জিজ্ঞাসু:— “প্রযত্নশৈথিল্য” ও “অনন্তসমাপত্তি মনঃ” কথা দুটি আপনার কাছেই শুনেছিলাম। যদি একটু বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেন!!
গুরু মহারাজ:—- “প্রযত্নশৈথিল্য” অর্জন করতে হোলে আগে ‘আসন’ এবং ‘প্রাণায়াম’ সিদ্ধি করতে হয় ! ‘আসন’ করা মানে সার্কাস করা নয় ! এখন তো স্টেজ show কোরে বিভিন্ন আসন প্রদর্শন করা হয়, যেমনটা সার্কাসে ছেলেমেয়েরা করে ! ‘আসন’ মানে দেহের স্বাচ্ছন্দ্য, relaxation of body ! মেরুদন্ড খাড়া থাকে এমন যে কোনো আসনে (পদ্মাসন, সুখাসন, গোমুখাসন, সিদ্ধাসন ইত্যাদি) বসে শরীরের পেশীগুলিকে শিথিল করতে হয় । এতে শরীরের পেশীগুলি শক্তি লাভ করে । দেখবে, হাঁটাহাঁটি,দৌড়াদৌড়ি বা অন্যান্য ভাবে পরিশ্রম করার পর শরীরে মেসেজ করালে_ শরীরের পেশির যন্ত্রনা লাঘব হয় । এটা হয় শুধুমাত্র ওই মেসেজের ফলে পেশীগুলি শিথিল হয়ে যায় বলে ! সুতরাং ‘আসন’ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হোলো শরীরের পেশি গুলিকে শিথিল করা! এইজন্যই আর্যঋষিরা নামকরণ করেছেন “প্রযত্নশৈথিল্য”! ঠিক ঠিক এই অবস্থা প্রাপ্ত হলে প্রকৃতির শক্তিও খুবই সহজে ঐ সাধকের শরীরে সঞ্চারিত হয় । এই অবস্থায় শরীর সম্পূর্ণ rest- থাকে !
এরপরে সাধনার ক্রমে আসে “অনন্ত সমাপত্তি মনঃ” অর্থাৎ মনকে অনন্তে নিক্ষেপ করা! বিশালতার স্পর্শেই মন উদার হয়। এই জন্যই বলা হয় _”অনন্ত সমাপত্তি মনঃ”, relaxation of mind ! এই সাধনায় সাধককে প্রথমে প্রাণায়াম সিদ্ধ হোতে হয়। এছাড়া প্রকৃতিতে যেগুলি বিশাল __তাদের সান্নিধ্যে, তাদের সম্মুখে আসতে হয় ! বিশাল পর্বত, অনন্ত সমুদ্রের জলরাশি, দিগন্তবিস্তৃত মহাকাশ _এগুলির সামনে আসতে হয় ! পর্বতের গাম্ভীর্য, আকাশের উন্মুক্ততা ও উদারতা, সমুদ্রের বিশালতার সাধন যেন রূপের মাধ্যমে অরূপের সন্ধান পাবার সাধন! সৌভাগ্যক্রমে কোনো সাধক যদি কোনো মহামানবের সাক্ষাৎ পায় তাহলে সেই বিরাট মানুষটির কাছেই সে সমস্ত রকম বিশালতার স্বাদ পেয়ে যায়। সে সৌভাগ্য তো সবার হয় না,বা সবসময় হয় না_কখনো কখনো হয়,যখন সেই অরূপ রূপ পরিগ্রহ করে ধরণীর ধূলায় মূর্ত হ’ন!!
তবে, রূপ থেকে অরূপের সাধন কেমন জানো _ যেন সচিদানন্দসাগরে ঘটবৎ বা মীনবৎ অথবা সচ্চিদানন্দ অনন্ত আকাশে যেন পক্ষীবৎ হয়ে যাওয়া!!
ধ্যানের মধ্যে সাধকের ভাবনায় তখন এটাই থাকে যে, দেহরূপ ঘটকে সচ্চিদানন্দ সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার বাইরে, ভিতরে, উপরে, নিচে সর্বত্রই সচ্চিদানন্দময় অথবা সচ্চিদানন্দময় অনন্ত আকাশে পক্ষীর ন্যায় ডানা মেলে উড়ে যাওয়া ! আরো একটা পদ্ধতি রয়েছে যেখানে সাধকের ভাবনায় থাকে__ সচিদানন্দ সাগরে ডুব দিয়ে মীনের ন্যায় নিশ্চিন্তে খেলা করে বেড়ানো !
