জিজ্ঞাসু :– শাস্ত্রে বলা হয়েছে__ “নিরবচ্ছিন্ন তৈলধারার ন্যায়”, এইরকম নিরবচ্ছিন্ন আনন্দলাভ কি ভাবে লাভ হবে ? শুধুমাত্র ঘরের কোণে ধ্যান-জপ, মনের একাগ্রতার দ্বারা__ না কি অন্যভাবেও তা লাভ করা সম্ভব ?
গুরুমহারাজ :– না-না – ঋষিরা বা অবতার পুরুষেরা কখনও এইভাবে কোনো কিছুকেই নির্দিষ্ট করে দেননি তো ! শুধুমাত্র এইভাবেই হয় – ওইভাবে হয় না, এইরকমটা বলে আহম্মকেরা ! শেষ নাই যার – শেষ কথা কে বলবে ? শুধুমাত্র ঘরের কোণে ধ্যান-জপ করার দরকার হয়নি তো বালক গদাইয়ের ! গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালক গদাই একদিন হাঁটছিল, দেখল বর্ষার কালো মেঘ_ আর সেখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক সাদা বলাকা৷ কালোর বুকে সাদা বলাকার সারি – এই অপরূপ রূপ দেখেই সমাধিস্থ হয়ে গেল গদাই ! সাধারণ মানুষ তো কত রূপ-ই দেখে, কত টাকা-পয়সা খরচ করে রূপ-রূপসী দেখে বেড়ায় ! বহু মানুষ নিজের পরিমণ্ডলকে সুন্দর করে সাজায় –নানাভাবে রূপদান করার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই সবের মাধ্যমে কেউ কি সমাধিস্থ হচ্ছে? __ হচ্ছে না তো !!
ভোগ করে কে ? ভোগ করে ভগবান। আর সবাই তো ভোগের নামে ভোগান্তি ভোগ করে। যে ভোগের অন্তে ক্লেশ-দুঃখ__ তাই ভোগান্তি। অনাসক্ত হয়ে ভোগ-ই ভোগ। শাস্ত্র বলেছে, “তেন তক্তেন ভুঞ্জিথাঃ।” মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য মোরগ্রামের (নদীয়া?) উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, সঙ্গীদের কেউ একজন বলল এখানকার মাটিতে ভালো খোল (মৃদঙ্গ) হয়৷ কথাটা কানে যেতেই উনি আনন্দে নৃত্য করতে শুরু করলেন_ ভাবস্থ হয়ে গেলেন ! নিজেকে ভুলে তাঁর ঐরূপ অপার্থিব নৃত্য দেখে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ভাবলো__ লোকটা বুঝি পাগল। কিন্তু ঐটা কি পাগলামো ? তা তো নয় ! ওইটা হোলো প্রেমের চূড়ান্ত অবস্থা ! ঐ অবস্থায় যে কোনো বিষয় থেকেই রসোল্লাস হচ্ছে – হ্লাদিনী শক্তিরই ক্রিয়া হোচ্ছে ! এই যে মহাবিশ্ব, রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শের জগৎ, এর মধ্যে যদি কোথাও বিন্দুমাত্র আনন্দের প্রকাশ থাকে – তবে সে তো হ্লাদিনী শক্তির-ই প্রকাশ !
দ্যাখো, প্রকৃত আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায় – আনন্দ কোথায় নেই ! সর্বত্রই তো আনন্দই রয়েছে ! শুধু আনন্দ আর আনন্দ !! তবে এইসব কথা ঠিক মতো ‘বোধে’-র জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত আধারের ! যখন তড়িৎ বা বিদ্যুৎ পরিবহন হয় তখন যেমন প্রয়োজন হয় কোনো না কোনো পরিবাহী মাধ্যমের__ তেমনি এক্ষেত্রেও প্রয়োজন হয় উপযুক্ত আধারের। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পরিবাহী মাধ্যম বা conductor যদি লোহা হয়, তাহলে ভালো current pass করবে না, তামা হোলে অপেক্ষাকৃত ভালো হবে_পরিবাহী যদি রূপার তৈরি হয়, তাহলে আরো ভালো হবে অর্থাৎ শক্তির পরিবহন সুষ্ঠুভাবে ঘটবে ! আবার conductor যদি ভালো না হয়, তাহলে শক্তির সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। আর পরিবাহী যদি non-conductor হয়, সেখানে শক্তির আদান-প্রদান ক্রিয়া একেবারেই হবে না।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মাঝে মধ্যেই ভাব হোতো অর্থাৎ উনি সমাধিস্থ হয়ে যেতেন। একদিন কলকাতার বাবুদের মধ্যে অনেক কজন দক্ষিণেশ্বরে এসেছিল এবং কথা চলতে চলতে ঠাকুর হঠাৎ করে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। সেদিন ঠাকুরের ঐ ভাবসমাধি অবস্থায় সেখানে কলকাতার বাবুদের সাথে আরো অনেকেই উপস্থিত ছিল। ওদের মধ্যে একজন ঠাকুরের ওইরকম ভাবাবস্থা দেখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, “আরে, ওসব কিছুই নয়, সমাধি-টমাধি হোলে আমি বুঝতে পারবো না !! এই অবস্থায় ওনার শরীর ছুঁলেই current-এর মতো শক্ মারবে !” কিন্তু ঐ ব্যক্তিটিকে শক্ মারেনি_তাই সে সিদ্ধান্ত করে দিল যে, ওটা সমাধি নয় !
