জিজ্ঞাসু :– এই ভোগ-ঐশ্বর্য্যের জগতের হাতছানি উপেক্ষা করে কি আধ্যাত্মিক পথে এগিয়ে যেতে পারবো গুরুদেব ?
গুরুমহারাজ :– তোমাদের এইসব ম্যাদামারা কথা আমার ভাল লাগে না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন_ “ভ্যাদভ্যাদে চিঁড়ের ফলার”! – এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা যুক্ত মানবের দ্বারা কিছুই হয় না। জানবে_ নীচু মন নিয়ে কখনও কোনো বড় কাজ, মহৎ কাজ হয় না ! মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য – ঈশ্বরলাভ। এই জায়গায় তো সকলকে Reach করতেই হবে – তাহলে আর দেরী কেন ? “আমার দ্বারা কি হবে?”– এই ভাব আসছে কেন ?
মানুষ গোলোকধাঁধায় পড়ে গেছে, যেন ভুলভুলাইয়ায় ঢুকে পড়েছে এবং আর বেরোতে পারছে না, সেইখানেই ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ভাবছে তার বোধহয় আর মুক্তি নেই ! সেখানে ঢোকার আগে তো সে মুক্তই ছিল, ফলে সেখানকার স্বাদ রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে ফেঁসে গিয়ে – আটকে পড়েছে। উত্তর ভারতের ভক্তেরা লখনৌ-এর ভুলভুলাইয়ায় আমাকে একবার নিয়ে গিয়েছিল। দেখলাম সত্যিই গোলোকধাঁধা !
তবে, গোলোকধাঁধা কথাটি কিভাবে এসেছে বলতো – গোল থেকে নয় কিন্তু, গোলোক থেকে এসেছে। ভূলোক, দ্যুলোক সবই গোলোকের মধ্যেই রয়েছে কিন্তু এমন সমগ্র ব্যাপারটা এমন ধাঁধা যে, সেটি বোঝা যাচ্ছে না !
বলা হয় গোলোকধাঁধায় একবার ঢুকলে আর বেরোতে পারা যায় না ! ওখানে(ভুলভুলাইয়া( যদি যাও দেখবে অনেক সিঁড়ি – কোনটা সোজা গেছে, কোনটা নীচে গেছে, কিন্তু ওগুলোকে ধরে নামলে তুমি নিচে পৌঁছাতে পারবে না – আটকে পড়বে। যেটা উপরে উঠেছে সেটাই সঠিক, ওটাকেই ধরতে হবে। প্রত্যেক junction-এ শুধু উপরটাকে অবলম্বন করো। এইভাবে উঠতে উঠতে একেবারে উঁচুতে উঠে পরতে হবে। আর একবার top-এ উঠে পড়লে – আসল নীচে নামার যেটি সোজা পথ, সেটিকে স্পষ্ট দেখতে পাবে। এইবার সেইটিকে ধরে তুমি গোলোকধাঁধা থেকে অনায়াসে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে!
মানুষের জীবনের গতিও এমনি হোতে হবে অর্থাৎ সর্বদা উর্ধ্বমুখী– তাহলেই মানুষ এই সংসারচক্ররূপ ভুলভুলাইয়া থেকে মুক্ত হোতে পারবে৷
মানুষের জীবনে প্রতি পদে পদে junction রয়েছে, সেখানে নীচে নামার পথ আছে_ সোজা যাবার পথ আছে_ আবার উঁচুতে ওঠার পথও রয়েছে। সদাসর্বদা মানুষ (সাধক) যদি উঁচুর পথটা ধরে থাকতে পারে –তাহলে সে একদিন ঠিক top-এ পৌঁছে যায় এবং সংসারচক্র থেকে মুক্ত হবার সহজপথের সন্ধান পেয়ে যায়।
একটু আগে বলছিলাম না ‘অর্হত্বে’র কথা ! এই যে অবস্থার কথা বলা হোলো_ এটাকেই বলা হয় “অর্হত্ব”। যাইহোক, যারা অধ্যাত্মপথের পথিক_ তাদের মনে রাখতে হবে জীবনে চলার পথে সঙ্কটকাল আসবেই, প্রলোভনের হাতছানি আসবেই ! কিন্তু একলক্ষ্য হয়ে চলতে হবে – আর তা করতে গেলে তোমার বিচারকে সর্বদা ঊর্ধ্বে তুলে রাখতে হবে।