জিজ্ঞাসু : আপনি প্রায়ই বলেন – হিমালয় থেকে সমস্ত সভ্যতার জন্ম হয়েছে, কিন্তু আমরা যে পড়েছি—আর্যরা বাইরে থেকে ভারতে এসেছিল এবং ওরাই সভ্যতার জনক !
গুরুমহারাজ : কি করে যে আজও ইতিহাসে এসব কথা পড়ানো হয়, এটাই তো আশ্চর্য! আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর হতে চলল—স্বামী বিবেকানন্দ শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বলে এলেন যে, আর্য বলে কেউ কোন দিন ভারতের বাইরে থেকে আসেনি, তিনি নানান যুক্তিও দেখিয়েছিলেন। তৎকালীন বিখ্যাত পণ্ডিত ম্যাক্স মূলার বা রোমা রোলার মতো লোকেরা এসব যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন। এমনকি তার পর থেকেই বিভিন্ন ইউরোপীয় পণ্ডিতরা এ নিয়ে গবেষণা করেছে এবং তাদের বিভিন্ন মতামতও প্রকাশ করেছে। খোদ লণ্ডন মিউজিয়ামেই এমন অনেক তথ্য রয়েছে যা থেকে প্রমাণ করা যায় যে, ভারতীয় সভ্যতা পাঁচ হাজার বছর নয় আরও বহু প্রাচীন। ওখানে রক্ষিত ঋগ্বেদের যে প্রাচীন হাতে লেখা পুঁথি পাওয়া গেছে তা আনুমানিক কুড়ি হাজার বছরের পুরোনো বলে মনে করা হচ্ছে।
হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর সভ্যতাকে ৫/৬ হাজার বছরের পুরোনো বলা হচ্ছে অথচ এদের সঙ্গে তথাকথিত আর্যদের কোন সম্পর্ক ছিল না এও বলা হয়েছে। তাহলে আর্যরাই সভ্যতার জনক একথা ভুল। মধ্য-এশিয়ার খোটান, কাশগড় ইত্যাদি এলাকায় অরেলষ্টাইন যে সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পায়, তার থেকেও হরপ্পার সভ্যতা প্রাচীন। তাহলে ঐ যুক্তি খাটে না।
এছাড়া আরও কিছু পয়েণ্ট বলছি শোন। বিদেশেও বিভিন্ন স্থানে আমাকে এই একই জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় আমিই তাদের কতকগুলি জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দিতাম—সেগুলিই বলছি। দ্যাখো সুসভ্য জাতি আর্যরা মধ্য এশিয়ার কোন স্থান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সভ্যতার আলো নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল—তাদের একটা শাখা এসেছিল ভারতে আর একটা শাখা যায় ইউরোপে ইত্যাদি রয়েছে তোমাদের ইতিহাসে। এইবার আমার এক নম্বর জিজ্ঞাসা হল—যদি কোন এক বিশেষ স্থান থেকে সুসভ্য একটা জাতি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পরবর্তীকালে কি তাদের সাহিত্যে, শিল্পে, গানে একটা আভ্যন্তরীণ মিল থাকতো না ? হয়তো স্থান, কাল, পাত্রের ভিন্নতায় কিছুটা ভিন্ন হত কিন্তু কিছু মিল থেকেই যেত—কিন্তু তা হয়নি। দেখানো হয়েছে প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা, চীন সভ্যতা, ইরাক বা মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা এবং ভারতের সভ্যতা প্রায় সমসাময়িক কিন্তু কারও সঙ্গে কোন ধরণের মিলই পাওয়া যায়নি।
আমার দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা হল – কোন স্থান থেকে যখন একটা সুসভ্য জাতি চলে এসে অন্য স্থানে বাসা বাঁধে, তখন তারা কি তাদের পূর্বপুরুষের কথা, দেশের কথা একেবারে ভুলে যেতে পারে ? তাদের সাহিত্যে, শিল্পে, গানে, কাব্যে কোথাও না কোথাও কি সেই ফেলে আসা দেশের কথা, সেখানকার প্রকৃতি বা পরিবেশের কথা উল্লেখ থাকবে না ? এক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হয়েছে। বেদাদি পৃথিবীর প্রাচীনতম শাস্ত্র, এটা প্রমাণিত হয়েছে। ওসবে কিন্তু কোথাও মধ্য এশিয়ার কোন অঞ্চলের গুণগান