তবে এখানে একটা কথা রয়েছে ! কথাটা হোলো_ এই অবস্থাতেও “imagination”_ ব্যাপারটা রয়েছে ! কিন্তু এই যে সাধনপদ্ধতি গুলির কথা বলা হোলো_ এই সাধনার গভীর থেকে গভীরতম প্রদেশে একবার প্রবেশ করে গেলে, আর কোন imagination থাকেনা ! তখন শুধুই reality ! এই অবস্থাই সাধকের যথার্থ ধ্যান অবস্থা ! তখন শুধুই অনুসন্ধান বা খোঁজ !খোঁজ_ খোঁজ আর খোঁজ ! quest for truth !
এটা কেমন জানো ___ মনে করো তোমাকে একটা অন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলা হলো_ “এই ঘরে কিছু একটা রয়েছে, সেটা খুঁজে বের করো !” এবার শুরু হলো অন্বেষণ ! এই অবস্থায় মনে কোনো বিষয় থাকে না আবার নির্বিষয় ও নয় ! শুধু ই অন্বেষণ !
‘অন্ধকার’ কথাটা এক্ষেত্রে ব্যবহার হোলেও_এখানে কালোও আলো, আবার আলোর মাঝেও কালো! সবই সচ্চিদানন্দময় ! তবে ঐ যে অন্বেষণ বা খোঁজের কথা বলা হোল_ ঐ খোঁজ করতে করতে _যেটা পাওয়া যায় সেটাই হোল পরমার্থ !
এইযে চিন্তার ধারার কথা এতোক্ষণ তোমাদের বললাম_এটাই আর্য চিন্তা, যা সম্পূর্ণ চিন্তা ! এর বাইরে বাকি যে সমস্ত দার্শনিকদের চিন্তা রয়েছে_ সেগুলি আংশিক! যে চিন্তা মানবকে পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটায় সেই চিন্তাই সম্পূর্ণ চিন্তা ! যেটা আর্য ঋষিরা বহুকাল আগে নিজেদের জীবন দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছিলেন ! সুতরাং তোমরাও আর্য-ঋষিদের পথ অনুসরণ করো এবং পূর্ণতা প্রাপ্ত হও!
গুরু মহারাজ:—- “প্রযত্নশৈথিল্য” অর্জন করতে হোলে আগে ‘আসন’ এবং ‘প্রাণায়াম’ সিদ্ধি করতে হয় ! ‘আসন’ করা মানে সার্কাস করা নয় ! এখন তো স্টেজ show কোরে বিভিন্ন আসন প্রদর্শন করা হয়, যেমনটা সার্কাসে ছেলেমেয়েরা করে ! ‘আসন’ মানে দেহের স্বাচ্ছন্দ্য, relaxation of body ! মেরুদন্ড খাড়া থাকে এমন যে কোনো আসনে (পদ্মাসন, সুখাসন, গোমুখাসন, সিদ্ধাসন ইত্যাদি) বসে শরীরের পেশীগুলিকে শিথিল করতে হয় । এতে শরীরের পেশীগুলি শক্তি লাভ করে । দেখবে, হাঁটাহাঁটি,দৌড়াদৌড়ি বা অন্যান্য ভাবে পরিশ্রম করার পর শরীরে মেসেজ করালে_ শরীরের পেশির যন্ত্রনা লাঘব হয় । এটা হয় শুধুমাত্র ওই মেসেজের ফলে পেশীগুলি শিথিল হয়ে যায় বলে ! সুতরাং ‘আসন’ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হোলো শরীরের পেশি গুলিকে শিথিল করা! এইজন্যই আর্যঋষিরা নামকরণ করেছেন “প্রযত্নশৈথিল্য”! ঠিক ঠিক এই অবস্থা প্রাপ্ত হলে প্রকৃতির শক্তিও খুবই সহজে ঐ সাধকের শরীরে সঞ্চারিত হয় । এই অবস্থায় শরীর সম্পূর্ণ rest- থাকে !
