[কুলকুন্ডলিনী শক্তি জাগরণের কথা হচ্ছিলো।আজ তার পরবর্তী অংশ]
……. কুলকুণ্ডলিনী আজ্ঞাচক্রে স্থিত হোলে সাধক সিদ্ধ হয়। বীজ সিদ্ধ করলে যেমন তাতে আর অঙ্কুর হয় না, তেমনি এই অবস্থা প্রাপ্ত হোলে সাধককে আর কামনা-বাসনা জনিত কোনো ঝামেলায় জড়াতে হয় না অর্থাৎ কামনা-বাসনা জনিত কারণে ফিরে ফিরে আসা জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে আর পড়তে হয় না। কিন্তু এটাই শেষ নয় –প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে ‘আধ্যাত্মিকতা’-র এখান থেকে শুরু!!
আজ্ঞাচক্রের উপরে সপ্তাকাশ রয়েছে – নাদ, বিসর্গ, ষোড়শী, নির্বাণ, কুমারী, উমা, বিন্দু … ইত্যাদি।
এই যে তন্ত্রমতে কুমারী পূজার ব্যবস্থা আছে, সেগুলি তো বাহ্যিক। কিন্তু আসল কুমারী পূজা হয় সেই সাধকের দ্বারা – যাঁর স্থিতি আজ্ঞাচক্রের উপরে। দ্যাখো, “ধর্ম” হোলো শাশ্বত সনাতন ! মানুষ তাকে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছে। বাহ্যপূজা যা কিছু হয় সেগুলি সবই অন্তঃপূজার স্থূলরূপ ! সাধারণ মানুষ যেহেতু স্থূলজগত নিয়ে রয়েছে – তাই স্থূলপূজা বা বাহ্যপূজার বিধান ! প্রকৃত পূজা তো অন্তঃপূজা !! সেখানে সদা-সর্বদা পূজা হয়ে চলেছে! সদাসর্বদা আরতি হয়ে চলেছে! তাই সাধারণ পূজা অপেক্ষা সাধকের পূজা শ্রেষ্ঠ । আবার সাধকের পূজা অপেক্ষা সিদ্ধের পূজা আরও উৎকৃষ্ট ! রামায়ণে বর্ণিত রয়েছে যে, রাম তার সংকল্পকৃত শক্তিপূজার ভার_ সিদ্ধ পূজক রাবণকে দিয়েছিল।
ব্রাহ্মণ্যবাদ শুরুর যুগ থেকে_সনাতন ধর্ম, তার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। যখন থেকে রাজন্যবর্গের সঙ্গে পুরোহিতদের আঁতাতে__ সমাজে জাতিভেদ, বর্ণভেদ ইত্যাদির প্রকৃত অর্থ না বুঝে পৃথক পৃথক গোষ্ঠীতে সমাজকে বিভক্ত করলো এবং কেউ উঁচু, কেউ নিচু – এইভাবে ভাগ করতে শুরু করলো, তখন থেকেই বৈদিক সনাতন ধর্মের অধঃপতন শুরু হয়েছিলো। ব্রাহ্মণ ছাড়া শূদ্রের বা নারীর পূজার অধিকার নাই, ওঁকারের অধিকার নাই, যজ্ঞের অধিকার নাই_ইত্যাদি বিধান এসে গেল। দক্ষিণ ভারত তো আরো একধাপ এগিয়ে ছিল__ শুদ্রদের মন্দিরে ওঠা বারন, শূদ্রাণীদের গায়ের কাপড় খুলে রাস্তায় যেতে হবে ইত্যাদি।
কিন্তু দ্যাখো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বা ঈশ্বরের অবতারেরা, এমনকি উন্নত গুরু বা মহাপুরুষগণ কোথায় কবে এসব কথা বলেছে ? উপনিষদ-গীতা এইগুলি তো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ __ সেখানে কোথায় এইসব বিধান রয়েছে বলো ? এগুলো ব্রাহ্মণ্যবাদের কুফল। পুরোহিত সমাজ নিজেদের স্বার্থ কায়েম করার জন্য কোনো সময় সমাজে এইসব নিয়ম চালু করেছিল – আজও উত্তরসূরীরা তার কুফল ভোগ করছে। স্বামী বিবেকানন্দ সহ বিভিন্ন মহাপুরুষগণ এই ধরনের কুসংস্কারগুলি ভেঙে ফেলার জন্য কত চেষ্টা করেছেন – তাতে যে একেবারেই কাজ হয়নি বা হোচ্ছে না তা নয়, কিন্তু মূল উৎপাটন করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সংস্কার এমন ভাবে মানুষের মনে গেড়ে বসে আছে যে, তাকে মুছে ফেলা যাচ্ছে না ! [ক্রমশঃ]
(পরের দিন শেষাংশ)