[কুলকুন্ডলিনী শক্তির জাগরণ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গুরুজী মধ্যযুগে ব্রাহ্মণ্যবাদের কুফলের কথাও তুলেছিলেন। আজ এই আলোচনার শেষাংশ।]
… সূর্য-চন্দ্রের আলো, প্রকৃতির বাতাস-কৃষ্টি এগুলি কি কারো ব্যক্তিগত ? কেউ দাবী করতে পারে – যে ওইগুলিতে শুধু আমার বা আমাদের অধিকার__ আর কারো অধিকার নাই !! তেমনি ওঁকারও মহাবিশ্বপ্রকৃতি থেকে উদ্ভূত নাদ্। এতেও সবার অধিকার। ওঁকার বা প্রণবও কারো ব্যক্তিগত নয়। ওঁকার সবাই উচ্চারণ করতে পারে – নারী-শূদ্র বলে কোনো ভেদ নাই। ওঁকার-ই মহাসঙ্গীত, প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বে এই নাদ্ ধ্বনিত হয়ে চলেছে সৃষ্টির ছন্দে ছন্দে। প্রণব থেকেই সমস্ত কিছুর সৃষ্টি ! ওঁকার বা প্রণব উচ্চারণ করলে মানুষের আত্মশক্তি বা আত্মতেজ বাড়ে। এটা ঋষিরা উপলব্ধি করে সমস্ত মন্ত্রের আগে ও শেষে ওঁকার যুক্ত করেছিলেন।
কিন্তু বুদ্ধপরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণ্যপ্রথা__ সমাজে যখন কায়েমী হয়ে বসেছিল, তখনই শূদ্র ও নারীকে বেদের অধিকার এবং প্রণব মন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। আর এটা করা হয়েছিল শুধুমাত্র যাতে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ছাড়া অন্যদের আত্মশক্তি জাগ্রত না হয় – তার জন্য। এই কথাটা সত্যি জানবে ! কারণ, বেদ কারো উপর কখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি__ জারি করেছে সমাজনেতারা। যুগে যুগে ঋষি-মহাত্মা-মহাজনেরা শরীর নিয়েছেন ঠিকই– কিন্তু তাঁরা আচার্যের ভূমিকা পালন করে গেছেন আর সমাজ শাসিত হয়েছে ক্ষাত্রশক্তির দ্বারা। এবার কথা হোচ্ছে, এই ক্ষাত্রশক্তি বা রাজন্যবর্গ আবার পরিচালিত হোতো মন্ত্রণাদাতা মন্ত্রী বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় দ্বারা ! যে রাজার গুরুদেব ত্যাগী-সন্ন্যাসী ছিল এবং রাজা তাঁর গুরুদেবের নির্দেশ মেনে রাজ্য চালাতেন, সেই রাজা সুশাসক হিসাবে অবশ্যই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন্ত্রণাদাতারাও স্বার্থদোষযুক্ত হয়ে পড়তো। ফলে প্রজার স্বার্থ, সাধারণ মানুষের স্বার্থ আর দেখে ওঠা হয়ে ওঠেনি। নিজের নিজের চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই সময় চলে যেতো।
ধর্মনেতাদের কথা ধরলে দেখা যাবে যে, তারাও সেই একই দলে পড়ে যাবে ! দ্যাখো, ‘ধার্মিক ব্যক্তি’ আলাদা আর ‘ধর্মনেতা’ আলাদা ! যে কোনো মহাপুরুষ – তা তিনি যে কোনো ধর্মমতের-ই হ’ন না কেন, তাঁরা কখনোই মানুষকে ভুল পথে চালিত করেন না। সেই ধার্মিক মহাপুরুষদের মৃত্যুর পর থেকে, তাঁর অনুগামীদের দ্বারা বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয় ! অনুগামীদের গন্যমান্য যারা, তারা মহাপুরুষদের নাম দিয়ে নিজেদেরকে অর্থাৎ নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর তা করতে গিয়েই অন্য মতাবলম্বীদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। আর এই সংঘাতই দীর্ঘকালব্যাপী চলতে থাকে।
তাই সমাজে সবসময়েই ভালো মানুষ, খাঁটি মানুষের প্রয়োজন হয়। বর্তমান সমাজে জটাজুটধারী গেরূয়া পোশাকে সজ্জিত সন্ন্যাসী, তিলক-মালায় শোভিত বৈষ্ণব, টুপি-পড়া দাড়িওয়ালা মোল্লা-হাফেজ অর্থাৎ বিভিন্ন ধর্মমতের অন্তঃসারশূন্য ভেকধারী ‘সাজা’ধর্মনেতাদের এখন কোনো প্রয়োজন নাই, এখন প্রয়োজন হোলো খাঁটি মানুষের ! যে মানুষ, শ্রেনী-জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধে উঠে__ অপর মানুষদের ব্যাথা বুঝবে, নিজে ‘মানুষ’ হয়ে–অন্য মানুষের জন্য কাজ করবে, কোনো বিশেষ ধর্মমতের জন্য__ কোনো জাতি-বর্ণের জন্য বা নিজের সংকীর্ণ স্বার্থপূরণের জন্য নয়।৷
সেই মানুষকেই স”সহজ মানুষ” বলা হয়েছে। এইরূপ মানুষের হাত ধরেই মানবসমাজের অগ্রগতি হয়ে থাকে। এঁদেরকেই ‘যুগপুরূষ’ বলা হয়। বিশেষ বিশেষ সময়ে, বিশেষ স্থানে শরীর ধারণ করে__এঁরা যুগধর্ম প্রচার করেন এবং মানুষের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে __তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটিয়ে যান।। এইভাবেই চলে ঈশ্বরের লীলার জগৎ !!
