জিজ্ঞাসু :– যে কোনো মহাপুরুষ, মানুষকে ভগবৎ-চিন্তা করতে বলেন – এতে আসলে হয়টা কি?
গুরুমহারাজ :– ভগবৎ-চিন্তা করলে কি হয়__তাই জানতে চাইছো তো ! ঠিক আছে আমি বলছি শোনো–দ্যাখো, মানুষ যা চিন্তা করে_ সেই নিয়েই সে চর্চা করতে ভালোবাসে ৷ আর যে ব্যক্তি, যে বিষয়ের উপর অধিক চর্চা করে_ তাই তার জীবনচর্যায় আসে। তাই বলা হয়েছে চিন্তা থেকে চর্চা, আর চর্চা থেকে চর্যা।
ভগবৎ-চিন্তা অর্থাৎ ভগবানের চিন্তা, ঈশ্বর-চিন্তা ! হরির অবতারগণ যখন মানুষ্যশরীরে ধরাধামে লীলা করতে আসেন, তখন তাঁদের বলা হয় ‘ভগবান’। এঁরা যুগপুরুষ – complete man ! এঁদের সবটাই ভালো – এঁদের জীবন চরিতে কোনো কালো দাগ থাকে না। যেগুলি ‘কালো’ বলে মনে হয়__সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, তার পিছনেও মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
যাই হোক, সকল মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ঐরূপ মহৎ মানুষের(ভগবানের) গুন বিশিষ্ট হয়ে ওঠা ! মানুষ সহ যে কোনো জীব দীর্ঘদিন ধরে গভীরভাবে যা চিন্তা করে_কালক্রমে সে তাই হয়ে ওঠে। আধুনিক জীব বিজ্ঞানীরাও একথা স্বীকার করেছে,কারন জীব-বিবর্তনে অভিব্যক্তি(evolution) ও পরিবৃত্তি(mutation) এইভাবেই ঘটে। সুতরাং ভগবৎ-চিন্তায় মানুষ ধীরে ধীরে ভগবৎ-মুখী হয়ে ওঠে, এবং অবশেষে তদ্রুপ প্রাপ্ত হয়। আর এতেই মানবজীবনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়।৷
জিজ্ঞাসু :– কিন্তু শাস্ত্রবাক্য অনুযায়ী তো মহাপুরুষরা সবসময় চলেন না – এইরকমটা কেন হয় ?
গুরুমহারাজ :– মহাপুরুষদের জীবন, তাঁদের আচরণ, তাঁদের উপদেশই তো শাস্ত্র। পূর্বে কোনো মহাপুরুষ, জ্ঞানী বা অবতারপুরুষ যা করেছেন, যা বলেছেন__ তাই নিয়েই আগের আগের শাস্ত্রগুলি রচিত হয়েছিল, পরে যখন আবার কোনো মহাপুরুষ শরীর ধারণ করেছেন__ তখন তাঁদেরকে নিয়ে, তাঁদের উপদেশাবলী নিয়ে নতুন শাস্ত্র লেখা হয়েছে। এরপরে যাঁরা আসবেন তাঁদেরকে নিয়েও আগামীতে আবার শাশ্ত্রগ্রন্থ লেখা হবে। এটা তো একটা continuous process ! যুগোপযোগী ধর্ম প্রবর্তন করতেই তো অবতারদের নতুন শরীর, তাই যুগে যুগে হয় যুগোপযোগী নতুন নতুন শাস্ত্রের আত্মপ্রকাশ !
