জিজ্ঞাসু :– আপনি বলেছিলেন জীবকোটি কুলকুন্ডলিনী শক্তিকে জাগিয়ে মূলাধার চক্র থেকে আজ্ঞাচক্র পর্যন্তই যেতে পারে – তারপর আর পারে না। কিন্তু পরপর তো আরও নানান অবস্থা রয়েছে, তারপরের অবস্থাগুলি কি কি?
গুরুমহারাজ :– তুমি যেমনভাবে বলছো_ তাতে মনে হোচ্ছে তুমি যেন বনগ্রাম থেকে পারহাটি হয়ে মেমারি যেতে চাইছো! পারহাটিতে একটু বিশ্রাম !! (সবাই হেসে উঠল)। দ্যাখো বাবা ! এগুলি যোগশাস্ত্রের ব্যাপার। যাদের সংস্কারে এসব রয়েছে তারা রাজযোগ, হঠযোগ ইত্যাদি যোগসাধনা করে। তবে কুলকুণ্ডলিনীর ক্রিয়া যেকোনো যোগেই হোতে পারে, সে ভক্তিযোগই হোক বা কর্মযোগ অথবা জ্ঞানযোগ। কুলকুণ্ডলিনীর জাগরণ ঘটাতে একটা তীব্র force প্রয়োজন হয়, এটা inner force ! যে কোনো আবেগ তা ‘অতি’ অর্থাৎ অত্যন্ত বেশি হোলেই কুলকুণ্ডলিনীর জাগরন ঘটে যায়। অতি আনন্দ, অতি দুঃখ, অতি আঘাত ইত্যাদি যেকোনো ব্যাপার থেকেই কুলকুণ্ডলিনী জেগে যায়। কিন্তু স্থায়ী হয় না – যতটা ওঠে আবার ওই অবস্থা কেটে গেলে ফরফর করে নিচের দিকে নেমে যায়। যে কোনো যোগক্রিয়াতেও কুলকুণ্ডলিনীর জাগরন হয়, আর সেই যোগ নিয়মিত ও নিষ্ঠাভরে অভ্যাস করলেই জাগ্রত কুলকুণ্ডলিনীর ঊর্ধ্বগতি লাভ হয়। শরীরের যেসব বিভিন্ন endrocrine gland রয়েছে, সেইগুলিকে যোগের ভাষায় ‘চক্র’ বলা হয়েছে। ধ্যানের গভীরতায় কুলকুণ্ডলিনীর ঊর্ধ্বগতি প্রত্যক্ষ করা যায় এবং এক একটি চক্র যখন এই মহাশক্তি অতিক্রম করে_ তখন সেখানে কী ঘটে, তার রূপ-বর্ণ-অবস্থা কিরূপ ঘটে, সব জানা যায়। ঋষিরা এসব প্রত্যক্ষ করেই মূলাধার, মনিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞাচক্রের বর্ণ, পদ্মের কর্ণিকা বা দলসংখ্যা, মন্ত্র, দেব-দেবী – এগুলি সব বর্ণনা করে গেছেন।
যোগশাস্ত্রে এসবই বর্ণনা রয়েছে। যে কোনো যোগী এগুলি এখনো প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এর কোনো স্থূলরূপ নেই, সূক্ষ্ম বা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রূপ রয়েছে। [ক্রমশঃ]
( পরবর্তী অংশ পরের সংখ্যায় )