… সূর্য-চন্দ্রের আলো, প্রকৃতির বাতাস-কৃষ্টি এগুলি কি কারো ব্যক্তিগত ? কেউ দাবী করতে পারে – যে ওইগুলিতে শুধু আমার বা আমাদের অধিকার__ আর কারো অধিকার নাই !! তেমনি ওঁকারও মহাবিশ্বপ্রকৃতি থেকে উদ্ভূত নাদ্। এতেও সবার অধিকার। ওঁকার বা প্রণবও কারো ব্যক্তিগত নয়। ওঁকার সবাই উচ্চারণ করতে পারে – নারী-শূদ্র বলে কোনো ভেদ নাই। ওঁকার-ই মহাসঙ্গীত, প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বে এই নাদ্ ধ্বনিত হয়ে চলেছে সৃষ্টির ছন্দে ছন্দে। প্রণব থেকেই সমস্ত কিছুর সৃষ্টি ! ওঁকার বা প্রণব উচ্চারণ করলে মানুষের আত্মশক্তি বা আত্মতেজ বাড়ে। এটা ঋষিরা উপলব্ধি করে সমস্ত মন্ত্রের আগে ও শেষে ওঁকার যুক্ত করেছিলেন।
কিন্তু বুদ্ধপরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণ্যপ্রথা__ সমাজে যখন কায়েমী হয়ে বসেছিল, তখনই শূদ্র ও নারীকে বেদের অধিকার এবং প্রণব মন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। আর এটা করা হয়েছিল শুধুমাত্র যাতে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ছাড়া অন্যদের আত্মশক্তি জাগ্রত না হয় – তার জন্য। এই কথাটা সত্যি জানবে ! কারণ, বেদ কারো উপর কখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি__ জারি করেছে সমাজনেতারা। যুগে যুগে ঋষি-মহাত্মা-মহাজনেরা শরীর নিয়েছেন ঠিকই– কিন্তু তাঁরা আচার্যের ভূমিকা পালন করে গেছেন আর সমাজ শাসিত হয়েছে ক্ষাত্রশক্তির দ্বারা। এবার কথা হোচ্ছে, এই ক্ষাত্রশক্তি বা রাজন্যবর্গ আবার পরিচালিত হোতো মন্ত্রণাদাতা মন্ত্রী বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় দ্বারা ! যে রাজার গুরুদেব ত্যাগী-সন্ন্যাসী ছিল এবং রাজা তাঁর গুরুদেবের নির্দেশ মেনে রাজ্য চালাতেন, সেই রাজা সুশাসক হিসাবে অবশ্যই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন্ত্রণাদাতারাও স্বার্থদোষযুক্ত হয়ে পড়তো। ফলে প্রজার স্বার্থ, সাধারণ মানুষের স্বার্থ আর দেখে ওঠা হয়ে ওঠেনি। নিজের নিজের চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই সময় চলে যেতো।
ধর্মনেতাদের কথা ধরলে দেখা যাবে যে, তারাও সেই একই দলে পড়ে যাবে ! দ্যাখো, ‘ধার্মিক ব্যক্তি’ আলাদা আর ‘ধর্মনেতা’ আলাদা ! যে কোনো মহাপুরুষ – তা তিনি যে কোনো ধর্মমতের-ই হ’ন না কেন, তাঁরা কখনোই মানুষকে ভুল পথে চালিত করেন না। সেই ধার্মিক মহাপুরুষদের মৃত্যুর পর থেকে, তাঁর অনুগামীদের দ্বারা বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয় ! অনুগামীদের গন্যমান্য যারা, তারা মহাপুরুষদের নাম দিয়ে নিজেদেরকে অর্থাৎ নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর তা করতে গিয়েই অন্য মতাবলম্বীদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। আর এই সংঘাতই দীর্ঘকালব্যাপী চলতে থাকে।
তাই সমাজে সবসময়েই ভালো মানুষ, খাঁটি মানুষের প্রয়োজন হয়। বর্তমান সমাজে জটাজুটধারী গেরূয়া পোশাকে সজ্জিত সন্ন্যাসী, তিলক-মালায় শোভিত বৈষ্ণব, টুপি-পড়া দাড়িওয়ালা মোল্লা-হাফেজ অর্থাৎ বিভিন্ন ধর্মমতের অন্তঃসারশূন্য ভেকধারী ‘সাজা’ধর্মনেতাদের এখন কোনো প্রয়োজন নাই, এখন প্রয়োজন হোলো খাঁটি মানুষের ! যে মানুষ, শ্রেনী-জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধে উঠে__ অপর মানুষদের ব্যাথা বুঝবে, নিজে ‘মানুষ’ হয়ে–অন্য মানুষের জন্য কাজ করবে, কোনো বিশেষ ধর্মমতের জন্য__ কোনো জাতি-বর্ণের জন্য বা নিজের সংকীর্ণ স্বার্থপূরণের জন্য নয়।৷
সেই মানুষকেই স”সহজ মানুষ” বলা হয়েছে। এইরূপ মানুষের হাত ধরেই মানবসমাজের অগ্রগতি হয়ে থাকে। এঁদেরকেই ‘যুগপুরূষ’ বলা হয়। বিশেষ বিশেষ সময়ে, বিশেষ স্থানে শরীর ধারণ করে__এঁরা যুগধর্ম প্রচার করেন এবং মানুষের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে __তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটিয়ে যান।। এইভাবেই চলে ঈশ্বরের লীলার জগৎ !!