তবে জানো, কোনো মহাপুরুষের শিক্ষাই পরবর্তীতে ঠিক ঠিক পালন করা হয় না। বর্তমান বৈষ্ণবসমাজে দেখবে__তারা তিলক কাটা, ফুল তোলা, মালা গাঁথা, বিভিন্ন উপাচার সাজানো – এইসবেই কত সময় ব্যয় করে। আবার মুখেও বলে যে, এইসব সাধন-ভজনের অঙ্গ_ এসব না করলে কৃষ্ণপ্রাপ্তি ঘটবে না। কিন্তু ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন ঘটনার কথা, তার মধ্যে এক জায়গায় রয়েছে – একদিন অভিসারে যাবার জন্য ব্রজগোপীনীরা শৃঙ্গার করছিল। এমন সময় কৃষ্ণের বাঁশি উঠলো বেজে ! সেই অবস্থায় গোপিনীদের কেউ একচোখে কাজল পড়েছে – অন্য চোখে পড়ার সময় পায়নি, কেউ এক পায়ে নূপুর পরেছে – অন্য পায়ে পড়া হয়নি, কারো কেশ ছিলখোলা_তগনও বাঁধা হয় নি, কেউ বসন ভালো করে পড়ে নি –কিন্তু ওদিকে বাঁশি বেজে গেছে, তাই তারা সেই বাঁশির সুর শুনে ওই অবস্থাতেই ছুটে চললো কৃষ্ণ দরশনে এবং সেই অবস্থাতেই তাদের সাথে কৃষ্ণের মিলন হোলো, এমনকি রাসে প্রবেশাধিকারও হোলো।
তাহলে__ কি বলবে বলো ! শাস্ত্র অনুযায়ী উত্তরসূরীরা কি চলতে পেরেছে ? এটা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের দোষের কথা বলা হোলো না__এটা শুধু একটা উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা হোলো! আর শুধু বৈষ্ণব সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়েই এই এক অবস্থা!! লক্ষ্য ছেড়ে উপলক্ষ্যে ফেঁসে গেছে! এইজন্যেই তো এইসব পরম্পরায় আর কোনো উন্নত উত্তরসূরি আসছে না।
জিজ্ঞাসু :– তাহলে মহাপুরুষগণ শরীর ধারণ করে, তাদের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করবেন এবং যেটা করবেন_ সেটাই পরবর্তীর শাস্ত্র হবে ??
গুরুমহারাজ :– আচ্ছা হীনবুদ্ধি তো তোমার !! তোমার বুদ্ধি অনুযায়ী কি এই জগৎ-সংসারের সবকিছু নির্ধারণ হয় ? তা তো__ হয় না !! ‘খেয়াল-খুশি মতো করা’– বলে তুমি কি বলতে চাইছো ? মহাপুরুষগণ কখনোই স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করেন না । খেয়াল-খুশি মতো কাজ করা বলতে কি তুমি উচ্ছৃঙ্খলতা বোঝাচ্ছো নাকি? দ্যাখো__ তাঁরা জানেন যে, তাঁরা যদি বেশ্যাপট্টিতে যান_ তো সেখানে বেশ্যারা তাঁর কাপড় ধরে টানাটানি করতে পারে! তবু প্রয়োজনে, মা জগদম্বার ইচ্ছায় তাঁরা যেতেও পারেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ গেছিলেন, কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে কি ঘটেছিল ? বেশ্যারাই পরিবর্তিত হয়ে গেল_তাই না !
সুতরাং সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যেটা হয়_ এরকমটা তো মহাপুরুষদের ক্ষেত্রে হয়না বা হবেও না। মহাপুরুষ বলতে তুমি কি ভাবছো বা তোমার কি ধারনা__ তা আমি জানিনা, কিন্তু জেনে রাখবে, প্রকৃতপক্ষে মহাপুরুষ তাঁদেরকেই বলা হয়ে থাকে__ যাঁরা আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে, শুধুমাত্র ঈশ্বরের ইচ্ছায় এবং সকলের মঙ্গলার্থে কর্ম করতে করতেই শরীর পাত করে যান। এই অবস্থায় তিনি যদি কোনো খারাপ স্থানেও যান__ সেখানে দেখা যাবে যে, খারাপ মানুষগুলোর মধ্যে পরিবর্তন সংঘটিত হবে। কয়লার খনিতে হীরা পাওয়া যায়। কিন্তু কয়লার ময়লা হীরাকে স্পর্শ করতে পারে না বরং হীরার আলো পড়লে বেশ খানিকটা জায়গার কালোও আলোকিত হয়ে ওঠে!
