জিজ্ঞাসু :– পরকীয়া কি ?
গুরুমহারাজ :– দ্যাখো, এই নিয়ে বাংলা ব্যাকরণের অর্থ একরকম, আর বৈষ্ণবশাস্ত্রে এই কথার অন্য রকম অর্থ এবং বহু ব্যাখ্যা, বহু উদাহরণ, বহু গল্পের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ‘পরকীয়া’- কথার অর্থ হচ্ছে “ঘর-সংসারে থেকেও ঈশ্বরে মতি”। শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলায় দেখা যায়__ ব্রজগোপীগণ সংসারী ছিলেন, তাদের স্বামী-সংসার, পুত্র-কন্যা, শশুর-শাশুড়ী সহ অন্যান্য পরিজনেরা ছিল। তাছাড়া, তাদের ছিল গৃহকর্ম অর্থাৎ রান্না-বান্না, গবাদি পশুর দেখভাল, সন্তান প্রতিপালন, অতিথিসেবা-দেবসেবা ইত্যাদি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও অসম্ভব কৃষ্ণপদে মতি ! একবার শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সংকেত শুনতে পেলেই তারা সবাই সব ফেলে ছুটছে – প্রিয়দর্শনের, প্রিয়মিলনের আশায়। এই যে ব্যাপারটা __এটাই পরকীয়া।
এই ব্যাপারটাই পরবর্তীকালের মানুষের লেখায় বিকৃত হয়েছে, মানুষ নিজের মতো করে ঐসব ঘঠনার ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু প্রকৃত পরকীয়া-য় শুধু প্রেম-ই রয়েছে, আর প্রেমের চরম প্রকাশ বা পূর্ণ-প্রকাশ ওই পরকীয়াতেই !
শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর – ভক্তের এই পঞ্চভাব রয়েছে অর্থাৎ প্রেমের পাঁচ ধরনের প্রকাশের কথা ভক্তিশাস্ত্র বর্ণনা করেছে। যেখানে ‘মধুর’-ভাবে প্রেমের প্রকাশকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এই মধুর ভাবটিই ব্রজগোপীদের ভাব – পূর্ণ প্রেমের পরাকাষ্ঠা ! দ্যাখো, যখন বৃন্দাবন লীলার অন্তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অক্রুরের রথে চেপে চলে যাচ্ছেন – তখন গোপীরা পথ আটকালো। শ্রীকৃষ্ণ রথ থেকে নেমে এসে গোপীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন, তাদেরকে তাঁর শরীর ধারণের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বললেন। বললেন, জগৎ-কল্যাণের নিমিত্ত অর্থাৎ ধর্মের সংস্থাপন এবং অধর্মের বিনাশ করতেই তাঁর আসা(অবতরণ)।৷
এসব শোনার পর কিন্তু গোপীরা আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আটকালো না – তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিলো। বলল, ” তোমার ইচ্ছা এবং তোমার উদ্দেশ্য সফল হোক, পূর্ণ হোক ! তাতে আমাদের যতই কষ্ট হোক, আমরা সব সহ্য করে নেব – শুধু তোমার মঙ্গল হোক, তোমার কুশল হোক ! তোমার আনন্দেই আমাদের আনন্দ ! ঐ যে গানে রয়েছে_’তোমার কুশলে কুশল মানি’।”
ভারতবর্ষ ছাড়া অন্যান্য দেশের তেমন ভক্তিশাস্ত্র কই ! বিদেশীয় বিভিন্ন দার্শনিকরা “প্রেমের” নানা রকম ব্যাখ্যা করেছে কিন্তু সেগুলি কোনোটাই যথাযথ নয়। কারণ প্রেমের সঠিক সংজ্ঞা ওরা জানেই না। ওরা বলেছে যৌনতা থেকেই প্রেমের উদ্ভব – কিন্তু এটা সত্য নয়। বেদ বলেছে “আদি রস”, আরো বলেছে “রসো বৈ সঃ” ! সুতরাং আদিরস থেকে প্রেম। যৌনতাও আদিরস থেকেই উদ্ভূত – কিন্তু এটা যেন বিকৃত অবস্থা ! আর আদিরসের চূড়ান্ত মন্থন অবস্থা প্রেম। যেমন দুধ থেকে মন্থন করে তুমি ননী, মাখন, ঘি পেতে পারো, আবার অম্ল মিশিয়ে তাকে বিকৃত স্বাদের দই-ও বানাতে পারো। সবের-ই প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু দই থেকে তো ঘি হয় না – তাই না! ইউরোপীয়রা এই concept দিয়েছে – যেটি ভুল ! ওদের প্রেমের ধারণা নেই। ‘যথার্থ প্রেম’ বুঝতে গেলে তোমাকে বৃন্দাবনের গোপী হতে হবে৷ বলতে হবে “তোমার সুখেই আমার সুখ, তোমার আনন্দেই আমার আনন্দ, ‘তোমার কুশলে কুশল মানি’।”
