জিজ্ঞাসু :– কিন্তু অধিক ধনরত্ন থাকলেই তো মানুষের জীবনে বিলাসিতা এসে যাবে মহারাজ ! তাই নয় কি ?
গুরুমহারাজ :– না – না বিলাসিতা নয়, পৃথিবীর সব মানুষকে নিজের মতো ভেবো না ! সবাই বিলাসিতা দেখাবে কেন ? আলস্য, বিলাস এগুলি তমঃ এবং রজোস্তমোভাবাপন্ন মানুষের স্বভাবে রয়েছে ! আমি বিলাসিতা র কথা বলি নি, সমৃদ্ধির কথা বলছিলাম । সমৃদ্ধি মানে হোচ্ছে সম-বৃদ্ধি ! সমানভাবে এবং সবদিক থেকে মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠাটাই সমৃদ্ধি । যাকে বলা যায়__সম্যকভাবে বিকাশ ৷ বিলাসিতা – যেটা বলছো ওটা মানুষের নিচুস্তরের মানসিকতা ! মানুষের নানান মানসিকতার মধ্যে এটাও একটা মানসিকতা । দ্যাখো, মানুষ মন-প্রধান, তাই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা ! দরিদ্র ব্যক্তিরও বিলাসিতার মানসিকতা থাকতে পারে ! আমাদের ছোটবেলায় আমি দেখেছিলাম আমাদের কৃষ্ণদেবপুরের পাড়ার একজন কাকাকে । গরিব মানুষ কিন্তু পোষাকে-আষাকে, চালচলনে, খাওয়া-দাওয়ায় খুবই বিলাসি ।৷ একবার আমাদের মতো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের ডেকে ডেকে বড় বড় রসগোল্লা খাইয়েছিল । পরে জেনেছিলাম স্ত্রীর কানের গয়না বিক্রি করে ৫০ টাকার রসগোল্লা কিনে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল ৷ যখনকার কথা বলছি তখন হয়তো ৫০ টাকায় প্রায় এক মাসের চাল-ডাল কেনা হয়ে যেতো ! কোনো ধনী ব্যক্তির যদি এইরূপ বিলাসিতার মানসিকতা না থাকে, তাহলে সে ঐরকম রসগোল্লা কিনতেও পারবে না আর খেতেও পারবে না___ লোককে খাওয়ানো তো দূরের কথা !
আর একবার আমি কলকাতার বড়বাজারে দেখেছিলাম__ ধনী ব্যবসাদার চার আনা দিয়ে মুড়ি-ফুলুরি দিয়ে টিফিন সারলো, আর তারই দোকানের অল্প বেতনের কর্মচারীটি টিফিনের জন্য বরাদ্দ চার আনা দিয়ে পাশের দোকানে গিয়ে কচুরি-মিষ্টি খেয়ে এলো । সুতরাং বুঝতে পারছো তো__তুমি কোন্ style-এ জীবন কাটাবে __এটা ‘মানসিকতার’ ব্যাপার !
সাধারণ মানুষ মনসর্বস্ব ! মনেই ‘গরীব’ হয় মানুষ, গরীবী বাইরে নাই তো ! তোমরা যারা আমার কথাগুলো শুনছো__আমি তোমাদেরকে বলছি_ মনে কখনোই ‘গরীব’ হবে না ! জেনে রাখবে__ গরীবী বাইরে নাই, ভিতরে রয়েছে ! এটা রয়েছে মানুষের মনের ভিতরে ! অনেক বাড়িতে দেখেছি গৃহিণীরা অতিথিকে খেতে বসানোর পর বলে, “আপনি কি এটা খাবেন?” “আপনাকে কি একটু দুধ দেবো ?” __এটা তাদের মনের কৃপণতা ৷ আমি মনে মনে ভাবি ” এই রে ! এদের গরু তো বেশি দুধ-ই দেবে না !” – মুখে অবশ্য কিছু বলতে পারি না ।
আবার কোনো বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়ির গৃহিণী অতিথিকে পরিপাটি করে খেতে দিয়েছে, আর দুধ দেবার সময় বাটিতে হুড়হুড় করে বেশ খানিকটা ঢেলে দিচ্ছে । অতিথি ব্যগ্র হয়ে বলছে ” না – না আর পারবো না, আর দেবেন না please !” কিন্তু গৃহিণী বলছে, ” তাই কি হয় বাবা ! এটুকু ঠিকই খেতে পারবে ! আর একটু খাও !” আমি মনে মনে ভাবি “এদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর কে আটকাবে ? এদের গরুতেও অনেক দুধ দেবে !”
