জিজ্ঞাসু হরিদ্বারের ঘটনাটা কি বলছিলেন ?
গুরুমহারাজ : হ্যাঁ, ওটি ঘটেছিল আমাদের অনেকের চোখের সামনে। উত্তরভারতে আমাদের আশ্রমের যে সব ভক্তরা রয়েছেন, তাদের অনেকেই ছিল আমার সঙ্গে। তোমরা যারা হরিদ্বার গেছ, তারা তো সকলেই জানো যে, হরিদ্বারে বানরের বা হনুর কেমন উৎপাত ! ওখানে গঙ্গার ঘাটের কাছে প্রচুর মিষ্টির দোকান, আর season-এ সকাল থেকে কচুরী-সিঙ্গাড়া বা বিভিন্ন মিষ্টি দ্রব্যাদি বিক্রিও হয় খুব, ফলে ওগুলো ছোট ছোট ঝুড়িতে কাচের আলমারীর উপরে অর্থাৎ কাচের বাইরে হাতের কাছেই রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু হনু বা বাঁদরের উৎপাতে তা রাখার জো নেই। সুযোগ পেলেই তুলে নিয়ে পালাবে, অনেক সময় ঝুড়িসমেত নিয়ে পালায় ।
এইরকম অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কোন এক দোকানদার একদিন সন্দেশের সঙ্গে বিষ মাখিয়ে সামনের একটা বাটিতে রেখে দিয়েছে। আশ্চর্য এটাই যে, সেদিন আর ঐ দোকানে কোন হনু বা বাঁদর আসছে না। অনেক লোক যারা ঘটনাটা জানে তারা এসব নিয়েই আলোচনা করছে, কেউ চা খাচ্ছে আর ব্যাপারটা দেখছে। হঠাৎ কি ঘটনা ঘটল জানো—ওখানে একটা বুড়ো হনুমানের উদয় হল, ও বাটিটার কাছে গিয়ে শুঁকে কি সব দেখল। তারপর চলে গেল, বাকীরাও নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে বসল। এরপর প্রায় ১ ঘণ্টা পর সেই বুড়ো হনুমান আবার ফিরে এল। তার হাতে কিছু লতাপাতা, ও সেগুলো দু’হাতে দলে ঐ সন্দেশটায় মিশিয়ে দিয়ে বাটিসমেত ওটাকে নিয়ে একলাফে উঁচু চালের মাথায় চেপে বসে সবাই মিলে দিব্যি খেতে লাগল ।
প্রকাশ্য দিবালোকে বহু লোকের সামনে এই ঘটনাটা ঘটেছিল। সমস্ত মানুষজন তো অবাক ! যাইহোক এইজন্যই বলছিলাম বাঁদর বা হনুমানের মধ্যে নানারকমের বিশেষজ্ঞ রয়েছে, প্রয়োজনে তাদেরকে ডেকে আনা হয়। তবে যে কোন পশু-পাখীরই শরীরের প্রয়োজনে অনেক ঔষধি গাছ-গাছড়ার কথা জানা আছে। মানুষ সেগুলো follow করলে অনেক উপকার পাবে। তবে বিভিন্ন ওষুধ অবশ্য এভাবেই আবিষ্কারও হয়েছে। বেজিরা সাপ কাটার পর একটা গাছের পাতা কাটে, ওটি সাপের বিষের প্রতিষেধক। কিছু কিছু পশুদের শরীর খারাপ হলে ঠিক বেছে বেছে ঔষধি গাছ খেয়ে পাতলা পায়খানা করে এবং এইভাবে শরীরটা ঠিক করে নেয়। কুকুর একজাতীয় ঘাস খেয়ে বমি করে শরীর ঠিক করে। কিন্তু হনু, বাঁদর, শিম্পাঞ্জি এরা আরও বুদ্ধিমান হওয়ায় আরও বেশী ঔষধির প্রয়োগ জানে। বর্তমানে ওদের বিশেষ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সার বা এইডস্-এর কোন ওষুধ পাওয়া যায় কিনা তার চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা কোন বাঁদরের শরীরে অপারেশন করে একটুকরো ক্যান্সারযুক্ত কোন টিউমারের মাংস ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই তার ঐ জায়গায় পচে ঘা হয়ে যাচ্ছে বা গ্যাংগ্রীন হয়ে যাচ্ছে। আর যখনই এইরকম হচ্ছে তখনই দেখা যাচ্ছে বাঁদরটি দল ছেড়ে গভীর জঙ্গলে ঢুকে যাচ্ছে। ঐ বাঁদরটির গলায় লাগানো একটা ছোট ট্রানমিটারের সাহায্যে তার গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। এবার দেখা গেছে ৫/৬ মাস পর বাঁদরটি আবার জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসছে একদম সুস্থ অবস্থায়। বাঁদরটির কিভাবে রোগমুক্তি ঘটছে—এটা নিয়েই গবেষণা চলছে। ও কি কোন ঔষধি ব্যবহার করেছে না এমন কিছু খাদ্য গ্রহণ করছে যাতে করে ওর শরীরে রেজিস্ট্যান্স আপনিই তৈরি হয়ে যাচ্ছে—এটা জানার খুব চেষ্টা চলছে। আর এটা জানতে পারলেই ঐ ধরণের ভয়ঙ্কর রোগের ঔষধ আবিষ্কার করা যাবে।