এই পরমহংস কিন্তু প্রথমে রাজদরবারে আসতেই চাননি। মহামন্ত্রী ওনাকে রাজ্যের মানুষের দূরবস্থার কথা বিস্তারিত জানালে __তারপর উনি আসতে রাজি হন। দেখেছ! পরমহংস অবস্থাতেও কিন্তু এনাদের ‘তাল’ কাটেনা!
মানুষের প্রয়োজন, রাজ্যের প্রয়োজন __এইসব কথা যেই শুনেছে অমনি সেখানে গিয়ে হাজির! যে স্থানে তিনি বসবাস করেন _সেই স্থানের প্রতি তো একটা কর্তব্য তাঁদের রয়েছে!
যাই হোক উনি সব কথা শুনে রাজার কাছ থেকে সাতদিন সময় চেয়ে নিলেন এবং রাজাকে বললেন যে _এই সাতদিন রাজাকে ছদ্মবেশ ধারণ করে তার শিষ্যের ন্যায় তার সাথে থাকতে হবে এবং উনি যখন যেখানে নিয়ে যাবেন _সেখানেই যেতে হবে, তবেই রাজার সমস্ত জিজ্ঞাসার অবসান হবে। রাজা তার অন্তরের জ্বালা অর্থাৎ তার জিজ্ঞাসার উত্তর না পাওয়ার যন্ত্রণা মিটানোর জন্যে এতই উদ্বিগ্ন ছিল যে পাগল পরমহংস যে শর্ত দিল _সেই শর্তেই রাজি হয়ে গেল। ফলে সেইদিনই রাজামশাই ঐ পাগলের শিষ্য সেজে বাগানের দরজা দিয়ে(গোপন পথ ধরে) বাইরে বেরিয়ে গেল। এবার শুরু হোল পথ হাঁটা!!
সন্ন্যাসী আগে আগে_ আর রাজা পিছনে! সন্ন্যাসী চলেছে তো চলেছেই হাঁটার বিরাম নাই। একদিন যায়, দুদিন যায় __করতে করতে পাঁচদিন কেটে গেল। সন্ন্যাসী অক্লান্ত থাকলেও রাজামশাই আর পারছে না! সন্ন্যাসী যা দেয় তাই একমুঠো খাওয়া আর রাতে একটুখানি ঘুম!! রাজার খুবই কষ্ট হচ্ছে কিন্তু পাগলের ভ্রুক্ষেপ নাই__সে হেঁটেই যাচ্ছে! বন-জঙ্গল, পাহাড়ী চড়াই-উৎড়াই রাস্তা _কোনকিছুই তাকে নিরস্ত করতে পারছে না। শুধু রাজামশাই এর জন্য মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম!
অবশেষে ষষ্ঠদিনে তারা নিজেদের রাজ্যের সীমানার শেষ প্রান্তে অবস্থিত জঙ্গল পেড়িয়ে পাশের রাজ্যের সীমানায় পৌঁছে গেল।
ছদ্মবেশী রাজা কিন্তু মাঝেমাঝেই পাগলকে মনে পাড়িয়ে দিত ‘দু দিন তো কেটে গেল – আর মাত্র পাঁচ দিন!’ ‘তিন দিন কেটে গেল – আর মাত্র চার দিন!’ সেদিনও মনে পাড়াল ‘কি হোল! মনে আছে তো _আর মাত্র এক দিন! এর মধ্যে যদি তুমি আমার জিজ্ঞাসার মীমাংসা না করতে পারো _তাহলেই তুমি শেষ!’ পাগল হাসল ।
আবার হাঁটা শুরু। ওরা পৌঁছে গেল রাজ্যের রাজধানীতে! রাজধানীর জাঁকজমকপূর্ন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওরা দেখতে পেল যে একজায়গায় বেশ ভিড় জমেছে! পাগল রাজাকে বলল_’ চলতো দেখি কি হচ্ছে ওখানে!’
দেখা গেল _সেখানে একটা বড় মাঠে ঐ রাজ্যের রাজকন্যার স্বয়ংবর সভার আয়োজন করা হয়েছে। ঐ রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যার স্বয়ংবরে বিভিন্ন দেশের রাজকুমার বা রাজারা উপস্থিত হয়েছে। রাজকন্যা যাকে নির্বাচিত করবে – সেই ওই রাজ্যের ভাবী রাজাও হবে। যাকে বলে রাজ্য এবং রাজকন্যা একসাথে লাভ !!বিয়ে করতে আসা রাজা এবং রাজকুমাররা মাঠের চারিদিকে নিজ নিজ আসনে বসে আছে __আর রাজকন্যা সখীদের নিয়ে ‘বরমালা’ হাতে সকলের কাছে কাছে যাচ্ছে! রাজকর্মচারীরা প্রত্যেকের বংশপরিচয়, শৌর্যবীর্যের গল্প শোনাচ্ছে _রাজকন্যার পছন্দ হচ্ছে না বলে একজন থেকে অন্যজনের কাছে আগিয়ে আগিয়ে যাচ্ছে!
