জিজ্ঞাসু : মহারাজ, আপনি হিমালয় থেকে আঠার মতো কি একটা এনেছিলেন, আমাদের দেখিয়ে বললেন এটা হিমালয়ের অনেক বেশী উচ্চতায় পাওয়া যায়—ওটা কি ছিল !
গুরুমহারাজ : ওটাকে শিলাজিৎ বলে। ঠিকই বলেছ, ১২/১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় বরফের মধ্যে মধ্যে দু-একটা কালো রঙের শিলা দেখা যায়, সেগুলিতে বরফ ধরে না। বরফ চাপা পড়ে কিন্তু সূর্য উঠলেই পাথরগুলি দ্রুত বরফমুক্ত হয়ে যায়। হিমালয়ের অধিক উচ্চতার জায়গাগুলি তো চিরতুষারাবৃত অঞ্চল। ওখানে হাজার হাজার বছর ধরে বরফ অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় এবং প্রচণ্ড চাপে থাকতে থাকতে স্ফটিকে পরিণত হয়ে যায়, তখন সেগুলো থেকে আর সহজে জল পাওয়া যায় না। যাইহোক্, ঐ অবস্থায় এ ধরণের কালো পাথর থাকা সত্যিই বিস্ময়কর ! সূর্যের উত্তাপের সঙ্গে সঙ্গে ঐ পাথরগুলি ঘামতে থাকে। ঐ যে আঠালো পদার্থ বললে—ওটাই শিলাজিৎ। ঐ পাথরগুলি থেকে পাওয়া ঘাম চেঁচে চেঁচে সংগ্রহ করতে হয়। এগুলি অত্যন্ত খাদ্যগুণসম্পন্ন। সামান্য পরিমাণ গ্রহণে শরীর গরম তো রাখবেই, তাছাড়া কয়েকদিন না খেতে পেলেও শরীরকে পুষ্টি জুগিয়ে যাবে। ভাবো একবার—ফলে সাধু-সন্ন্যাসীরা শিলাজিৎ সংগ্রহ করে রাখেন। আমি যেটা নিয়ে এসেছিলাম, একজন সাধুই আমাকে দিয়েছিলেন। আমাদের আশ্রমের ভজন তখন খুব দুর্বল ছিল, ওকে দুধের সঙ্গে একটু পরিমাণে কয়েকদিন খাওয়ালেই ওর শরীরে energy ফিরে আসবে—এসব ভেবেই আনা হয়েছিল। তাছাড়া তোমরাও জিনিসটা কি রকম তা দেখতে পেলে।
কিন্তু শিলাজিৎ সংগ্রহ করা খুবই শক্ত ব্যাপার। কারণ ভালুকরা জানে এর কথা। ফলে ওরা সকাল হতে না হতেই হাজির হয় সেখানে—যেখানে ঐ ধরণের পাথর রয়েছে। আর রোদ ওঠার আগে থেকেই চাটতে থাকে পাথরগুলো। ওরা এটা জানে না যে, রোদ না উঠলে পাথর ঘামবে না। যাইহোক সাধুদের শিলাজিৎ সংগ্রহ করতে হলে যে কোন উপায়ে ভালুকদের সরিয়ে তবেই ওটা সংগ্রহ করতে হয়। হিমালয়ান বিয়ার জানো তো যেমন বড় তেমন হিংস্র। ফলে কাজটা খুব একটা সহজ নয় !