জিজ্ঞাসু :– বনগ্রাম আশ্রমে যেরকম কাজের প্রসার দেখতে পাচ্ছি, এ তো বহু টাকার ব্যাপার (১৯৯৫/ঌ৬) ?
গুরুমহারাজ :– বনগ্রাম আশ্রমে (পরমানন্দ মিশন) যা কিছু হোচ্ছে এসবই মা জগদম্বার ইচ্ছায় হোচ্ছে ৷ এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে যা কিছু হবার– সব নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে ! সেখানে আমি আমার ভূমিকাটুকু পালন করছি_ এইমাত্র I জানো, আমি প্রথমবার যখন বনগ্রাম আসি– বলা যেতে পারে তখন আমি শুধু ‘হাতে-পায়ে’ এসেছিলাম ! জাবুইডাঙায় যখন আমি বাস থেকে নামলাম, তখন আমার পকেটে ছিল মাত্র 2 টাকা ! এক প্যাকেট চারমিনার সিগারেট আর একটা দেশলাই__ এক টাকা আশি পয়সা দিয়ে কিনেছিলাম, আর বাকি কুড়ি পয়সা ওখানকারই একজনকে দিয়ে জাবুইডাঙ্গা থেকে আমি এবং দেবেন্দ্রনাথ বনগ্রামের উদ্দেশ্যে হাঁটা লাগিয়েছিলাম ।
এইভাবে শুরু ! তারপর থেকে যা কিছু হয়েছে বা এখনো হয়ে চলেছে এবং পরবর্তীতে আরও কত কিছু হবে –এসবের জন্য আমাদের কোনো সঞ্চিত টাকা ছিল না ! আবার এইসব কাজে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার টাকা লাগানো হয়েছে —এমনটাও যেন ভেবোনা ! যা কিছু হোচ্ছে, সব‌ই সাধারন মানুষের টাকায় ৷
এই কথাগুলো কেন বললাম জানো_ তার কারণ রয়েছে ! অনেকের ধারণা– স্বামী বিবেকানন্দ যেহেতু বিদেশিদের কাছ থেকেই বেলুড় মঠ নির্মাণের অধিকাংশ টাকাটা পেয়েছিলেন –তাই বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনেও হয়তো ঐরকম‌ই বিদেশি অর্থ লগ্নি হোচ্ছে ! কিন্তু এটা ভুল ! কারণ আমাদের আশ্রমের দীক্ষিত বিদেশি ভক্তদের বেশিরভাগ‌ই অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা সমৃদ্ধ নয় । ওরা আধ্যাত্মিক প্রকৃতির মানুষ – তাই ওরা অর্থের পিছনে খুব একটা ছোটে না । যেটুকু কাজ করলে ওদের খাওয়া-পরা এবং বৎসরান্তে একবার ইন্ডিয়ায় আসা যায় – আমাদের আশ্রমের বেশিরভাগ ভক্তই সেই ধরনের কাজ বেছে নিয়ে, শুধু সেইটুকুই রোজগার করে ৷ ওদের দেশে (ইতালি, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশ থেকেই বেশিরভাগ বিদেশি ভক্তরা আসতো) কাজের অভাব নেই ৷ যদি ওরা মনে করে যে, বেশি রোজগার করবে তো_ অনায়াসে তা করতে পারে ! কিন্তু ওই যে একটু আগে বলছিলাম “মানুষের মানসিকতা”-র কথা ! ওদের মানসিকতাই হোলো– ‘plain living” এবং “spiritual thinking” ! সুতরাং এখনো পর্যন্ত (১৯৯৫/৯৬) আশ্রমের development work যা হয়েছে, তার বেশিরভাগ টাকাই আমাদের এখানকার ভক্তদের দেওয়া । তারা আমাকে ভালবাসে, তাই আমার এখানের কাজের অংশীদার হয় । সেই অর্থে_ এখনো পর্যন্ত আশ্রমের কাজে, বিদেশীদের টাকা কমই কাজে লেগেছে । হয়তো পরবর্তীতে ওদের দেশগুলো থেকে পরমানন্দ মিশনের কাজের জন্য বেশি বেশি টাকা আসবে – তবে তার দেরি আছে ।
এখন এখানে অর্থাৎ পরমানন্দ মিশনে যে সমস্ত কাজ হোচ্ছে, তা খুব কষ্ট করেই হোচ্ছে । তোমার মতো অধিকাংশ ভক্তরাই রয়েছো, তোমরা এখানে আসো-যাও –আশ্রমের অর্থনৈতিক সুবিধা-অসুবিধার অতো খবর‌ই রাখো না ! অবশ্য তোমাদের আর কি বলবো__ বনগ্রাম আশ্রমেই থাকে–হয়তো তারা এই আশ্রমের ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসী অর্থাৎ তারা আশ্রমিক, কিন্তু তাদেরও অনেকে খবর রাখেনা যে, এসব কি করে হোচ্ছে ! তৃষাণ-মুরারীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সব কথা জানতে পারবে । প্রচুর টাকা ধার ! ইঁটের (চিমনী)ভাটায় (ধাত্রীগ্রাম) ধার, সিমেন্ট-রড যে দোকান থেকে আসে সেখানে ধার, মিস্ত্রিদের কাছে ধার ! তোমরা হাসছো ! সত্যি বলছি, মিস্ত্রিদের জিজ্ঞাসা করো – ওদের payment-ও সময়মতো দেওয়া যায় না ।
যাই হোক, যা বলছিলাম– পরের জেনারেশন হয়তো বিদেশের টাকা পাবে ! আর তখন আশ্রমের এইসব development-সংক্রান্ত কাজকর্ম আরও smoothly চলতে পারবে ৷ কিন্তু এটা জেনে রাখবে যে, কিছু পেতে গেলেই কিছু হারাতে হয় ! তখন সমৃদ্ধি আসবে কিন্তু মাধুর্য চলে যাবে !!