এই যে কথাগুলো বললাম বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শোনালাম – এগুলো সত্য বলে জানবে ! কেন বললাম,তার কারণটাও বলে দিচ্ছি শোনো__এর কারনটা হোলো দ্বিতীয় ক্ষেত্রের বাড়ির মা-টির যে দেবার ভাব(সেবার ভাবও বটে!)__তাতে ওই পরিবারের প্রতি, মহাপ্রকৃতি প্রসন্ন হ’ন_ফলে ওদের উপর ঈশ্বরও প্রসন্ন হ’ন। এই পরিবারের মায়ের অন্তঃপ্রকৃতিতে প্রসন্নতা রয়েছে – তাই বহিঃপ্রকৃতিও প্রসন্ন হোতে বাধ্য । এইজন্যেই ওই পরিবারকে কখনোই খাদ্যের অভাবের সন্মুখীন হোতে হবে না ! এই যে উদাহরণ দিলাম__এটা বিজ্ঞান – সূক্ষ্মবিজ্ঞান ! মানুষ সচরাচর এই বিজ্ঞান জানে না বা বোঝেও না ৷ কিন্তু জেনে রাখবে – এটা সত্য ! আজ তোমাদের কাছে একটা পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করা যায়__এমন একটা সূক্ষ্মবিজ্ঞান বলে দিলাম ! তোমরা যে কেউ এটা বাস্তব জীবনে মিলিয়ে দেখে নিও – প্রমাণ পাবে !
জানো, যে গাছে ছেলেরা বেশি ঢিল মেরে আম পাড়ে অথবা কুল পাড়ে – সেই গাছেই বেশী আম বা কুল ধরে ! আর এটা স্বাভাবিক ভাবেই হয় ৷ এর কোনো ব্যাখ্যা জীবন বিজ্ঞান দিতে পারবে না – ওরা হরমোন spray করে বেশি ফলন করার চেষ্টা করবে ৷৷
কিন্তু ‘naturality’ – এই ব্যাপারটা জীববিজ্ঞানীরা এখনও ধরতে পারছে না ! আর পারবেই বা কি করে __ ওটা যে বোধের ব্যাপার ! লেখাপড়া শিখে তো এটাকে ধরা যাবে না ! একমাত্র বোধিব্যক্তিই এটা ধরতে পারেন। ‘বোধিব্যক্তি’– অর্থাৎ যাঁর অন্তঃপ্রকৃতি জয় হয়েছে এবং এর ফলে যাঁর বহিঃপ্রকৃতির রহস্য-ও করায়ত্ত – তিনি-ই এগুলি জানেন বা ধরতে পারেন ৷৷(ক্রমশঃ)
গুরুমহারাজ :– না – না বিলাসিতা নয়, পৃথিবীর সব মানুষকে নিজের মতো ভেবো না ! সবাই বিলাসিতা দেখাবে কেন ? আলস্য, বিলাস এগুলি তমঃ এবং রজোস্তমোভাবাপন্ন মানুষের স্বভাবে রয়েছে ! আমি বিলাসিতা র কথা বলি নি, সমৃদ্ধির কথা বলছিলাম । সমৃদ্ধি মানে হোচ্ছে সম-বৃদ্ধি ! সমানভাবে এবং সবদিক থেকে মানুষের জীবন বিকশিত হয়ে ওঠাটাই সমৃদ্ধি । যাকে বলা যায়__সম্যকভাবে বিকাশ ৷ বিলাসিতা – যেটা বলছো ওটা মানুষের নিচুস্তরের মানসিকতা ! মানুষের নানান মানসিকতার মধ্যে এটাও একটা মানসিকতা । দ্যাখো, মানুষ মন-প্রধান, তাই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা ! দরিদ্র ব্যক্তিরও বিলাসিতার মানসিকতা থাকতে পারে ! আমাদের ছোটবেলায় আমি দেখেছিলাম আমাদের কৃষ্ণদেবপুরের পাড়ার একজন কাকাকে । গরিব মানুষ কিন্তু পোষাকে-আষাকে, চালচলনে, খাওয়া-দাওয়ায় খুবই বিলাসি ।৷ একবার আমাদের মতো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের ডেকে ডেকে বড় বড় রসগোল্লা খাইয়েছিল । পরে জেনেছিলাম স্ত্রীর কানের গয়না বিক্রি করে ৫০ টাকার রসগোল্লা কিনে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল ৷ যখনকার কথা বলছি তখন হয়তো ৫০ টাকায় প্রায় এক মাসের চাল-ডাল কেনা হয়ে যেতো ! কোনো ধনী ব্যক্তির যদি এইরূপ বিলাসিতার মানসিকতা না থাকে, তাহলে সে ঐরকম রসগোল্লা কিনতেও পারবে না আর খেতেও পারবে না___ লোককে খাওয়ানো তো দূরের কথা !
