জিজ্ঞাসু : গুরুমহারাজ ! এতক্ষণ যা আলোচনা হ’ল, তার কতটা মস্তিষ্ক নিতে পারবে তা জানিনা তবে এই সব তথ্য যে পরবর্তীকালে মানুষকে ঠিক দিশা দেবে তা নিশ্চিত। আচ্ছা আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম যে, হিমালয়ে যে ব্যক্তিকে সাপে কামড়েছিল এবং তার ফলে ওর আয়ু বেড়ে গেল বা দেহের ক্ষয়রোধ হবার শক্তি জন্মাল—ঐ সাপটা কি ধরণের সাপ ছিল ?

গুরুমহারাজ : দেখো, পৃথিবীতে হাজার রকমের সাপ রয়েছে। তোমরা স্থলভাগে যে সব সাপ দেখো, জলভাগ অর্থাৎ নদী-সমুদ্র ইত্যাদিতেও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বাস করে। এবার সাপকে শারীরিকভাবে দুভাগে ভাগ করতে পারো—ফণাহীন আর ফণাধর। গুণগত ভাবেও দুভাগে ভাগ করতে পারো—বিষযুক্ত এবং বিষহীন। তবে এটা জেনে রাখবে যে, পৃথিবীতে কোন জীব-জন্তুই বিষহীন নয়, কারণ একজনের বিষ হয়তো আর একজনের ক্ষতি করছে না কিন্তু অন্য আর একটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

এবার ফণাহীন সাপেদের মধ্যে অনেক সাপই বিষযুক্ত, ফণাধররা তো বটেই। র‍্যাটল স্নেক্ বলে এক ধরণের ফণাহীন সাপ আছে, যারা বিষধর। ওরা যখন যায় তখন ঝুমঝুম্ করে শব্দ হয়। ওরা বিষকে ছুঁড়ে দিতে পারে, আর সঠিক লক্ষ্যে তা পাঠাতেও পারে। সাধারণত চোখে বিষ ছুঁড়ে দিয়ে ওরা শিকারীকে অন্ধ করে দেয় এবং পরে তাকে ধরে। এই বিষের Immediate Reamedy হল নারীর স্তনদুগ্ধ। যাইহোক আমরা যাকে চন্দ্রবোড়া বলি এগুলো খুবই বিষধর। বহুদিন পর্যন্ত এদের বিষ শরীরে থেকে যায়, এই বিষ সাধারণত শরীরে গিয়ে কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। বোড়া প্রজাতির বহু ধরণের সাপ রয়েছে। এদের কারও বিষ কম, কারও বেশী কিন্তু প্রায় সবাই বিষধর। লাউডগা, ঢেঁাড়া, ঢ্যামনা, মেটুলি এসব সাপের বিষ নেই।

আমার ছোট বেলায় একবার একটা ঘটনা ঘটেছিল। সজনে ডাঁটার গাছে উঠেছি ডাঁটা পাড়ার জন্য, আর ওখানে ডাঁটার সঙ্গে একটা লাউডগা সাপও ঝুলছিল—কীট-পতঙ্গ খাবার জন্য। আমি অতটা বুঝতে পারিনি, সবুজ রঙের সরু শরীর, ফলে সজনে ডাঁটার মতোই ঝুলছিল। হঠাৎ চোখের সামনে সেটা নড়ে ওঠায় বিশেষ জ্ঞানেন্দ্রিয় ক্রিয়াশীল হ’ল এবং আমার চোখ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেল। এটা সবার ক্ষেত্রেই হয় দেখবে, বিজ্ঞানের ভাষায় এটা Reflex action। শরীরের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনীয় অঙ্গ রক্ষা করার জন্য এই ধরণের সতর্কতামূলক নানান ব্যবস্থা রয়েছে। যাইহোক আমার চোখের ঢাকনা পড়ে যেতেই সাপটা চোখের ঐ চামড়াটিকেই খপ করে ধরে ফেলল এবং টানতে লাগল, কারণ ওর শরীরের বেশীর ভাগ অঙ্গই তো সজনে গাছে জড়ানো। ফলে প্রচণ্ড জোরে টানছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মনস্থির করে নিয়ে হাতের ডাঁটাগুলো ফেলে দিয়ে দুটো হাতকে প্রথমে free করে নিলাম। তারপর একহাত দিয়ে আমার চোখের চামড়া টানা সাপটার চোয়ালকে চেপে ধরতেই মুখটা হাঁ হয় গেল, আমার চোখটাও ছাড় পেল আর অন্য হাত দিয়ে ওর শরীরের শেষ দিকটা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম নীচে ৷

দ্যাখো এইরকম ঘটনা আকস্মিক ঘটলে সাধারণত মানুষ ঘাবড়ে গিয়ে গাছ থেকেই পড়ে যায়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। যাইহোক ছোটবেলায় মায়েরা বলতো – লাউডগা সাপে চোখ উপড়ে নেয়—কথাটা প্রায় সত্যি। হয় কি—চোখে আলো পড়ে যে চক্‌চক্‌ করে, লাউডগা সাপ ঐটাকে follow করেই কামড়ায়, আর সরু সরু ধারালো দাঁত বসিয়ে চোখের রেটিনাকে নষ্ট করে দেয়। এইজন্যই মানুষের ঐরূপ ধারণা আছে ; তবে দেখলাম লাউডগা সাপের বিষ নেই কারণ আমার চোখের উপরের চামড়ায় কামড়ালো, ক্ষতও হল কিন্তু বিষ হয়নি।