জিজ্ঞাসু :– ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরের শরীরে ‘বাউল’ হোতে চাইলেন কেন ?
গুরুমহারাজ :– কথাতেই রয়েছে__’ভগবানের লীলা’ ! আর ‘লীলা’ কখনোই একরকম হয় না৷ ভিন্ন ভিন্ন শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ভাব – ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আস্বাদন ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ‘বাউল ভাবে’ আসতে চেয়েছিলেন –সেটা একান্ত তাঁর নিজের (ভগবানের) ইচ্ছা ! এখানে ‘বাউল ভাব’ মানে বেদান্তের ভাব। বেদে আচার আছে, বেদান্তে নাই। বাউলের কাছে উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধন, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ভেদ নাই, আপন-পর পৃথক নাই ! সবাই আপন, সব জায়গাতেই তার ঘর। বাউলের ধর্ম ‘চলা আর বলা’। বাউলের কোনো উচ্ছিষ্ট-অনুচ্ছিষ্ট, শুদ্ধ-অশুদ্ধের ভেদও নাই। ‘বাউল’ কথাটি এসেছে ‘বাতুল’ থেকে অর্থাৎ যিনি ঈশ্বরীয় কথা ছাড়া অন্য কিছু বলেন না৷ বাউলকে বলা হয় পাগল, অর্থাৎ যিনি পেয়েছেন বা লাভ করেছেন। তিনি ইষ্টদর্শন করেছেন, তিনি জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, তিনি আত্মতত্ত্বের বোধে আত্মহারা – তাই তিনি ক্ষ্যাপা বা বাউল।
বাউল জানে দেহভাণ্ডে-ই ব্রহ্মাণ্ড-তত্ত্ব বিদ্যমান। তাই সে জীবনের পূজারী, বাউল জানে এই দেহ দিয়েই ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার করা যায়, সাক্ষাৎ ঈশ্বরের সেবা করা যায় – তাই দেহকে শুদ্ধ বা পবিত্র রাখা প্রয়োজন। এইজন্যই দেহতত্ত্বের কথা বলে বাউল। নিজেকে জেনেই ঈশ্বরকে জানতে হয়, আত্মতত্ত্ব থেকেই ব্রহ্মতত্ত্ব। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, সাধক বামদেব এঁরা মায়ের পূজা করার সময় নিজের মাথাতেই ফুল চাপাতেন, নৈবেদ্যের প্রসাদ নিজের মুখেই দিতেন আর বলতেন “নে মা খা !” এটাই আত্মপূজা আর আত্মপূজাই শ্রেষ্ঠ পূজা।
বাউলের কোনো সংস্কার থাকে না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অবশ্য কিছু সংস্কার বজায় রেখেছিলেন। এটা উনি করেছিলেন__ দেশ-কাল-পাত্রের কথা ভেবে, কিন্তু সারদা মা সংস্কারমুক্ত ছিলেন। আর আমার কথা যদি বলো – আমি তো তোমাদের সাথে এক সারিতে বসে খাই (পিকনিক বা কারো বাড়িতে খাবার সময়_আমরা এটা দেখেছিলাম।)। এইভাবে খাবার সময় কোনো বাচ্চা ছেলে হয়তো এঁটো দিয়ে দিল –তাতে আমার কোনো অসুবিধাই হয় না। আমার ঘরে রাত্রে দেশী বা বিদেশী ভক্তরা অনেকে আসে– ওরাও অনেকটা সংস্কারমুক্ত, ফলে অনেক সময় আমরা এক জায়গাতেই মুড়ি-ঝুড়িভাজা মেখে সবাই মিলে খাই। হয়তো আমিই চা বানালাম, সবাই মিলে আনন্দ করে খেলাম। শংকরানন্দ মহারাজ, সব্যসাচী মান্না – এরা তো সব এখানকারই দীক্ষিত, কিন্তু বাইরে ঘোরার সময় আমি এদের কত সেবা করেছি, ওদের নোংরা জামা-কাপড় কেচে দিয়েছি। এসব করতে আমার কখনোই কোনো অসুবিধা বোধ হয় নি।