এইজন্যেই বুদ্ধের সময়ে নগরবধূ আম্রপালি তাঁর সংস্পর্শে এসে ভিক্ষুণী হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসে নটী বিনোদিনী সহ অন্যান্য নটীরা এবং মথুরবাবুর পরীক্ষার ছলে ঠাকুরের সান্নিধ্যে আসা বেশ্যারা পরবর্তী জীবনে আধ্যাত্মিক হয়ে উঠেছিল।৷
গুরুমহারাজ :– ভগবৎ-চিন্তা করলে কি হয়__তাই জানতে চাইছো তো ! ঠিক আছে আমি বলছি শোনো–দ্যাখো, মানুষ যা চিন্তা করে_ সেই নিয়েই সে চর্চা করতে ভালোবাসে ৷ আর যে ব্যক্তি, যে বিষয়ের উপর অধিক চর্চা করে_ তাই তার জীবনচর্যায় আসে। তাই বলা হয়েছে চিন্তা থেকে চর্চা, আর চর্চা থেকে চর্যা।
ভগবৎ-চিন্তা অর্থাৎ ভগবানের চিন্তা, ঈশ্বর-চিন্তা ! হরির অবতারগণ যখন মানুষ্যশরীরে ধরাধামে লীলা করতে আসেন, তখন তাঁদের বলা হয় ‘ভগবান’। এঁরা যুগপুরুষ – complete man ! এঁদের সবটাই ভালো – এঁদের জীবন চরিতে কোনো কালো দাগ থাকে না। যেগুলি ‘কালো’ বলে মনে হয়__সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, তার পিছনেও মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
যাই হোক, সকল মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ঐরূপ মহৎ মানুষের(ভগবানের) গুন বিশিষ্ট হয়ে ওঠা ! মানুষ সহ যে কোনো জীব দীর্ঘদিন ধরে গভীরভাবে যা চিন্তা করে_কালক্রমে সে তাই হয়ে ওঠে। আধুনিক জীব বিজ্ঞানীরাও একথা স্বীকার করেছে,কারন জীব-বিবর্তনে অভিব্যক্তি(evolution) ও পরিবৃত্তি(mutation) এইভাবেই ঘটে। সুতরাং ভগবৎ-চিন্তায় মানুষ ধীরে ধীরে ভগবৎ-মুখী হয়ে ওঠে, এবং অবশেষে তদ্রুপ প্রাপ্ত হয়। আর এতেই মানবজীবনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়।৷
জিজ্ঞাসু :– কিন্তু শাস্ত্রবাক্য অনুযায়ী তো মহাপুরুষরা সবসময় চলেন না – এইরকমটা কেন হয় ?
গুরুমহারাজ :– মহাপুরুষদের জীবন, তাঁদের আচরণ, তাঁদের উপদেশই তো শাস্ত্র। পূর্বে কোনো মহাপুরুষ, জ্ঞানী বা অবতারপুরুষ যা করেছেন, যা বলেছেন__ তাই নিয়েই আগের আগের শাস্ত্রগুলি রচিত হয়েছিল, পরে যখন আবার কোনো মহাপুরুষ শরীর ধারণ করেছেন__ তখন তাঁদেরকে নিয়ে, তাঁদের উপদেশাবলী নিয়ে নতুন শাস্ত্র লেখা হয়েছে। এরপরে যাঁরা আসবেন তাঁদেরকে নিয়েও আগামীতে আবার শাশ্ত্রগ্রন্থ লেখা হবে। এটা তো একটা continuous process ! যুগোপযোগী ধর্ম প্রবর্তন করতেই তো অবতারদের নতুন শরীর, তাই যুগে যুগে হয় যুগোপযোগী নতুন নতুন শাস্ত্রের আত্মপ্রকাশ !
