জিজ্ঞাসু—ক্যাম্পলাইফে আপনাকে নানা রকম লজ্জাজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল শুনেছি—কিন্তু আশ্রমের মধ্যে এসেও এমন ঘটনা ভাবা যায় না !

গুরুমহারাজ—কতটুকু আর ভাবতে পার তোমরা আর ব্যক্তিগত ভাবনার উপর এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড-বিস্তৃত ভাবনার কতটুকুই বা নির্ভর করে ! Individual Mind আর Universal Mind। Universal Mind দ্বারাই সমস্ত ছোট ছোট Individual Mind নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যক্তির অহংকে বলা যায় Individual Igo, এটা বিশ্ব অহং বা Universal Igo-র ক্ষুদ্র প্রকাশমাত্র ।

জিজ্ঞাসু—ক্যাম্প লাইফের কি ঘটনার কথা বলছিলেন ?

গুরুমহারাজ—সে সব একদিন কেটেছে—কতকগুলো young ছেলের দলে দিনের পর দিন কাটাতে হয়েছে। তাদেরকে দিয়েই কাজ করাতে হবে, ফলে তাদের কিছু কিছু অন্যায়-আবদারও মেনে নিতে হত, কিন্তু মাত্রা ছাড়ালে শাসনও করতে হত। কোন কোন ঝামেলা আবার এমনি এমনি এসে যেত। একবার field-work সেরে camp-এ ফিরছি, রাস্তার ধারে একটা বাড়ির লোক প্রচণ্ড মদ খেয়ে তার বউকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে। বউটা ‘পরিত্রাহি’ বলে চিৎকার করে কাঁদছে আর সাহায্যের জন্য আবেদন করছে। ঐ বাড়িটার চারিপাশে অনেক বাড়ি রয়েছে, কিন্তু কেউ বেরিয়ে আসছে না বা ঐ ব্যাপারে মাথাও ঘামাচ্ছে না। আমি ঐ মহিলাটির চিৎকারে থাকতে না পেরে বাড়ির ভিতরে গেলাম আর মদ্যপ স্বামীটাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিলাম। সে রোক্ করে আমার উপরেই চড়াও হতে আসছে দেখে দিলাম দু-চার কিল। লোকটা একে মদ খেয়ে বেহেড় হয়ে গিয়েছিল, মার খেয়ে পড়ে গেল। ওমা! তারপর সে কি কাণ্ড, মহিলাটির উল্টো reaction ! সে চিৎকার করে আমাকে গালাগালি দিতে লাগল আর আমার বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য পাড়াপড়শিদের ডাকতে লাগল। আমি তো অবাক ! যত তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করি বা বোঝানোর চেষ্টা করি যে, তার ভালোর জন্যই তো স্বামীকে মারা, সে কিছুতেই বুঝবে না—আমাকে গালাগালি দিয়েই চলেছে। শেষে বলল, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে তুই নাক গলাতে এলি কেন ?” আমি বললাম, ‘ও যেভাবে তোমাকে মারছিল—তুমিতো মরে যেতে! বউটি বলল, “আমার স্বামীর হাতে মার খেয়ে মরে গেলেও আমার শান্তি, কিন্তু তুই যে ওকে মারলি ও মরে গেলে আমার কি হবে ?’ বোঝ কাণ্ডটা একবার ! যাইহোক আমাদের বাক-বিতণ্ডায় যে দু-চার জন বাড়িতে জুটল তাদের অনেকেই আমাকে চিনত। তারা আমাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘রবীনদা, এদের ব্যাপারে কোনদিন নিজেকে জড়াবেন না। এই মারপিটটা ওদের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। দেখছেন না পাড়ার কেউ কোন সাহায্যের জন্য আসেনি। আপনি এখানে নতুন তো তাই জানেন না বলে
এসেছেন। আর কোনদিন আসবেন না।

আমিও মনে মনে ভাবলাম – ‘আবার ! এই ঘাট হয়েছে ! তবে তোমাদেরকেও বলছি শোন —কোন দিন স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় অকারণে নাক গলাবে না, তাহলে তোমরাই ঝামেলায় জড়াবে। ওদের ঝামেলা হয়তো মিটে যাবে কিন্তু তোমাকে নিয়ে ঝামেলা চট্ করে মিটবে না।