যাই হোক, যে কথা হচ্ছিলো__ বর্তমান যে যুগটা দেখছো, সেই যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে বাউলভাব বা বাউলমত-ই গ্রহণযোগ্য হবে_অন্য কোনো ভাব বা অন্য কোনো মত নয়। আগামীর কথা ভগবান ছাড়া, তাঁর চেয়ে বেশি আর কে জানতে পারে ! কারণ যুগাবতার হয়ে তাঁকেই তো যুগধর্ম সংস্থাপন করতে হবে।
বর্তমানে যত ধর্মমত পৃথিবীতে রয়েছে_সেইগুলির প্রধান সমস্যা হোলো সঙ্কীর্ণতা ও গোঁড়ামি। এইযুগের ছেলে-মেয়েরা এইগুলির মধ্যে নিজেদেরকে আটকে রাখতে চায় না_তারা নিয়ম-শাসন-বারণ এইসব কোনো কিছুর ধার ধারে না। প্রাশ্চাত্তের উন্নত দেশগুলির ছেলেমেয়েরা বেশ কিছুদিন আগেই ঐসব থেকে বেরিয়ে এসেছে__এখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর তরুন-তরুনীরাও নিজেদেরকে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে আর আবদ্ধ থাকতে চাইছে না। কিন্তু ধর্ম তো আশ্রয় করতেই হবে__তাই এ যুগের যূগধর্ম বাউলভাব বা বাউলমত।
বাউল মতে কোনোরকম সঙ্কীর্ণতা নাই। সব কিছুই welcome ! তাই তো বাউলরাই বলতে পারে__” আমি মরছি ঘুরে সেই শহরের সহজ ঠিকানা__যেথা আল্লা, হরি,রাম,কালী, গড–এক থালাতে খায় খানা।”
গুরুমহারাজ :– কথাতেই রয়েছে__’ভগবানের লীলা’ ! আর ‘লীলা’ কখনোই একরকম হয় না৷ ভিন্ন ভিন্ন শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ভাব – ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আস্বাদন ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ‘বাউল ভাবে’ আসতে চেয়েছিলেন –সেটা একান্ত তাঁর নিজের (ভগবানের) ইচ্ছা ! এখানে ‘বাউল ভাব’ মানে বেদান্তের ভাব। বেদে আচার আছে, বেদান্তে নাই। বাউলের কাছে উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধন, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ভেদ নাই, আপন-পর পৃথক নাই ! সবাই আপন, সব জায়গাতেই তার ঘর। বাউলের ধর্ম ‘চলা আর বলা’। বাউলের কোনো উচ্ছিষ্ট-অনুচ্ছিষ্ট, শুদ্ধ-অশুদ্ধের ভেদও নাই। ‘বাউল’ কথাটি এসেছে ‘বাতুল’ থেকে অর্থাৎ যিনি ঈশ্বরীয় কথা ছাড়া অন্য কিছু বলেন না৷ বাউলকে বলা হয় পাগল, অর্থাৎ যিনি পেয়েছেন বা লাভ করেছেন। তিনি ইষ্টদর্শন করেছেন, তিনি জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, তিনি আত্মতত্ত্বের বোধে আত্মহারা – তাই তিনি ক্ষ্যাপা বা বাউল।
