল একজনকে পুকুরের ধারে দেখে ভেবেছে বোধ হয় জলের জলকুমারী বা জটাধারী অথবা কোন ভূত-প্রেত বা দেবদেবী হবে। সে চিৎকার করতে করতে গ্রামে গিয়ে খবর দেওয়ায় গ্রাম থেকে বহু লোক ওখানে এসে হাজির। অনেক লোকের আওয়াজে ওর সম্বিৎ ফেরে এবং জামাকাপড় পরে ওদের
সামনে আসে। লোকেদের মধ্যে যারা ইংরাজী জানতো, ও তাদের সঙ্গে communication করে এবং জানায় যে, সে অসহায় এবং বনগ্রাম আশ্রমের সাধুবাবা তার সব কেড়ে-কুড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। সে হিমালয় যাবে, ওরা যেন তাকে help করে। সরল গ্রামবাসী—তার উপর একটা বিদেশিনী মহিলাকে সাহায্য করার মোকা আবার ছাড়ে ! চাঁদা তুলে ওর হাতে ওরা কিছু টাকা তুলে দেয় এবং বর্ধমান যাবার ব্যবস্থা করে দেয়। লেনি সোজা হরিদ্বারে নেমে উত্তরকাশীতে আমার গুরুদেব রামানন্দ অবধূতজীর কাছে গিয়ে আমার নামে যা-তা বলে নালিশ করে। দ্যাখো, গুরুদেব আমাকে জানেন ফলে তিনি আর কি করবেন কিছুদিন ওকে ওখানে থাকতে দিয়েছিলেন।

যাইহোক এতো গেল লেনির কথা—এখানকার মানুষেরা—এমনকি সব আশ্রমিকরা আমার সঙ্গে সর্বদা একই রকম ব্যবহার করে নাকি ? বেশীর ভাগই তো আমার কাছে আসে complain করতে। একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ জানায়। আমি জানি যে, এটা আসছে ঈর্ষা এবং পরশ্রীকাতরতা থেকে। আমি এও জানি, যে complain করছে তার থেকে যার বিরুদ্ধে complain করা হচ্ছে, সে উন্নত। Inferior complex থেকেই complain আসে, superior হলে তো সে digest করে নিতো, বমি করবে কেন ? আমার অত্যন্ত কাছের জনেরাও আমার নাম দিয়ে অন্য লোককে এমন সব কথা বলে বা চিঠি লেখে—যেগুলো পরে আমার knowledge-এ এলে আমিই লজ্জায় পড়ে যাই। এসব খুবই হয়। দ্যাখো সর্বাবস্থায়—২৪ ঘণ্টাই একটা ভাবকে ধরে থাকা অত সহজ কথা নয়। সেটা যে পারে সে আমার অন্তরের অন্তরতম। তার সঙ্গে আমার নিত্য যোগাযোগ ।