করা নেই, অথবা নেই কোন নদী, কোন পর্বত বা ওখানকার শস্যের কথা। কিন্তু রয়েছে পঞ্চনদীর কথা যা ভারতেরই নদী, পঞ্চশস্যের কথা— যা ভারতেই জন্মে, পঞ্চ পর্বতের কথা, যাদের দেখা ভারতেই মেলে। এছাড়া পঞ্চগব্য, পঞ্চ সমিধের কথা যা রয়েছে, সে সবই একমাত্র ভারতেই পাওয়া যায়। এখানে হিমালয়ের গুণগান করা হয়েছে। বেদাদিতে ষড়ঋতুর যে বর্ণনা তা ভারতেই ভালভাবে অনুধাবন করা যায় – ষোড়শ মহাজনপদের যে উল্লেখ আছে তাও অখণ্ড ভারতবর্ষেই বিদ্যমান ছিল। এইভাবে বোঝা যায় যে, বেদ রচয়িতা ঋষিরা পুরুষাণুক্রমে এখানকারই লোক –বাইরে থেকে আসা লোক নয়।
স্বামী বিবেকানন্দের জীবনে একটা ঘটনা ঘটেছিল—উনি যখন গ্রীস থেকে ক্রীট দ্বীপের দিকে জাহাজে করে যাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ সমুদ্র থেকে কয়েকজন ঋষি প্রকট হয়ে ওনাকে বলেন যে, তাঁরা ভারতেরই প্রাচীন প্রাজ্ঞজন, দু’হাজার বছরেরও আগে তাঁরা সভ্যতার ও জ্ঞানের বাণী বহন করে নিয়ে এদেশে এসেছিলেন। তাঁরা আরও বললেন যে, খ্রীষ্টধর্ম আলাদা কোন ধর্মমত নয়, ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মেরই এক পরিবর্তিত রূপ। আজো রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্বামীজীর সবকথা ছাপা হয় নি। তা হলে মানুষ অনেক অজানা তথ্য জানতে পারতো। কিন্তু যে কোন প্রকার অসুবিধার কারণে হয়তো সেসব প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
আমি তোমাদের যেটা প্রায়ই বলি, জানবে সেটাই পৃথিবীগ্রহে মানব বিবর্তনের ইতিহাস। এখন জীব-বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে পেয়ে গেছে—আদিমাতা কালো রমণী। দ্যাখো ভারতের কালী মূর্তির কল্পনা কত হাজার বছর আগে হয়েছে, এসব নিয়ে চিন্তা করছে বিজ্ঞানীরা। ফলে ইউরোপ যে সভ্যতার জনক সেকথা আর খাটছে না, কারণ আদিমাতা কালো বা কালী। যাইহোক বিবর্তনের কথা যেটা বলছিলাম, পৃথিবীগ্রহ সহ সমস্ত গ্রহ, নক্ষত্র, নীহারিকা ইত্যাদি সেই এক থেকে সৃষ্ট। আদিতে ব্রহ্মাণ্ড বলতে বলা হচ্ছে অণ্ডাকার বা উপবৃত্তাকার একটা Static অথচ প্রচণ্ড dynamic field । এখন Black-whole বা white-whole এর যে ধারণা তা অপেক্ষাও condensed a particle 43 field যার কিছুটা নিয়েই হয়তো এক-একটা গ্রহ হয়ে যেতে পারে। প্রচণ্ড তাপ, চাপ এবং কম্পাঙ্কবিশিষ্ট ঐ field, Bang বা বিস্ফোট থেকে সৃষ্ট। বিস্ফোটের ফলে ঐ field বিভিন্ন ছোট ছোট field-এ বিস্তৃত হতে থাকে। একেই Theory of Expansion বলা হচ্ছে। আবার এই Expan sion যখন শেষ হবে তখনই Big Conch হবে অর্থাৎ Contrac tion theory-তে সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড আবার সেই পূর্বের অবস্থা লাভ করবে।
বর্তমান বিজ্ঞানীদের ব্রহ্মাণ্ডসৃষ্টি নিয়ে এই যে আধুনিক মতবাদ, এটা ভারতীয় বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লেখ ছিল। যেমন ‘আসীৎ বিন্দুস্ততো নাদঃ’—অর্থাৎ বিন্দু থেকে নাদ সৃষ্টি হল। ‘ওঁ’ এই প্রণব বা পরাবাক্ নাদ থেকেই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি এবং ‘ব্যোম’ এই ধ্বনিতেই লয়। আর এ দুয়ের মাঝে স্থিতি বা পালন। অর্থাৎ Theory of Creation, Theory of Sustaintion & Theory of Destruction, যাকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর বলা হয়। এখানে বিষ্ণু মানে বিস্তার, দ্যাখো বিস্তার বা Expansion যতদিন, ততদিনই তো জগৎ। বিষ্ণু পালনকর্তা