আর একবার আমি কলকাতার বড়বাজারে দেখেছিলাম__ ধনী ব্যবসাদার চার আনা দিয়ে মুড়ি-ফুলুরি দিয়ে টিফিন সারলো, আর তারই দোকানের অল্প বেতনের কর্মচারীটি টিফিনের জন্য বরাদ্দ চার আনা দিয়ে পাশের দোকানে গিয়ে কচুরি-মিষ্টি খেয়ে এলো । সুতরাং বুঝতে পারছো তো__তুমি কোন্ style-এ জীবন কাটাবে __এটা ‘মানসিকতার’ ব্যাপার !
সাধারণ মানুষ মনসর্বস্ব ! মনেই ‘গরীব’ হয় মানুষ, গরীবী বাইরে নাই তো ! তোমরা যারা আমার কথাগুলো শুনছো__আমি তোমাদেরকে বলছি_ মনে কখনোই ‘গরীব’ হবে না ! জেনে রাখবে__ গরীবী বাইরে নাই, ভিতরে রয়েছে ! এটা রয়েছে মানুষের মনের ভিতরে ! অনেক বাড়িতে দেখেছি গৃহিণীরা অতিথিকে খেতে বসানোর পর বলে, “আপনি কি এটা খাবেন?” “আপনাকে কি একটু দুধ দেবো ?” __এটা তাদের মনের কৃপণতা ৷ আমি মনে মনে ভাবি ” এই রে ! এদের গরু তো বেশি দুধ-ই দেবে না !” – মুখে অবশ্য কিছু বলতে পারি না ।
আবার কোনো বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়ির গৃহিণী অতিথিকে পরিপাটি করে খেতে দিয়েছে, আর দুধ দেবার সময় বাটিতে হুড়হুড় করে বেশ খানিকটা ঢেলে দিচ্ছে । অতিথি ব্যগ্র হয়ে বলছে ” না – না আর পারবো না, আর দেবেন না please !” কিন্তু গৃহিণী বলছে, ” তাই কি হয় বাবা ! এটুকু ঠিকই খেতে পারবে ! আর একটু খাও !” আমি মনে মনে ভাবি “এদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর কে আটকাবে ? এদের গরুতেও অনেক দুধ দেবে !”
এই যে কথাগুলো বললাম বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শোনালাম – এগুলো সত্য বলে জানবে ! কেন বললাম,তার কারণটাও বলে দিচ্ছি শোনো__এর কারনটা হোলো দ্বিতীয় ক্ষেত্রের বাড়ির মা-টির যে দেবার ভাব(সেবার ভাবও বটে!)__তাতে ওই পরিবারের প্রতি, মহাপ্রকৃতি প্রসন্ন হ’ন_ফলে ওদের উপর ঈশ্বরও প্রসন্ন হ’ন। এই পরিবারের মায়ের অন্তঃপ্রকৃতিতে প্রসন্নতা রয়েছে – তাই বহিঃপ্রকৃতিও প্রসন্ন হোতে বাধ্য । এইজন্যেই ওই পরিবারকে কখনোই খাদ্যের অভাবের সন্মুখীন হোতে হবে না ! এই যে উদাহরণ দিলাম__এটা বিজ্ঞান – সূক্ষ্মবিজ্ঞান ! মানুষ সচরাচর এই বিজ্ঞান জানে না বা বোঝেও না ৷ কিন্তু জেনে রাখবে – এটা সত্য ! আজ তোমাদের কাছে একটা পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করা যায়__এমন একটা সূক্ষ্মবিজ্ঞান বলে দিলাম ! তোমরা যে কেউ এটা বাস্তব জীবনে মিলিয়ে দেখে নিও – প্রমাণ পাবে !
জানো, যে গাছে ছেলেরা বেশি ঢিল মেরে আম পাড়ে অথবা কুল পাড়ে – সেই গাছেই বেশী আম বা কুল ধরে ! আর এটা স্বাভাবিক ভাবেই হয় ৷ এর কোনো ব্যাখ্যা জীবন বিজ্ঞান দিতে পারবে না – ওরা হরমোন spray করে বেশি ফলন করার চেষ্টা করবে ৷৷
কিন্তু ‘naturality’ – এই ব্যাপারটা জীববিজ্ঞানীরা এখনও ধরতে পারছে না ! আর পারবেই বা কি করে __ ওটা যে বোধের ব্যাপার ! লেখাপড়া শিখে তো এটাকে ধরা যাবে না ! একমাত্র বোধিব্যক্তিই এটা ধরতে পারেন। ‘বোধিব্যক্তি’– অর্থাৎ যাঁর অন্তঃপ্রকৃতি জয় হয়েছে এবং এর ফলে যাঁর বহিঃপ্রকৃতির রহস্য-ও করায়ত্ত – তিনি-ই এগুলি জানেন বা ধরতে পারেন ৷৷(ক্রমশঃ)