বাউল জানে দেহভাণ্ডে-ই ব্রহ্মাণ্ড-তত্ত্ব বিদ্যমান। তাই সে জীবনের পূজারী, বাউল জানে এই দেহ দিয়েই ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার করা যায়, সাক্ষাৎ ঈশ্বরের সেবা করা যায় – তাই দেহকে শুদ্ধ বা পবিত্র রাখা প্রয়োজন। এইজন্যই দেহতত্ত্বের কথা বলে বাউল। নিজেকে জেনেই ঈশ্বরকে জানতে হয়, আত্মতত্ত্ব থেকেই ব্রহ্মতত্ত্ব। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, সাধক বামদেব এঁরা মায়ের পূজা করার সময় নিজের মাথাতেই ফুল চাপাতেন, নৈবেদ্যের প্রসাদ নিজের মুখেই দিতেন আর বলতেন “নে মা খা !” এটাই আত্মপূজা আর আত্মপূজাই শ্রেষ্ঠ পূজা।
বাউলের কোনো সংস্কার থাকে না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অবশ্য কিছু সংস্কার বজায় রেখেছিলেন। এটা উনি করেছিলেন__ দেশ-কাল-পাত্রের কথা ভেবে, কিন্তু সারদা মা সংস্কারমুক্ত ছিলেন। আর আমার কথা যদি বলো – আমি তো তোমাদের সাথে এক সারিতে বসে খাই (পিকনিক বা কারো বাড়িতে খাবার সময়_আমরা এটা দেখেছিলাম।)। এইভাবে খাবার সময় কোনো বাচ্চা ছেলে হয়তো এঁটো দিয়ে দিল –তাতে আমার কোনো অসুবিধাই হয় না। আমার ঘরে রাত্রে দেশী বা বিদেশী ভক্তরা অনেকে আসে– ওরাও অনেকটা সংস্কারমুক্ত, ফলে অনেক সময় আমরা এক জায়গাতেই মুড়ি-ঝুড়িভাজা মেখে সবাই মিলে খাই। হয়তো আমিই চা বানালাম, সবাই মিলে আনন্দ করে খেলাম। শংকরানন্দ মহারাজ, সব্যসাচী মান্না – এরা তো সব এখানকারই দীক্ষিত, কিন্তু বাইরে ঘোরার সময় আমি এদের কত সেবা করেছি, ওদের নোংরা জামা-কাপড় কেচে দিয়েছি। এসব করতে আমার কখনোই কোনো অসুবিধা বোধ হয় নি।
যাই হোক, যে কথা হচ্ছিলো__ বর্তমান যে যুগটা দেখছো, সেই যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে বাউলভাব বা বাউলমত-ই গ্রহণযোগ্য হবে_অন্য কোনো ভাব বা অন্য কোনো মত নয়। আগামীর কথা ভগবান ছাড়া, তাঁর চেয়ে বেশি আর কে জানতে পারে ! কারণ যুগাবতার হয়ে তাঁকেই তো যুগধর্ম সংস্থাপন করতে হবে।
বর্তমানে যত ধর্মমত পৃথিবীতে রয়েছে_সেইগুলির প্রধান সমস্যা হোলো সঙ্কীর্ণতা ও গোঁড়ামি। এইযুগের ছেলে-মেয়েরা এইগুলির মধ্যে নিজেদেরকে আটকে রাখতে চায় না_তারা নিয়ম-শাসন-বারণ এইসব কোনো কিছুর ধার ধারে না। প্রাশ্চাত্তের উন্নত দেশগুলির ছেলেমেয়েরা বেশ কিছুদিন আগেই ঐসব থেকে বেরিয়ে এসেছে__এখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর তরুন-তরুনীরাও নিজেদেরকে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে আর আবদ্ধ থাকতে চাইছে না। কিন্তু ধর্ম তো আশ্রয় করতেই হবে__তাই এ যুগের যূগধর্ম বাউলভাব বা বাউলমত।
বাউল মতে কোনোরকম সঙ্কীর্ণতা নাই। সব কিছুই welcome ! তাই তো বাউলরাই বলতে পারে__” আমি মরছি ঘুরে সেই শহরের সহজ ঠিকানা__যেথা আল্লা, হরি,রাম,কালী, গড–এক থালাতে খায় খানা।”