সেইসময় একজন তরুণ সন্ন্যাসী ঐ পথ ধরেই যাচ্ছিল! অপাপবিদ্ধ, লাবন্যমন্ডিত, সহজতা ও সারল্যমাখা মুখখানি নিয়ে কৌতুহলবশত সেই সন্ন্যাসী যেই না ভিড় ঠেলে সামনে মুখটা বাড়িয়েছে- আর ঠিক তখনই দৈবাৎক্রমে রাজকন্যাও সেখানে এসে হাজির! রাজপুরুষদের জটিলতা আর কুটিলতা পূর্ণ মুখগুলির তুলনায় ঐ তরুন সন্ন্যাসীর সহজ-সরল চাউনি, যোগলব্ধ লাবন্যমন্ডিত মুখমন্ডলের দিকে একবার চকিতে চোখ পড়তেই মুগ্ধ রাজকন্যা হাতের বরমালাটি ওই সন্ন্যাসীর বাড়ানো গলায় পড়িয়ে দিল!
ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমটায় ঐ সন্ন্যাসী একটু ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ মালা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জঙ্গলের দিকে _’মার ছুট্’!!
এদিকে রাজকুমারীও ‘আমার স্বামী’, ‘আমার স্বামী’ __ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে ঐ সন্ন্যাসীর পিছু পিছু ছুটে যেতে চাইছে __কিন্তু জনতা রাজকন্যাকে হাতের কাছে পেয়ে ছাড়বে কেন!! তারা কেউ তাকে ভালো করে দেখতে চাইছে কেউবা একটু স্পর্শ করতে চাইছে! ফলে রাজকুমারী ভিড়ের ব্যারিকেড ভেঙে বাইরে আসতেই বেশ কিছুটা দেরী হয়ে গেল। আর সেই ফাঁকে তরুন সন্ন্যাসী জঙ্গলের দিকে হাওয়া!!
সে এক দৃশ্য!! রাজকুমারী আগে আগে “স্বামী”-“স্বামী” বলে ছুটছে, তার পিছন পিছন মন্ত্রী, সেনাপতি, সেপাই-সান্ত্রীরা ছুটছে, তাদের পিছনে কিছু কৌতুহলী জনতাও ছুটছে!!
পাগলটি এবার রাজাকে বলল _”রাজামশাই! চলুন, আমরাও যাই, দেখি – ব্যাপারটা কতদূর কি গড়ায়!”(ক্রমশঃ)
মানুষের প্রয়োজন, রাজ্যের প্রয়োজন __এইসব কথা যেই শুনেছে অমনি সেখানে গিয়ে হাজির! যে স্থানে তিনি বসবাস করেন _সেই স্থানের প্রতি তো একটা কর্তব্য তাঁদের রয়েছে!
যাই হোক উনি সব কথা শুনে রাজার কাছ থেকে সাতদিন সময় চেয়ে নিলেন এবং রাজাকে বললেন যে _এই সাতদিন রাজাকে ছদ্মবেশ ধারণ করে তার শিষ্যের ন্যায় তার সাথে থাকতে হবে এবং উনি যখন যেখানে নিয়ে যাবেন _সেখানেই যেতে হবে, তবেই রাজার সমস্ত জিজ্ঞাসার অবসান হবে। রাজা তার অন্তরের জ্বালা অর্থাৎ তার জিজ্ঞাসার উত্তর না পাওয়ার যন্ত্রণা মিটানোর জন্যে এতই উদ্বিগ্ন ছিল যে পাগল পরমহংস যে শর্ত দিল _সেই শর্তেই রাজি হয়ে গেল। ফলে সেইদিনই রাজামশাই ঐ পাগলের শিষ্য সেজে বাগানের দরজা দিয়ে(গোপন পথ ধরে) বাইরে বেরিয়ে গেল। এবার শুরু হোল পথ হাঁটা!!
সন্ন্যাসী আগে আগে_ আর রাজা পিছনে! সন্ন্যাসী চলেছে তো চলেছেই হাঁটার বিরাম নাই। একদিন যায়, দুদিন যায় __করতে করতে পাঁচদিন কেটে গেল। সন্ন্যাসী অক্লান্ত থাকলেও রাজামশাই আর পারছে না! সন্ন্যাসী যা দেয় তাই একমুঠো খাওয়া আর রাতে একটুখানি ঘুম!! রাজার খুবই কষ্ট হচ্ছে কিন্তু পাগলের ভ্রুক্ষেপ নাই__সে হেঁটেই যাচ্ছে! বন-জঙ্গল, পাহাড়ী চড়াই-উৎড়াই রাস্তা _কোনকিছুই তাকে নিরস্ত করতে পারছে না। শুধু রাজামশাই এর জন্য মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম!
