জিজ্ঞাসু : শাঁখামুটি সাপ খুবই বড় হয়, ওগুলো কি বিষধর ?

গুরুমহারাজ : শাঁখামুটি সাপ বা রাজসাপ বিষধর। কিন্তু ওরা এত ঠাণ্ডা যে, ওরা সাধারণত কাউকে কামড়ায় না। ওরা বিভিন্ন সাপকে খায় আর গৃহস্থবাড়ীর কাছাকাছিই থাকে। মানুষও এই সাপকে মারে না ঐ সমস্ত কারণেই। তবে ওদের দুটো মুখ আছে বলে যে অনেকের ধারণা—সেটা ঠিক নয়। আর সবচাইতে বড় সাপ অজগর। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন প্রাচীনকালে এমন বড় সরীসৃপ ছিল যারা গোটা হাতিকে গিলে নিতে পারতো। তবে এখনও অজগরের বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন দেশে রয়েছে, এদেশেও রয়েছে। তবে আসাম, মণিপুর, নাগাল্যাণ্ড ইত্যাদি অঞ্চলে বেশ বড় বড় প্রজাতির অজগর সাপ রয়েছে। ওরা গাছে নিজেদেরকে জড়িয়ে রেখে কোন জলাশয় বা পশুদের যাতায়াতের পথে শুধু মুখটা বের করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ পরে বসে থাকে। তারপর হরিণ বা ছোট বাছুর, কি মানুষ যদি ওদের নাগালের মধ্যে আসে তো আচমকা হাঁ করে তাকে হয় একেবারে গিলে ফেলে অথবা একটু একটু করে গিলে নেয়। আমি একবার একটা ঘটনা ঐ অঞ্চলে দেখেছিলাম। ঘটনাটা বলছি : বনবিভাগের কর্মীরা সাধারণ মজুরদের দিয়ে অনেক কাজ করায়। যেমন কোন গাছ মরে গেলে সেটা কেটে পরিষ্কার করে বা নতুন গাছ লাগায়, আগাছা পরিষ্কার করে ইত্যাদি। সেইরকম একটা দলছুট মজুর একটা অপেক্ষমাণ অজগরের সামনে পড়ে। শিকার ধরার সময় অজগর এমন জোরে বাতাস টানে যে, শিকার সেই টানে পড়লে অসহায়ের মতো অজগরের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যাইহোক ওখানে ঐ রকমই হয়েছিল। লোকটির পাদুটো অজগরের মুখে, বাকী শরীরটা বাইরে ছটফট করছে আর ও চিৎকার করছে। চিৎকারটা ঠিক স্পষ্ট নয়, হাউমাউ করে একটা ভয়ার্ত আওয়াজ বেরোচ্ছিল তার মুখ দিয়ে। বনকর্মীরা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে টানাটানি করেও অজগরের হাত থেকে লোকটিকে ছাড়াতে পারলো না। পারবে কেন—গাছে প্যাঁচানো অজগরের ক্ষমতা কত! বন্দুক চালাতে পারছে না, কারণ অজগর মারা বেআইনি। তাই একজন বনকর্মী লাঠি দিয়ে কয়েক ঘা লাগাল, তাতে কিছুই হল না। তখন একজন তাড়াতাড়ি একটা লোহার দণ্ড দিয়ে চোখে আঘাত করতেই হক্ করে মানুষটাকে উগড়ে দিয়ে মাথাটা দ্রুত প্রায় ১০/১২ হাত দূরে সরিয়ে নিয়ে পালাতে শুরু করল। আমরা লোকটাকে দেখে অবাক ! কোমর পর্যন্ত সাপটার মুখে ওর শরীরটা ঢুকেছিল, তা ঐটুকু সময়ের মধ্যেই লোকটির দুটো পায়ে শুধু হাড় ছাড়া আর কোন মাংসই প্রায় নেই। তাহলে অজগরের পাচকগ্রন্থি কত ক্রিয়াশীল ! যাইহোক লোকটিকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হল।

উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যোমলিং বলে একটা জায়গা রয়েছে। শোনা যায়—আজাদহিন্দ বাহিনী যখন বাইরে থেকে ভারতে ঢুকছিল, তখন ওখানে ছাউনি করে। ঐ সমস্ত অঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড়ি খরস্রোতা নদী রয়েছে অনেক। এইরকম একটা নদীতে কাঠ পুঁতে পুঁতে সেতু বানানোর কাজ করছিল আজাদহিন্দ বাহিনী। কিন্তু ঘটনা ঘটেছিল কি, সারাদিন যেটুকু কাজ হয়, রাতে তা কে বা কারা যেন ভেঙে দিয়ে চলে যায়। এইভাবে দু’-চারদিন হবার পর সুভাষচন্দ্র নিজে ব্যাপারটা তদারকি করার ভার নেন। গভীর রাত্রে উনি দেখলেন এক-একটা বিশালকায় অজগর জলে ভেসে এসে ঐ কাঠপোঁতা জায়গায় আটকে যাচ্ছে, আর শরীরের চাপে পোঁতা খুঁটিগুলো উপড়ে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এইরকম বেশ কয়েকটা বিশাল বিশাল অজগর প্রতিদিন ঐ একই কর্ম করে চলেছে। অতবড় সাপকে যায়—তখন Bomb-drop করে মারতে হল। কি করে মারা