জিজ্ঞাসু :– ‘পরমানন্দ মণ্ডল’ সম্বন্ধে একটু বলুন ?
গুরুমহারাজ :– ‘পরমানন্দ মণ্ডল’ গড়ে উঠেছে ‘এক’ কে কেন্দ্ৰ করে। এই ‘এক’-কে কেন্দ্র করে আবার ত্রিকোণাকারে ত্রিমাত্রাশক্তি রয়েছে। যারা ঐ কেন্দ্রের এক-কে ব্যালেন্সে রেখেছে। এই ত্রিশক্তিকে ঘিরে রয়েছে ছয় জন, এরা প্রত্যেকে এক-একজন ‘দিকপাল’। আমাদের বনগ্রামকে কেন্দ্র করে এদের দু’জন রয়েছে। এরা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে প্রচণ্ড প্রতিকূল স্থানেও অর্থাৎ জনহীন প্রান্তর বা মরুভূমির ন্যায় স্থানেও জনহিতকর কোনো প্রতিষ্ঠান বা আশ্রম তৈরি করার ক্ষমতা রাখে ।

 এদের বাইরের সার্কেলে রয়েছে ১৬ জন 'পার্ষদ'। পার্ষদেরা জীবকল্যাণে বারবার শরীরগ্রহণ করতেও কাতর হয় না। এরাই যুগে যুগে আধ্যাত্মিক ভাবতরঙ্গ পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করে। এদের বাইরে যে সার্কেল রয়েছে, তাতে রয়েছে ৩৪ জন, এরা 'কলাসিদ্ধ' । এরা বিভিন্ন কলা বা Art-এ সিদ্ধ। যেমন এদের কেউ সঙ্গীতে সিদ্ধ, কেউ সাহিত্যে, কেউ শিল্পে, কেউ রাজনীতিতে, কেউ ধর্মনীতিতে ইত্যাদি। এদের পরের সার্কেলে রয়েছে ৫৪ জন, এরা 'প্রজ্ঞা স্থিতি'-তে রয়েছে। এই স্থিতির মানুষেরা পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রজ্ঞার আলো ছড়িয়ে মানুষকে অজ্ঞান থেকে জ্ঞানের জগতে পৌঁছানোর কাজ করে থাকে। এর বাইরে যে সার্কেল রয়েছে, সেখানে রয়েছে ৬৪ জন 'গুরু'। এরা সদগুরু। এরা সরাসরি জীবনে জীবনযোগ করে মানুষকে অসত্য থেকে সত্যের পথে, অজ্ঞান-অন্ধকার থেকে আলোর রাজ্যে, মৃত্যুর জগৎ থেকে অমৃততত্ত্বে নিয়ে যাবে। এদের অনেকেই আমাদের বনগ্রামের সাথে যুক্ত রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ১০৮ জনের একটি বড় সার্কেল। যাদের কাজ হবে জনসংযোগ। এরা পরমানন্দ মিশনের মূল আদর্শকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে দেবে, বহু মানুষ এদেরকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আশ্রমমুখী হবে এবং এরা মানুষকে ভাবানুযায়ী পরমানন্দ মণ্ডলের নির্দিষ্ট অধিকারীর কাছে পৌঁছে দেবে।  

    আশ্রমে আমি মানুষকে কি শেখাই বলোতো—আমি তোমাদেরকে শেখাই How to survive__ তাইনা ! Art of Life (জীবনের কলা) এবং Art of Living (জীবন-যাপনের কলা) শেখানো হয় এখানে। সেই অর্থে বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন যেন মানুষের Survival Camp !

সে যাইহোক, যাদের কথা এতোক্ষণ বললাম_ এদের প্রত্যেকেরই কিন্তু জন্ম হয়ে গেছে, তারা এখন সকলেই এই পৃথিবী গ্রহের কোনো না কোনো স্থানে নিজেকে তৈরি করছে। ১৯৮৪ সালের মধ্যে শেষ ব্যক্তির শরীরগ্রহণ হয়ে গেছে, অর্থাৎ এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের ২০০২ সালে বয়স হবে ১৮ বছর। কারণ ২০০২ সালের পর থেকেই এই পুরো team ক্রিয়াশীল হবে। এদের মধ্যে যারা Senior, তারা কাজে নেমে পড়েছে। তবে ওদের সবাই যে আমার এখানেই আছে বা ভারতেই আছে এমন নয় —পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ওরা। পৃথিবীর সার্বিক কল্যাণের জন্য বা মানুষের আধ্যাত্মিক জাগরণের জন্য জগদম্বার ইচ্ছায় পরিকল্পিত এই বিশাল দল সৃষ্টি হয়েছে।

   সুতরাং তোমরা যারা ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ে খুব চিন্তিত_ তাদের উদ্বিগ্ন হবার কোনো কারণ নেই। যুদ্ধ-বিগ্রহ, লোকক্ষয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসব যাই হোক না কেন_ আখেরে পৃথিবীগ্রহের মঙ্গলই হবে। আর বর্তমানে যুদ্ধবিগ্রহ, হিংসা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি যা দেখা যাচ্ছে_এগুলো যেন action-এর reaction ! প্রকৃতির উপর দিনের পর দিন মানুষ আঘাত হেনেছে, এখন তার প্রত্যাঘাত আসছে। এইসব থেকে মানুষ শিক্ষা নিক__ যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের ভুল না হয়। আমি পরমানন্দ মন্ডলের যাদের কথা বললাম, ওদের সকলের সাথেই আমার যোগাযোগ আছে, কিন্তু ওদের অনেকে আমাকে এখনও স্থুলে দেখেনি_তাদের সাথে আমার সুক্ষ্ণে যোগাযোগ হয়।।