গুরুমহারাজ :– দ্যাখো, এই নিয়ে বাংলা ব্যাকরণের অর্থ একরকম, আর বৈষ্ণবশাস্ত্রে এই কথার অন্য রকম অর্থ এবং বহু ব্যাখ্যা, বহু উদাহরণ, বহু গল্পের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ‘পরকীয়া’- কথার অর্থ হচ্ছে “ঘর-সংসারে থেকেও ঈশ্বরে মতি”। শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলায় দেখা যায়__ ব্রজগোপীগণ সংসারী ছিলেন, তাদের স্বামী-সংসার, পুত্র-কন্যা, শশুর-শাশুড়ী সহ অন্যান্য পরিজনেরা ছিল। তাছাড়া, তাদের ছিল গৃহকর্ম অর্থাৎ রান্না-বান্না, গবাদি পশুর দেখভাল, সন্তান প্রতিপালন, অতিথিসেবা-দেবসেবা ইত্যাদি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও অসম্ভব কৃষ্ণপদে মতি ! একবার শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সংকেত শুনতে পেলেই তারা সবাই সব ফেলে ছুটছে – প্রিয়দর্শনের, প্রিয়মিলনের আশায়। এই যে ব্যাপারটা __এটাই পরকীয়া।
এই ব্যাপারটাই পরবর্তীকালের মানুষের লেখায় বিকৃত হয়েছে, মানুষ নিজের মতো করে ঐসব ঘঠনার ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু প্রকৃত পরকীয়া-য় শুধু প্রেম-ই রয়েছে, আর প্রেমের চরম প্রকাশ বা পূর্ণ-প্রকাশ ওই পরকীয়াতেই !
শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর – ভক্তের এই পঞ্চভাব রয়েছে অর্থাৎ প্রেমের পাঁচ ধরনের প্রকাশের কথা ভক্তিশাস্ত্র বর্ণনা করেছে। যেখানে ‘মধুর’-ভাবে প্রেমের প্রকাশকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এই মধুর ভাবটিই ব্রজগোপীদের ভাব – পূর্ণ প্রেমের পরাকাষ্ঠা ! দ্যাখো, যখন বৃন্দাবন লীলার অন্তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অক্রুরের রথে চেপে চলে যাচ্ছেন – তখন গোপীরা পথ আটকালো। শ্রীকৃষ্ণ রথ থেকে নেমে এসে গোপীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন, তাদেরকে তাঁর শরীর ধারণের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বললেন। বললেন, জগৎ-কল্যাণের নিমিত্ত অর্থাৎ ধর্মের সংস্থাপন এবং অধর্মের বিনাশ করতেই তাঁর আসা(অবতরণ)।৷
এসব শোনার পর কিন্তু গোপীরা আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আটকালো না – তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিলো। বলল, ” তোমার ইচ্ছা এবং তোমার উদ্দেশ্য সফল হোক, পূর্ণ হোক ! তাতে আমাদের যতই কষ্ট হোক, আমরা সব সহ্য করে নেব – শুধু তোমার মঙ্গল হোক, তোমার কুশল হোক ! তোমার আনন্দেই আমাদের আনন্দ ! ঐ যে গানে রয়েছে_’তোমার কুশলে কুশল মানি’।”
ভারতবর্ষ ছাড়া অন্যান্য দেশের তেমন ভক্তিশাস্ত্র কই ! বিদেশীয় বিভিন্ন দার্শনিকরা “প্রেমের” নানা রকম ব্যাখ্যা করেছে কিন্তু সেগুলি কোনোটাই যথাযথ নয়। কারণ প্রেমের সঠিক সংজ্ঞা ওরা জানেই না। ওরা বলেছে যৌনতা থেকেই প্রেমের উদ্ভব – কিন্তু এটা সত্য নয়। বেদ বলেছে “আদি রস”, আরো বলেছে “রসো বৈ সঃ” ! সুতরাং আদিরস থেকে প্রেম। যৌনতাও আদিরস থেকেই উদ্ভূত – কিন্তু এটা যেন বিকৃত অবস্থা ! আর আদিরসের চূড়ান্ত মন্থন অবস্থা প্রেম। যেমন দুধ থেকে মন্থন করে তুমি ননী, মাখন, ঘি পেতে পারো, আবার অম্ল মিশিয়ে তাকে বিকৃত স্বাদের দই-ও বানাতে পারো। সবের-ই প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু দই থেকে তো ঘি হয় না – তাই না! ইউরোপীয়রা এই concept দিয়েছে – যেটি ভুল ! ওদের প্রেমের ধারণা নেই। ‘যথার্থ প্রেম’ বুঝতে গেলে তোমাকে বৃন্দাবনের গোপী হতে হবে৷ বলতে হবে “তোমার সুখেই আমার সুখ, তোমার আনন্দেই আমার আনন্দ, ‘তোমার কুশলে কুশল মানি’।”