আরে ! তুই কি বুঝবি, তুই যে non-conductor ! সমাধিস্থ অবস্থায় ছুঁতে হবে কেন – ঠিক ঠিক conductor (উপযুক্ত আধার) ওখানে উপস্থিত থাকলে দূর থেকেই impulse পাবে ! যেমন স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন good conductor ! ঠাকুরের ভাবসমাধি অবস্থায় হৃদয় বা অন্যান্য ব্রহ্মচারীরাও ছুঁয়েছিল – তাদের কার আর কি এমন হয়েছিল ! নরেন্দ্রনাথের হয়েছিল, কারণ তিনি ছিলেন সবার থেকে আলাদা ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ছোঁয়ায় একেবারে তিনি সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলেন ! এটা ভাবা যায় !! উনি কি দেখলেন__ দেখলেন সবকিছুই গতিশীল ! সূর্য, পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র – সবকিছু ঘুর্নায়মান !
যাইহোক, তাহলে এটা তো বোঝা গেল যে, মহাপুরুষদের কৃপা লাভের condition একটাই – উপযুক্ত আধার ! আধার উপযুক্ত হোলে সেই আধারকে কেন্দ্র করে শক্তির ক্রিয়া হবেই হবে। যদি সে ওই মহাপুরুষের কাছেই না থাকে, অনেক দূরে থাকে – তবুও সেখানেই শক্তির ক্রিয়া ঘটে যাবে। দ্যাখো, দূরত্ব তো স্থূলে, সূক্ষ্মেও কিছুটা রয়েছে কিন্তু কারণে দূরত্ব কোথায় !! আমার সাথে স্থূলে দেখা হয়নি এমন অনেক উপযুক্ত আধারের সাথে আমার যোগাযোগ হয়_সেটা অন্য স্থিতিতে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন field-এ মানব-কল্যাণের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করে কাজ করে চলেছেন।।
গুরুমহারাজ :– না-না – ঋষিরা বা অবতার পুরুষেরা কখনও এইভাবে কোনো কিছুকেই নির্দিষ্ট করে দেননি তো ! শুধুমাত্র এইভাবেই হয় – ওইভাবে হয় না, এইরকমটা বলে আহম্মকেরা ! শেষ নাই যার – শেষ কথা কে বলবে ? শুধুমাত্র ঘরের কোণে ধ্যান-জপ করার দরকার হয়নি তো বালক গদাইয়ের ! গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালক গদাই একদিন হাঁটছিল, দেখল বর্ষার কালো মেঘ_ আর সেখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক সাদা বলাকা৷ কালোর বুকে সাদা বলাকার সারি – এই অপরূপ রূপ দেখেই সমাধিস্থ হয়ে গেল গদাই ! সাধারণ মানুষ তো কত রূপ-ই দেখে, কত টাকা-পয়সা খরচ করে রূপ-রূপসী দেখে বেড়ায় ! বহু মানুষ নিজের পরিমণ্ডলকে সুন্দর করে সাজায় –নানাভাবে রূপদান করার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই সবের মাধ্যমে কেউ কি সমাধিস্থ হচ্ছে? __ হচ্ছে না তো !!
ভোগ করে কে ? ভোগ করে ভগবান। আর সবাই তো ভোগের নামে ভোগান্তি ভোগ করে। যে ভোগের অন্তে ক্লেশ-দুঃখ__ তাই ভোগান্তি। অনাসক্ত হয়ে ভোগ-ই ভোগ। শাস্ত্র বলেছে, “তেন তক্তেন ভুঞ্জিথাঃ।” মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য মোরগ্রামের (নদীয়া?) উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, সঙ্গীদের কেউ একজন বলল এখানকার মাটিতে ভালো খোল (মৃদঙ্গ) হয়৷ কথাটা কানে যেতেই উনি আনন্দে নৃত্য করতে শুরু করলেন_ ভাবস্থ হয়ে গেলেন ! নিজেকে ভুলে তাঁর ঐরূপ অপার্থিব নৃত্য দেখে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ভাবলো__ লোকটা বুঝি পাগল। কিন্তু ঐটা কি পাগলামো ? তা তো নয় ! ওইটা হোলো প্রেমের চূড়ান্ত অবস্থা ! ঐ অবস্থায় যে কোনো বিষয় থেকেই রসোল্লাস হচ্ছে – হ্লাদিনী শক্তিরই ক্রিয়া হোচ্ছে ! এই যে মহাবিশ্ব, রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শের জগৎ, এর মধ্যে যদি কোথাও বিন্দুমাত্র আনন্দের প্রকাশ থাকে – তবে সে তো হ্লাদিনী শক্তির-ই প্রকাশ !