তবে জানো, কোনো মহাপুরুষের শিক্ষাই পরবর্তীতে ঠিক ঠিক পালন করা হয় না। বর্তমান বৈষ্ণবসমাজে দেখবে__তারা তিলক কাটা, ফুল তোলা, মালা গাঁথা, বিভিন্ন উপাচার সাজানো – এইসবেই কত সময় ব্যয় করে। আবার মুখেও বলে যে, এইসব সাধন-ভজনের অঙ্গ_ এসব না করলে কৃষ্ণপ্রাপ্তি ঘটবে না। কিন্তু ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন ঘটনার কথা, তার মধ্যে এক জায়গায় রয়েছে – একদিন অভিসারে যাবার জন্য ব্রজগোপীনীরা শৃঙ্গার করছিল। এমন সময় কৃষ্ণের বাঁশি উঠলো বেজে ! সেই অবস্থায় গোপিনীদের কেউ একচোখে কাজল পড়েছে – অন্য চোখে পড়ার সময় পায়নি, কেউ এক পায়ে নূপুর পরেছে – অন্য পায়ে পড়া হয়নি, কারো কেশ ছিলখোলা_তগনও বাঁধা হয় নি, কেউ বসন ভালো করে পড়ে নি –কিন্তু ওদিকে বাঁশি বেজে গেছে, তাই তারা সেই বাঁশির সুর শুনে ওই অবস্থাতেই ছুটে চললো কৃষ্ণ দরশনে এবং সেই অবস্থাতেই তাদের সাথে কৃষ্ণের মিলন হোলো, এমনকি রাসে প্রবেশাধিকারও হোলো।
তাহলে__ কি বলবে বলো ! শাস্ত্র অনুযায়ী উত্তরসূরীরা কি চলতে পেরেছে ? এটা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের দোষের কথা বলা হোলো না__এটা শুধু একটা উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা হোলো! আর শুধু বৈষ্ণব সম্প্রদায় নয়, সকল সম্প্রদায়েই এই এক অবস্থা!! লক্ষ্য ছেড়ে উপলক্ষ্যে ফেঁসে গেছে! এইজন্যেই তো এইসব পরম্পরায় আর কোনো উন্নত উত্তরসূরি আসছে না।
জিজ্ঞাসু :– তাহলে মহাপুরুষগণ শরীর ধারণ করে, তাদের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করবেন এবং যেটা করবেন_ সেটাই পরবর্তীর শাস্ত্র হবে ??
গুরুমহারাজ :– আচ্ছা হীনবুদ্ধি তো তোমার !! তোমার বুদ্ধি অনুযায়ী কি এই জগৎ-সংসারের সবকিছু নির্ধারণ হয় ? তা তো__ হয় না !! ‘খেয়াল-খুশি মতো করা’– বলে তুমি কি বলতে চাইছো ? মহাপুরুষগণ কখনোই স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করেন না । খেয়াল-খুশি মতো কাজ করা বলতে কি তুমি উচ্ছৃঙ্খলতা বোঝাচ্ছো নাকি? দ্যাখো__ তাঁরা জানেন যে, তাঁরা যদি বেশ্যাপট্টিতে যান_ তো সেখানে বেশ্যারা তাঁর কাপড় ধরে টানাটানি করতে পারে! তবু প্রয়োজনে, মা জগদম্বার ইচ্ছায় তাঁরা যেতেও পারেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ গেছিলেন, কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে কি ঘটেছিল ? বেশ্যারাই পরিবর্তিত হয়ে গেল_তাই না !
সুতরাং সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যেটা হয়_ এরকমটা তো মহাপুরুষদের ক্ষেত্রে হয়না বা হবেও না। মহাপুরুষ বলতে তুমি কি ভাবছো বা তোমার কি ধারনা__ তা আমি জানিনা, কিন্তু জেনে রাখবে, প্রকৃতপক্ষে মহাপুরুষ তাঁদেরকেই বলা হয়ে থাকে__ যাঁরা আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে, শুধুমাত্র ঈশ্বরের ইচ্ছায় এবং সকলের মঙ্গলার্থে কর্ম করতে করতেই শরীর পাত করে যান। এই অবস্থায় তিনি যদি কোনো খারাপ স্থানেও যান__ সেখানে দেখা যাবে যে, খারাপ মানুষগুলোর মধ্যে পরিবর্তন সংঘটিত হবে। কয়লার খনিতে হীরা পাওয়া যায়। কিন্তু কয়লার ময়লা হীরাকে স্পর্শ করতে পারে না বরং হীরার আলো পড়লে বেশ খানিকটা জায়গার কালোও আলোকিত হয়ে ওঠে!
এইজন্যেই বুদ্ধের সময়ে নগরবধূ আম্রপালি তাঁর সংস্পর্শে এসে ভিক্ষুণী হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসে নটী বিনোদিনী সহ অন্যান্য নটীরা এবং মথুরবাবুর পরীক্ষার ছলে ঠাকুরের সান্নিধ্যে আসা বেশ্যারা পরবর্তী জীবনে আধ্যাত্মিক হয়ে উঠেছিল।৷