জিজ্ঞাসু :– আপনি, আপনার প্রথম বনগ্রাম আসার কথা বলছিলেন –?
গুরুমহারাজ :– হ্যাঁ, প্রথম বনগ্রামে এসেছিলাম ১৯৭৮ সালে, এপ্রিলের শেষ দিকে । তার আগেই Rural electrification-এর চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম,কারণ যে জন্য আমার চাকরি করা, আর তার কোনো প্রয়োজন ছিল না ৷ চাকরিসূত্রে আমি যখন মাঝেরগ্রাম (মধ্যমগ্রাম)-এ থাকতাম, তখনই ওখানকার হাইস্কুলের হেডমাস্টার দেবীবাবুর (দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ন’কাকার বড়দাদা)সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল । তৃষাণ(বর্তমান স্বামী পরমেশ্বরানন্দ)-এর সাথে তো আমার পরিচয় তার আগেই হয়ে গিয়েছিল! তৃষাণ এবং দেবীবাবুর পরিবারের সদস্যদের কাছে ন’কাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র কথা এবং ওনাদের বাড়ির কালীমন্দিরের কথা শুনেছিলাম । আমার জানা ছিল যে, আমার সেখানেই কর্মক্ষেত্র হবে__যেখানে বহু প্রাচীন শক্তিপীঠ থাকবে এবং সেখানে একজন মাতৃসাধক থাকবেন ৷ সেইসময় দেবেন্দ্রনাথ (অন্ধপ্রদেশের একজন ভক্ত যার পরে সন্ন্যাস নাম হয় স্বামী বিশুদ্ধানন্দ, মাঝেরগ্রামে থাকাকালীন আলাপ হয়েছিল।) আমাদের সাথেই ছিল –ফলে আমরা দুজনে একসাথে বনগ্রামে এসেছিলাম । বনগ্রামে পৌঁছে আমি মুখার্জিদের কালী মন্দিরের দাওয়ায় এসে বসেছিলাম । তখন মন্দিরটা অন্যরকম ছিল – মায়ের মূর্তিও ছিল আলাদা ৷ ওখানে বসেই আমার মধ্যে অনন্তশক্তির ক্রিয়া শুরু হোতে শুরু করলো, এরপরে আমার আর কোনো স্থূলচেতনা ছিল না ! অনেকক্ষণ পর শরীরের বোধ এসেছিল ৷ ঐ সময়ের মধ্যেই ✓রী-মা আমাকে বনগ্রামের ব্যাপারে সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছিলেন । সেই থেকে মুখার্জি বাড়িতেই আমার থাকা এবং খাওয়া শুরু হয়েছিলো । ঐদিনে ✓রী-মা আমাকে দেখিয়েছিলেন যে এই বাড়ি(মুখার্জি বাড়ি), এই স্থান সব ✓রী-মায়ের, অন্য কারো নয় ! তাই এখানে থাকা বা খাওয়া মানেই ✓রী-মায়ের কাছে থাকা বা ✓রীমায়ের অন্ন খাওয়া । সেই থেকে আজ পর্যন্ত অর্থাৎ এখানে আশ্রম প্রতিষ্ঠা বা আমার আলাদা ঘর হবার পরেও- আমি সময় পেলেই সকাল-সন্ধ্যা মুখার্জী বাড়ীতে এবং কালীমন্দিরের প্রাঙ্গণে যাই । মুখার্জি বাড়ির অন্ন না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি দুপুরের আহার গ্রহণ করি না !
এখন অবশ্য আমি খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, কাজ অনেক বেড়ে গেছে, ভক্তসংখ্যার আসা-যাওয়া বেড়েছে –সকলের সাথে communication করতেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। তাই সকালে আর ঐ বাড়িতে যাওয়া হয় না, কিন্তু আশ্রমে থাকলে সাধারণত প্রতি সন্ধ্যায় আমি মুখার্জি বাড়ি যাই ।
মুখার্জিবাড়িতে যাওয়া যখন একদম কমে যাবে, অথবা আর যেতেই পারবো না – তখন জানবে আমার এখানকার কাজ শেষ হয়ে আসছে । পরমানন্দের লীলা অবসানের সময় হয়ে গেছে !!