বা স্থিতির দেবতা। বর্তমান বিজ্ঞানীরা এও মেনে নিয়েছেন যে, ওঁকারের যে অনাহত নাদ বা tune-এর কথা বলা হয়েছে, white whole থেকে সৃষ্টির সময় ও ম্ ম্ ম্ এই ধরণের নাদ হবার সম্ভাবনা। আবার Quantum theory-র যে packet of energy একসাথে দমকে দমকে নির্গত হয় তা ব্যোম ব্যোম্‌ শব্দেরই রূপ এবং এটা Black-whole-এ প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তের রূপ। Black whole-এ প্রবেশ করলেই পদার্থ বা শক্তি যেহেতু তার অস্তিত্ব হারায়, তাই ঋষিরা একে মহাপ্রলয়ের রূপক হিসাবে বা নটরাজের প্রলয়নৃত্য হিসাবে দেখিয়েছিলেন।
সে যাইহোক এইভাবে বিভিন্ন নীহারিকাপুঞ্জ, নক্ষত্রমণ্ডল সৃষ্টির সময়ই এই সৌরমণ্ডলও সৃষ্টি হয়েছিল—যার একটা গ্রহ পৃথিবী। ঐ অবস্থা থেকে প্লাজমিক বা গ্যাসীয় অবস্থায় আসতে হয়তো কয়েক লক্ষ বছর লেগেছিল। তারপর আরও শীতল হতে হতে তরল অবস্থা, তারপর কঠিন অবস্থায় আসতে আরও কত লক্ষ বছর লেগেছিল তার হিসাব বিজ্ঞানীরা রেখেছেন। এইভাবে পৃথিবী শীতল হতে শুরু করায় হিলিয়াম থেকে হাইড্রোজেন এবং বিভিন্ন গ্যাস পর পর আত্মপ্রকাশ করতে থাকে এবং নির্দিষ্ট তাপ, চাপ ও কম্পাঙ্কে পরস্পর বিক্রিয়া করতে থাকে। এইবার শুরু হল বৃষ্টিপাত। কয়েক হাজার বছর ধরে চলেছিল এই বৃষ্টিপাত, ফলে কঠিন অংশ পুনরায় জলে নিমজ্জিত হয়েছিল। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ যখন কঠিন হতে শুরু করেছিল, তখনই কোথাও উঁচু, কোথাও নীচু অংশ হিসাবেই হয়েছিল। পরে আবার বহুকাল জ্বলে নিমজ্জিত থাকায় বিভিন্ন অধঃক্ষেপ জমে জমে সেগুলোর উচ্চতা কোথাও কোথাও বেড়ে যায়। এরপর পরবর্তী কয়েক হাজার বছরে পৃথিবীর উপরিতলের তাপমাত্রা নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের ফলে বা জলের সংস্পর্শে যত কম হতে শুরু করল, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ সে তুলনায় শীতল হতে পারল না। এই তাপমাত্রার বৈষম্যের ফলে শুরু হল ভূমিকম্প ও স্থানে স্থানে আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ। এইভাবেই সেই ঘন ঘন প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর কোন কোন অংশ জলতল থেকে উপরে উঠে এল এবং কিছু অংশ প্রচণ্ড গভীরতা লাভ করল। এই সময় প্রথম যে ভূভাগ উপরে উঠে আসে তা ছিল বর্তমান হিমালয়ের অংশ। এছাড়া বাকী যে ভূমি জলমুক্ত হল, সেগুলো জলের বিভিন্ন অধঃক্ষিপ্ত পদার্থ ও মাটির মিশ্রণে উৎপন্ন কালো কাদার মতো দেখতে হল। সম্পূর্ণ জলমগ্ন অবস্থায় প্রথম যে প্রাণের উদ্ভব হয়েছিল— উদ্ভিজ্জ এককোষী শেওলারূপে বা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ারূপে এবার ঐ কাদায় তা কীট আকার লাভ করল অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিবর্তনের সাথে সাথে জৈব বিবর্তনও শুরু হল। এই যে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি কীট কাদা-মাটির সঙ্গে কিলবিল করত, এদেরই দেহের অবশেষ বর্তমানের খনিজতেলের একটা প্রধান উপাদান । আর এগুলিকে খাদ্যহিসাবে গ্রহণ করার জন্যই জলজ প্রাণী উভচররূপে বা পরবর্তীতে স্থলচররূপে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর জীব বিবর্তনের ইতিহাস তো সবার জানা ।