আর একবার মধ্যমগ্রামে camp চলাকালীন ঐ রকম একদিন কাজকর্ম সেরে camp-এ ফিরে আসছি—হঠাৎ রাস্তার উপর এক ভদ্রমহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়েই আমাকে গালাগালি ! আমি তো বুঝতে পারছি না কি ব্যাপার, কিন্তু তিনি হাত-পা নেড়ে অকথা কুকথা বলেই চলেছেন। বহু লোকও জুটে গেছে চারিদিকে, prestige-এর ব্যাপার ! আমি আচমকা ধমক দিয়ে ভদ্রমহিলাকে থামালাম। বললাম, ‘কি ব্যাপারটা বলুন তো?’ তখন ভদ্রমহিলা বললেন যে, তাঁর নাকি একটি অবিবাহিত বোন রয়েছে, আমাদেরই camp-এর কোন ছেলে তাকে tonting করেছে, তাঁর ধারণা আমিই সেই ব্যক্তি। আমি বললাম, ‘বেশ আপানার বোনকে ডাকুন, দেখুন সে কি বলে, অযথা আমাকে গালাগালি করছেন কেন ?’ তাঁর বোনকে ডাকা হলো, বোন বলল যে, ওকে উৎপাত করে যে, সে অন্য ছেলে। ভদ্রমহিলা একটু লজ্জিত হলেন— অন্য লোকেরাও ভদ্রমহিলাকে দু-চার কথা শোনাল। তবু আমি ওনাকে বললাম – ‘শুনুন দিদি, আপনি যদি আমাকে একটু সাহায্য করেন তাহলে আমার camp- এর কোন ছেলেই আপনার বোনকে কেন কাউকেই বিরক্ত করবে না।’ উনি খুব খুশী হলেন একথা শুনে। ওনার কাছ থেকে একটা শাড়ীকাপড় চেয়ে নিয়ে আমি camp-এ না ফিরে আমাদের ছেলেদের ফেরার রাস্তায় —মাঠের ধারে একটা বাগানের কাছে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমিতো ঘটনা শুনে বুঝতে পেরেছি কোন ছেলেটি এই কম্মো করেছে। সন্ধ্যার মুখোমুখি ছেলেটি ফিরছে দেখেই আমি শাড়ীটা মেয়েদের মতো গায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘোমটা টেনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ও কাছে আসতেই ফিফিস্ করে কিছু বলেই বাগানের অন্ধকারে ঢুকে গেলাম । ছেলেটি প্রথমটায় একটু অবাক হল, তারপর মাথার চুলটা হাতে করে একটু ঠিক করে নিল আর জামাটা ঝেড়ে জামার হাতাটা একটু তুলে আমার পিছু পিছু আসতে লাগল। তারপর একটা বড় গাছের আড়ালে গিয়েই আমি পিছন থেকে শাড়ীটা ওর মুখে চাপা দিয়েই দিই মার। মেরে মুখ ফাটিয়ে দিলাম। সে কোন রকমে ছাড়া পেয়েই দে ছুট ! আমিও সোজা camp-এ হাজির হলাম। কিছুক্ষণ পরেই রাত্রির খাওয়ার ডাক পড়ল। সবাই একসঙ্গে খেতে বসা হয়। সেদিন ঐ ছেলেটি আর খেতে আসে না। ঢাকা দিয়ে বেডে শুয়ে পড়েছে। আমি জোর করে তুলে নিয়ে এলাম। সবাই বলল, ‘কিরে, গরমকালে মাথায় গায়ে চাপা দিয়েছিস কেন ? খোল চাপা !’ চাপা খুলতেই দেখা গেল মুখ-নাক সব ফোলা ফোলা, রক্তের দাগ তখনও রয়েছে। Camp-এর সবাই ওর স্বভাবের কথা জানতো—সবাই ভাবলো ও বোধহয় কোথাও ধরা পড়ে public- এর হাতে গণধোলাই খেয়েছে। এরপর থেকে সবাই ওকে রাগাতে লাগল। ছেলেটি সেই যে লজ্জা পেল আর কখনও অসভ্যতা করে নি।