এরপরে সাধনার ক্রমে আসে “অনন্ত সমাপত্তি মনঃ” অর্থাৎ মনকে অনন্তে নিক্ষেপ করা! বিশালতার স্পর্শেই মন উদার হয়। এই জন্যই বলা হয় _”অনন্ত সমাপত্তি মনঃ”, relaxation of mind ! এই সাধনায় সাধককে প্রথমে প্রাণায়াম সিদ্ধ হোতে হয়। এছাড়া প্রকৃতিতে যেগুলি বিশাল __তাদের সান্নিধ্যে, তাদের সম্মুখে আসতে হয় ! বিশাল পর্বত, অনন্ত সমুদ্রের জলরাশি, দিগন্তবিস্তৃত মহাকাশ _এগুলির সামনে আসতে হয় ! পর্বতের গাম্ভীর্য, আকাশের উন্মুক্ততা ও উদারতা, সমুদ্রের বিশালতার সাধন যেন রূপের মাধ্যমে অরূপের সন্ধান পাবার সাধন! সৌভাগ্যক্রমে কোনো সাধক যদি কোনো মহামানবের সাক্ষাৎ পায় তাহলে সেই বিরাট মানুষটির কাছেই সে সমস্ত রকম বিশালতার স্বাদ পেয়ে যায়। সে সৌভাগ্য তো সবার হয় না,বা সবসময় হয় না_কখনো কখনো হয়,যখন সেই অরূপ রূপ পরিগ্রহ করে ধরণীর ধূলায় মূর্ত হ’ন!!
তবে, রূপ থেকে অরূপের সাধন কেমন জানো _ যেন সচিদানন্দসাগরে ঘটবৎ বা মীনবৎ অথবা সচ্চিদানন্দ অনন্ত আকাশে যেন পক্ষীবৎ হয়ে যাওয়া!!
ধ্যানের মধ্যে সাধকের ভাবনায় তখন এটাই থাকে যে, দেহরূপ ঘটকে সচ্চিদানন্দ সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার বাইরে, ভিতরে, উপরে, নিচে সর্বত্রই সচ্চিদানন্দময় অথবা সচ্চিদানন্দময় অনন্ত আকাশে পক্ষীর ন্যায় ডানা মেলে উড়ে যাওয়া ! আরো একটা পদ্ধতি রয়েছে যেখানে সাধকের ভাবনায় থাকে__ সচিদানন্দ সাগরে ডুব দিয়ে মীনের ন্যায় নিশ্চিন্তে খেলা করে বেড়ানো !
তবে এখানে একটা কথা রয়েছে ! কথাটা হোলো_ এই অবস্থাতেও “imagination”_ ব্যাপারটা রয়েছে ! কিন্তু এই যে সাধনপদ্ধতি গুলির কথা বলা হোলো_ এই সাধনার গভীর থেকে গভীরতম প্রদেশে একবার প্রবেশ করে গেলে, আর কোন imagination থাকেনা ! তখন শুধুই reality ! এই অবস্থাই সাধকের যথার্থ ধ্যান অবস্থা ! তখন শুধুই অনুসন্ধান বা খোঁজ !খোঁজ_ খোঁজ আর খোঁজ ! quest for truth !
এটা কেমন জানো ___ মনে করো তোমাকে একটা অন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলা হলো_ “এই ঘরে কিছু একটা রয়েছে, সেটা খুঁজে বের করো !” এবার শুরু হলো অন্বেষণ ! এই অবস্থায় মনে কোনো বিষয় থাকে না আবার নির্বিষয় ও নয় ! শুধু ই অন্বেষণ !
‘অন্ধকার’ কথাটা এক্ষেত্রে ব্যবহার হোলেও_এখানে কালোও আলো, আবার আলোর মাঝেও কালো! সবই সচ্চিদানন্দময় ! তবে ঐ যে অন্বেষণ বা খোঁজের কথা বলা হোল_ ঐ খোঁজ করতে করতে _যেটা পাওয়া যায় সেটাই হোল পরমার্থ !
এইযে চিন্তার ধারার কথা এতোক্ষণ তোমাদের বললাম_এটাই আর্য চিন্তা, যা সম্পূর্ণ চিন্তা ! এর বাইরে বাকি যে সমস্ত দার্শনিকদের চিন্তা রয়েছে_ সেগুলি আংশিক! যে চিন্তা মানবকে পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটায় সেই চিন্তাই সম্পূর্ণ চিন্তা ! যেটা আর্য ঋষিরা বহুকাল আগে নিজেদের জীবন দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছিলেন ! সুতরাং তোমরাও আর্য-ঋষিদের পথ অনুসরণ করো এবং পূর্ণতা প্রাপ্ত হও!