যাইহোক যা বলছিলাম, সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রথম জাগা স্থলভাগ হিমালয় অঞ্চল। অনেকে ভাবে এটা সমুদ্র থেকে উদ্ভূত। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। কালের নিয়মে এটা জলমগ্ন হয়েছিল আবার কালের নিয়মেই ওটা মাথা তুলেছিল। এরফলে স্বাভাবিকভাবেই ওখানে সমস্ত বিবর্তন আগে হয়েছে। এই নিয়ে বিতর্কের তো কোন অবকাশ নেই। তাছাড়া নৃবিজ্ঞানীরা অন্যস্থানের মাটির সাথে ওখানকার মাটি বা বিভিন্ন কিছু পরীক্ষা করলেই তো এর প্রমাণ পাবে। তবে ঐ যে বললাম সমস্ত স্থানের ভূমিই কিন্তু উৎপত্তিগতভাবে একই তত্ত্ব মেনে হয়েছে, তবে যতদিন গেছে, প্রকৃতির যত পরিবর্তন হয়েছে, ভূ-প্রকৃতির বা ভূমিরূপেরও পরিবর্তন হয়েছে। সমুদ্র সরে সরে গিয়ে নতুন নতুন ভূমিকে স্থলভাগ হিসাবে উপহার দিয়েছে। যে স্থলভাগগুলো প্রকৃতিতে অনেক পরে এসেছে, তাদের মাটি পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে, সেগুলো নবীন। সেখানে বসবাসকারী গাছপালা, জীবজন্তু ও মানুষকে Study করে বলে দেওয়া যাবে যে, এদের খুব প্রাচীন কোন Heritage নেই। নিশ্চয়ই এরা কিছুকাল আগে এখানে Migrate করেছে। কিন্তু সেই অর্থে আর্যদের কোনভাবেই প্রমাণ দিতে পারবে না যে, ওরা Migrate করেছে। শুধু মুখে বললে তো হবে না, প্রমাণ দেখাতে হবে। বিদেশী মুসলমানরা ও ইংরাজরা ভারতের ইতিহাস লিখল আর কিছু তৎকালীন ভারতীয় ঐতিহাসিক, যারা সম্পূর্ণরূপে ইংরেজদের উপর নির্ভরশীল ছিল তারা সেটাকে সমর্থন করল—ব্যস্ হয়ে গেল ভারতের ইতিহাস। কিন্তু যা সত্য নয় তা কেন মানবো ? আমি বিদেশে বহু ঐতিহাসিক, গবেষকদের সাথে কথা বলেছি, ওদের চ্যালেঞ্জ করে বলেছি – আপনারা প্রমাণ করে দিন যে, আর্যরা ভারতের বাইরে থেকে এসেছিল। উত্তরে ওরা দুর্বল দু-একটা মুখস্থ করা যুক্তি বলল, আমি খণ্ডন করে দিলাম। তারপর ঐ যে কথাগুলো বললাম, ওগুলো জিজ্ঞাসা করায় আমতা আমতা করতে লাগলো। আমি আর্য কথাটার সংস্কৃত ব্যাখ্যা দিয়ে বললাম—আর্য কোন জাতি নয়, আর্য হচ্ছে একটা Culture—একটা সংস্কৃতি। ‘কৃন্বন্তো বিশ্বমাৰ্যম’ কথাটিতে অন্যদের মেরে-ধরে বশ মানানোর কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলো গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দাও। সমস্ত বিশ্বকে আর্যীকরণ কর। ‘আর্য’ কথাটার আর একটা মানে হচ্ছে—জ্ঞান-আলো বা জ্যোতিকে সামনে রেখে চলা অর্থাৎ একটা সুসভ্য জীবনচর্যা। যারা সত্য, জ্ঞান ও প্রেমকে আদর্শ করে জীবনপথে এগিয়ে চলে তারাই আর্য। রামায়ণ-মহাভারতে একজন আর একজনকে ‘আর্য’ বা ‘আর্যপুত্র’ বলে সম্বোধন করছে। রমণী হলে বলছে ‘আর্যে’ বা ‘আর্যা’। তাহলে আর্য কি করে একটা বিশেষ জাতি হয় ? একটা বিশেষ সভ্যতাবিশিষ্ট বা বিশেষ সংস্কৃতিসম্পন্ন বা বিশেষ জীবনচর্যায় রত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের আর্য বলা হত।
ফলে এটা কখনই সত্য নয় যে, আর্যরা ভারতের বাইরে থেকে এসেছিল। আমিও নিজেকে তোদের ঐ ছোয়া-ছুঁয়িসর্বস্ব সংকীর্ণমনা ‘হিদু’ ভাবতে পারি না। ভাবলে মনে হয় আমি কত দীন বা হীন। কিন্তু আমি যখন নিজেকে আর্য ভাবি—সেই শাশ্বত সনাতন ধর্মসন্তান ভাবি তখনই দেখি আমি কত বীর—আমার কত উঁচু মাথা। যে মাথা গোটা পৃথিবীকে আলো দেখিয়েছে, সভ্যতা দিয়েছে, সংস্কৃতি দিয়েছে, জীবনচর্যা দিয়েছে। আমার গর্ব হয় এই ভেবে যে, আমি সেই সনাতন আর্য ঋষির সন্তান। হিমালয়কে কেন্দ্র করে প্রথম যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, কালক্রমে সেই সভ্যতাই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে— এটাই সত্য জানবে। আর আজ নয় কাল এ সত্য উদ্ঘাটিত হবেই।