দ্যাখো, প্রকৃত আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায় – আনন্দ কোথায় নেই ! সর্বত্রই তো আনন্দই রয়েছে ! শুধু আনন্দ আর আনন্দ !! তবে এইসব কথা ঠিক মতো ‘বোধে’-র জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত আধারের ! যখন তড়িৎ বা বিদ্যুৎ পরিবহন হয় তখন যেমন প্রয়োজন হয় কোনো না কোনো পরিবাহী মাধ্যমের__ তেমনি এক্ষেত্রেও প্রয়োজন হয় উপযুক্ত আধারের। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পরিবাহী মাধ্যম বা conductor যদি লোহা হয়, তাহলে ভালো current pass করবে না, তামা হোলে অপেক্ষাকৃত ভালো হবে_পরিবাহী যদি রূপার তৈরি হয়, তাহলে আরো ভালো হবে অর্থাৎ শক্তির পরিবহন সুষ্ঠুভাবে ঘটবে ! আবার conductor যদি ভালো না হয়, তাহলে শক্তির সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। আর পরিবাহী যদি non-conductor হয়, সেখানে শক্তির আদান-প্রদান ক্রিয়া একেবারেই হবে না।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মাঝে মধ্যেই ভাব হোতো অর্থাৎ উনি সমাধিস্থ হয়ে যেতেন। একদিন কলকাতার বাবুদের মধ্যে অনেক কজন দক্ষিণেশ্বরে এসেছিল এবং কথা চলতে চলতে ঠাকুর হঠাৎ করে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। সেদিন ঠাকুরের ঐ ভাবসমাধি অবস্থায় সেখানে কলকাতার বাবুদের সাথে আরো অনেকেই উপস্থিত ছিল। ওদের মধ্যে একজন ঠাকুরের ওইরকম ভাবাবস্থা দেখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, “আরে, ওসব কিছুই নয়, সমাধি-টমাধি হোলে আমি বুঝতে পারবো না !! এই অবস্থায় ওনার শরীর ছুঁলেই current-এর মতো শক্ মারবে !” কিন্তু ঐ ব্যক্তিটিকে শক্ মারেনি_তাই সে সিদ্ধান্ত করে দিল যে, ওটা সমাধি নয় !
আরে ! তুই কি বুঝবি, তুই যে non-conductor ! সমাধিস্থ অবস্থায় ছুঁতে হবে কেন – ঠিক ঠিক conductor (উপযুক্ত আধার) ওখানে উপস্থিত থাকলে দূর থেকেই impulse পাবে ! যেমন স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন good conductor ! ঠাকুরের ভাবসমাধি অবস্থায় হৃদয় বা অন্যান্য ব্রহ্মচারীরাও ছুঁয়েছিল – তাদের কার আর কি এমন হয়েছিল ! নরেন্দ্রনাথের হয়েছিল, কারণ তিনি ছিলেন সবার থেকে আলাদা ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ছোঁয়ায় একেবারে তিনি সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলেন ! এটা ভাবা যায় !! উনি কি দেখলেন__ দেখলেন সবকিছুই গতিশীল ! সূর্য, পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র – সবকিছু ঘুর্নায়মান !
যাইহোক, তাহলে এটা তো বোঝা গেল যে, মহাপুরুষদের কৃপা লাভের condition একটাই – উপযুক্ত আধার ! আধার উপযুক্ত হোলে সেই আধারকে কেন্দ্র করে শক্তির ক্রিয়া হবেই হবে। যদি সে ওই মহাপুরুষের কাছেই না থাকে, অনেক দূরে থাকে – তবুও সেখানেই শক্তির ক্রিয়া ঘটে যাবে। দ্যাখো, দূরত্ব তো স্থূলে, সূক্ষ্মেও কিছুটা রয়েছে কিন্তু কারণে দূরত্ব কোথায় !! আমার সাথে স্থূলে দেখা হয়নি এমন অনেক উপযুক্ত আধারের সাথে আমার যোগাযোগ হয়_সেটা অন্য স্থিতিতে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন field-এ মানব-কল্যাণের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করে কাজ করে চলেছেন।।