জিজ্ঞাসা :– আচ্ছা গুরু মহারাজ! ভগবান কিসে প্রসন্ন হ’ন ?
গুরুমহারাজ :–ভগবান কিসে প্রসন্ন হয়, তা ভাবার আগে, তুই ভাব_মানুষ কিসে প্রসন্ন হয় ? তুই কিসে প্রসন্ন হোস_সেটাই বল্ না? _ বলতে পারছিস না ? দ্যাখ্, মানুষ প্রসন্ন হয় – ভালোবাসায়, সেবায় এবং জ্ঞানপূর্ণ বিচার ও বিবেকযুক্ত আচরণে ! সুতরাং ভগবান‌ও যেহেতু মানুষের শরীরেই মানুষের মাঝে লীলা করতে আসেন, তাই তিনিও এইগুলিতেই প্রসন্ন হ’ন। গুরুকে প্রসন্ন করার জন্য শাস্ত্রে বলা হয়েছে __ “প্রণিপাতেন, পরিপ্রশ্নেন, সেবয়া” !
তবে কি জানিস, মানুষ যদি জানতে পারে – ‘ইনিই ভগবান’_– অর্থাৎ কোনো এক বিশেষ নরশরীরকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরীয় শক্তির প্রকাশ ঘটেছে – তাহলে তো অনেকটাই হয়ে গেল ! এইবার এই সংযোগের পর থাকে সম্পর্ক ও সম্বন্ধে স্থাপন। আর সেটা করার জন্য_ তোকে শুধু তাঁর চরণে নিজেকে নিবেদন করতে হবে – এটাই হোলো প্রকৃত অর্থে প্রণিপাত ! তুই গিয়ে একবার মাথা ঠেকালি – সেটা প্রণিপাত নয়। তোর ইহকাল-পরকাল তাঁর শ্রীচরনে নিবেদন করতে পারাই যথার্থ প্রণিপাত_বুঝতে পারছিস !!
আর ‘পরিপ্রশ্ন’– মানে জিজ্ঞাসা। ভগবান নরশরীরে সদ্গুরু রূপেই আসেন। তাঁর কাছে জীবন-জিজ্ঞাসার অবসান করে নিতে হয়। মানুষের জীবনে সমস্যারও শেষ নাই, তাই জিজ্ঞাসার‌ও অন্ত নাই! কিন্তু সেই সব জিজ্ঞাসা নয়_ যা জানলে আর কিছু জানার বাকি থাকে না, সেই তত্ত্ব জানতে হয় অর্থাৎ জিজ্ঞাসার দ্বারা আত্মতত্ত্বের জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যে এটা করতে পারে, তার উপরেই ভগবান বা সদ্গুরু প্রসন্ন হ’ন।
এবার সেবার সম্বন্ধে বলছি শোন্ ! তোরা সেবা মানে কি বুঝিস –গুরুর হাতটা বা পা-টা একটু টিপে দিলি অথবা স্নানের জল-গামছা এগিয়ে দিলি – এইগুলো সেবা ? হ্যাঁ, এগুলোও সেবা, তবে এগুলো স্থূল সেবা ! আন্তরিকভাবে এইসব সেবা করলেও ভগবান প্রসন্ন হ’ন বই কি ! কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে টানা ভগবানের কাছে কাছে থেকে, তাঁর সব ধরনের সেবা করা খুবই দুরূহ কাজ ! যে কোনো অবতার পুরুষের জীবন পর্যালোচনা করে দেখলে দেখতে পাবে – কতিপয় ভাগ্যবান যথাযথভাবে ভগবানের সেবা করেছে, কিন্তু একটানা করতে পারেনি – কিছুদিন করার পরই অন্য লোক এসে গেছে !
সেবা-ও ত্রিবিধ – স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ। গুরুর নির্দেশ মতো জীবনযাপন, ধ্যান-জপ ও গুরুর সেবা এবং আত্মসুখের ইচ্ছা সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে জগৎকল্যানে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা সর্বোৎকৃষ্ট সেবা।৷ যেটা স্বামী বিবেকানন্দ নিজের জীবনে করে দেখিয়েছিলেন। এইরূপ সেবাই যথার্থ সেবা।