জিজ্ঞাসু : আপনার ছোটবেলার আরো কিছু ঘটনা বলুন —শুনে কৃতার্থ হই।
গুরুমহারাজ : দ্যাখো, ছোটবেলার অনেক ঘটনার কথাই আমার গর্ভধারিণী জানেন। কিন্তু এমনই মজা, মহামায়ার চক্রে মা সেসব কথা ভুলে গেছেন বা পরে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। আমার জলে ডোবার ঘটনাটা সবাই জানে—জলে যে জলকুমারী থাকেন—তিনি আমাকে ধরে রেখেছিলেন—এ রকম আর কি ?
ছোটবেলায় আমার শরীরটা নাদুস-নুদুস ছিল। তখনকার দড়ি দেওয়া প্যান্ট, প্রায়ই দড়ি ছিঁড়ে প্যান্ট খুলে যেতো ছেলেদের, কোনরকমে জড়িয়ে পরা হত। আমার যখন ৬/৭ বছর বয়স তখন বাবা প্রথম বোতাম লাগানো ইংলিশ প্যান্ট কিনে দিয়েছিলেন। তখন আমাদের কি আনন্দ ! যাইহোক্, ছোটবেলায় আমি কিন্তু একটু হাবাগোবা ছিলাম। সব কথা শুনতে পেতাম না—সবকিছু দেখতাম ও না ভালো করে। এমনকি সবার কথা বুঝতেও পারতাম না ঠিক। পাড়ার ছেলেরা আমাকে ‘ভোম্বল’, ‘কালা’ ইত্যাদি নামে ডাকতো। তারা আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিতো। যেমন ধরো কোন কুলগাছে কুল পাড়তে হবে, আমাকে একটা ঢিল ধরিয়ে দিয়ে বলতো, ‘মার গাছে ঢিলটা’, আমি ছুঁড়ে দিতাম। কুল পড়তো, তারা কুড়িয়ে নিয়ে দে ছুট্। বাড়ীর বুড়িটা বেরিয়ে এসে আমাকে গালাগালি দিতো বা বাড়ীতে মাকে complain করতো। আমি প্রতিবাদ করতে পারতাম না বা নিজের হয়ে সাফাই গাইতাম না কখনও। কুল পাহারা দেবার সঙ্গে বুড়ির সম্পর্ক আছে। দেখবে, যে কোন গ্রামে কুলগাছ পাহারা দেয় কোন না কোন বুড়ি। আর ছেলের দল তার গাছেই বেশী ঢিল মারে। বুড়ি যে গালাগাল দেয় সেটা ছেলেদের আরও ভালো লাগে আর জানে তো বুড়ি আর যাই করুক মারবে না বা ধরতে পারবে না। তবে ওরা আমাকে আরও অন্য কাজেও লাগাতো, যেমন—কোন পাঁচিল থেকে হয়তো আমগাছের ডাল নড়ালে আম পড়বে, ওরা সেই পাঁচিলে আমাকে তুলে দিতো, দিয়ে বলতো ‘ডালটা নড়া’, ওদের কথা না শুনলে মারবে, তাই আমি নড়িয়ে দিতাম ডাল আর আম পড়তো, ওরা কুড়িয়ে নিয়ে পালাতো। আমি তখন পাঁচিলে। ফলে ঐ বাড়ীর লোক এসে আমাকে ধরে ফেলতো। ফলে হয় শাস্তি নাহয় বাড়ীতে complain। মাও এসবের জন্য বকাবকি করতেন —শাস্তিও দিতেন। বাবা থাকলে অবশ্য শাস্তি রদ হতো।