জিজ্ঞাসু (স্বামী শংকরানন্দ) :– (কোনো এক জিজ্ঞাসুর কথার সূত্র ধরে ঐ মহারাজ বললেন).. স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন –মানুষের মন সদাই বহিঃর্মুখী – তাই ব্রহ্মজ্ঞান বা উন্নততর জ্ঞান মানুষের করায়ত্ত হোচ্ছে না !
গুরুমহারাজ :– Right ! স্বামীজী ঠিকই বলছেন ! তবে কি জানেন মহারাজ__ যেহেতু ব্রহ্মকে বলা হচ্ছে “অবাঙমানসগোচর”, তাই মন দিয়ে তাকে স্পর্শ করা যাচ্ছে না। ব্রহ্ম “অচিন্তনীয়” – তাই চিন্তা সেখানে পৌঁছাতে পারছে না। কিন্তু এখানে একটা জিজ্ঞাসা কি এসে যাচ্ছে না – তাহলে মনকে নিয়ে এতো সমস্যা কেন মানুষের ? ন্যায়-অন্যায় কাজ সে করে কেন, মানুষ ক্লেশ‌ই বা পায় কেন ? মনকে শান্ত করার, একাগ্র করার জন্য এতো ধ্যান-জপ-তপ-সাধন-ভজন করা কেন ? এগুলো কি useless ? আপনাকেই আমি জিজ্ঞাসা করছি, বলুন – আপনি কি ভাবছেন ? (শংকরানন্দ মহারাজ, গুরুজীর মুখের দিকে নির্নিমেষে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলেন। তখন গুরু মহারাজ আবার বলতে শুরু করলেন…)
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “মনের গোচর না হোলেও তিনি শুদ্ধ মনের গোচর – বুদ্ধির গোচর না হোলেও তিনি শুদ্ধবুদ্ধির গোচর৷” দেখুন –এখানে ‘তিনি’ অর্থে ‘He’ ন’ন, ‘তিনি’__’That’ ! আর এখানে “গোচর” কথাটি লক্ষণীয় ! তার মানে বুঝতে পারছেন__তখন‌ও ‘বোধ’ হোচ্ছে না, সুস্পষ্ট ধারণা হোচ্ছে । আর একটা ব্যাপার আপনাকে বলছি শুনুন – কাঁচ, জল বা স্বচ্ছ প্রস্তর(পাথর) – এরা সূর্য নয় কিন্তু এগুলিতে যখন সূর্যের প্রতিফলন ঘটে, তখনই সেগুলির মধ্যে তার (সূর্যের) স্বরূপের প্রকাশ ঘটে। সেইভাবে অশুদ্ধ বা অস্বচ্ছ মন পারে না কিন্তু তা স্বচ্ছ বা শুদ্ধ হোলে সেখানে ‘আত্মা’-র প্রতিফলন হয়, প্রতিভাস হয়। তাই প্রাথমিকভাবে মনকে শুদ্ধ করাটা খুবই প্রয়োজন, আর এরজন্য নিষ্ঠা সহকারে অভ্যাসের প্রয়োজন। গীতাতেও রয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন – অভ্যাস আর বৈরাগ্য, এই দুটির দ্বারাই আত্মজ্ঞান লাভ বা আত্মসাক্ষাৎকার সম্ভব। বৈরাগ্যের দ্বারা অনাসক্তি আসে – কিন্তু তারপরেও অভ্যাসযোগ বা সাধনার একান্ত প্রয়োজন।
জিজ্ঞাসু (ঐ মহারাজ):– কিন্তু কৃপা-ও তো রয়েছে ! সবসময়-ই যে অভ্যাস বা বৈরাগ্যের দ্বারা হবে – এমন তো নয় !?
গুরুমহারাজ :– ‘কৃপা’ কথাটি তো আপনাদের অনেকবার বুঝিয়ে বলেছি মহারাজ ! উপনিষদের সেই গল্প যেখানে দুটি পাখির ডিম সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল এবং তারা ছোট্ট ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র ছেঁচে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করলো। তাদের অনলস পরিশ্রম দেখে খুশি হয়ে সমুদ্র-দেবতা তাদের ডিম ফেরৎ দিয়ে দিল। এইটাই কৃপা –যা ‘করে পাওয়া’। তবে এরপরেও কথা আছে, সেটা এখন এখানে বলা যাবে না–ওটা একান্তে হবে।।