অবশেষে ষষ্ঠদিনে তারা নিজেদের রাজ্যের সীমানার শেষ প্রান্তে অবস্থিত জঙ্গল পেড়িয়ে পাশের রাজ্যের সীমানায় পৌঁছে গেল।
ছদ্মবেশী রাজা কিন্তু মাঝেমাঝেই পাগলকে মনে পাড়িয়ে দিত ‘দু দিন তো কেটে গেল – আর মাত্র পাঁচ দিন!’ ‘তিন দিন কেটে গেল – আর মাত্র চার দিন!’ সেদিনও মনে পাড়াল ‘কি হোল! মনে আছে তো _আর মাত্র এক দিন! এর মধ্যে যদি তুমি আমার জিজ্ঞাসার মীমাংসা না করতে পারো _তাহলেই তুমি শেষ!’ পাগল হাসল ।
আবার হাঁটা শুরু। ওরা পৌঁছে গেল রাজ্যের রাজধানীতে! রাজধানীর জাঁকজমকপূর্ন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ওরা দেখতে পেল যে একজায়গায় বেশ ভিড় জমেছে! পাগল রাজাকে বলল_’ চলতো দেখি কি হচ্ছে ওখানে!’
দেখা গেল _সেখানে একটা বড় মাঠে ঐ রাজ্যের রাজকন্যার স্বয়ংবর সভার আয়োজন করা হয়েছে। ঐ রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যার স্বয়ংবরে বিভিন্ন দেশের রাজকুমার বা রাজারা উপস্থিত হয়েছে। রাজকন্যা যাকে নির্বাচিত করবে – সেই ওই রাজ্যের ভাবী রাজাও হবে। যাকে বলে রাজ্য এবং রাজকন্যা একসাথে লাভ !!বিয়ে করতে আসা রাজা এবং রাজকুমাররা মাঠের চারিদিকে নিজ নিজ আসনে বসে আছে __আর রাজকন্যা সখীদের নিয়ে ‘বরমালা’ হাতে সকলের কাছে কাছে যাচ্ছে! রাজকর্মচারীরা প্রত্যেকের বংশপরিচয়, শৌর্যবীর্যের গল্প শোনাচ্ছে _রাজকন্যার পছন্দ হচ্ছে না বলে একজন থেকে অন্যজনের কাছে আগিয়ে আগিয়ে যাচ্ছে!
সেইসময় একজন তরুণ সন্ন্যাসী ঐ পথ ধরেই যাচ্ছিল! অপাপবিদ্ধ, লাবন্যমন্ডিত, সহজতা ও সারল্যমাখা মুখখানি নিয়ে কৌতুহলবশত সেই সন্ন্যাসী যেই না ভিড় ঠেলে সামনে মুখটা বাড়িয়েছে- আর ঠিক তখনই দৈবাৎক্রমে রাজকন্যাও সেখানে এসে হাজির! রাজপুরুষদের জটিলতা আর কুটিলতা পূর্ণ মুখগুলির তুলনায় ঐ তরুন সন্ন্যাসীর সহজ-সরল চাউনি, যোগলব্ধ লাবন্যমন্ডিত মুখমন্ডলের দিকে একবার চকিতে চোখ পড়তেই মুগ্ধ রাজকন্যা হাতের বরমালাটি ওই সন্ন্যাসীর বাড়ানো গলায় পড়িয়ে দিল!
ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমটায় ঐ সন্ন্যাসী একটু ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ মালা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জঙ্গলের দিকে _’মার ছুট্’!!
এদিকে রাজকুমারীও ‘আমার স্বামী’, ‘আমার স্বামী’ __ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে ঐ সন্ন্যাসীর পিছু পিছু ছুটে যেতে চাইছে __কিন্তু জনতা রাজকন্যাকে হাতের কাছে পেয়ে ছাড়বে কেন!! তারা কেউ তাকে ভালো করে দেখতে চাইছে কেউবা একটু স্পর্শ করতে চাইছে! ফলে রাজকুমারী ভিড়ের ব্যারিকেড ভেঙে বাইরে আসতেই বেশ কিছুটা দেরী হয়ে গেল। আর সেই ফাঁকে তরুন সন্ন্যাসী জঙ্গলের দিকে হাওয়া!!
সে এক দৃশ্য!! রাজকুমারী আগে আগে “স্বামী”-“স্বামী” বলে ছুটছে, তার পিছন পিছন মন্ত্রী, সেনাপতি, সেপাই-সান্ত্রীরা ছুটছে, তাদের পিছনে কিছু কৌতুহলী জনতাও ছুটছে!!
পাগলটি এবার রাজাকে বলল _”রাজামশাই! চলুন, আমরাও যাই, দেখি – ব্যাপারটা কতদূর কি গড়ায়!”(ক্রমশঃ)