[“মেরা ভারত মহান”জিজ্ঞাসা সংক্রান্ত পরবর্ত্তী অংশ ] ….. আমি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের কোণে কোণে ঘুরেছি – দেখেছি তোমাদের T.V.-তে মুখ দেখানো so called মহান মানুষদের মহানুভবতা ! দামী দামী পোশাক ব্যবহার করে, সাধারণ মানুষেরা তার দাম শুনলে চমকে উঠবে।বড় বড় হোটেল-রেষ্টুরেন্টে গিয়ে দামী দামী খাবার order করে–আমি দেখেছি সেগুলি ওরা খেতে পারছে না, ফেলে দিচ্ছে_ তবু ক্ষুধার্ত ভিখারীরা যারা পথের ধারে বসে খাবার চাইছে কিন্তু তাদেরকে দিচ্ছে না। ক্ষুধার্তকে খাবার না দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে আবার সেই ভিখারীকে উদ্দেশ্য করে বলছে – “খেটে খেতে পারিস না?”_ আরে বোকা ! সখে কি কেউ ভিক্ষা করে ? হ্যাঁ, মানছি ঠকবাজ ভিখারীও সমাজে রয়েছে কিন্তু সে দু-একজন। তাছাড়া ক্ষুধার্ত কোনো রোগগ্রস্ত বয়স্ক লোক(বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা), সে সত্যিই অভাবে ভিক্ষা করছে কিনা – ভাল করে অবলোকন করলেই তো বোঝা যায় !! কানপুর স্টেশনে আমার ছেলেবেলায় ভ্রমণকালে দেখেছি বয়স্কা ভিখারিনী নোংরা কাপড়-চোপড় পড়ে platform-এ ঘুমিয়ে আছে – সরকারি কর্মচারীরা তার সাথে অসভ্যতা করছে,অশ্লীল আচরণ করছে ! বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে বা রেলওয়ে প্লাটফর্মে ঘুমন্ত ভিখারীদের মেরে মেরে তুলে পয়সা আদায় করছে ! আরো দেখেছি ঘুমন্ত ভিখারী বা ভিখারিনীর পয়সা সরকারের মাইনে করা লোকেরাই চুরি করে নিচ্ছে ! আহা!–কি মহান দেশ তোমাদের এই ভারতবর্ষ !! এইরূপ সমাজব্যবস্থা কি দেশটির মহানতার লক্ষণ ? তবুও এই দেশ মহানকারণ এই দেশে মহান ঋষিরা (বাল্মিকী, বিশ্বামিত্র, অত্রি ইত্যাদি) জন্মেছেন, এই দেশে বারবার ঈশ্বরের অবতার শরীর ধারণ করেছেন – আমি তাঁদের জন্য এই দেশটাকে মহান মনে করি ! এঁদেরকে বাদ দিলে যারা বাকি থাকে, তারা কি– তারা কি ঠিক ঠিক মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছে ? Advertisement দেখে যাদেরকে তোমরা মহান বলছো_ ওদের বেশিরভাগ‌ই তো চোর, জোচ্চর, বদমাশ !
সমাজে এমন অনেকেই রয়েছে, যারা মুখে সদা-সর্বদা ‘রাম’-‘রাম’ করছে – কিন্তু সামান্য একটু অভিমানে ঘা লাগলেদেখবে তাদের মধ্যে থেকে ‘রাবণ’ বেড়িয়ে আসছে ! হয়তো মুখে ‘কৃষ্ণ’-‘কৃষ্ণ’ করছে – কিন্তু লেজে পা পড়লে (অভিমানে ঘা লাগলে) ‘কংস’ বেরিয়ে আসছে ! আমি গয়া বা অন্য ধর্মস্থানে দেখেছি ‘গো-দান'(গরু দান)-কে হিন্দুরা পরকালে সুখ পাবার অন্যতম শর্ত বলে মানে। জানিনা কোন্ শাস্ত্রে এসব আছে ! আমি জানি_ ওসব পুরোহিত-পান্ডাদের বিধান, কোনো ঋষির বিধান নয় ! কিন্তু মানুষের sentiment !! সে বড় ভীষণ ব্যাপার ! তাই বহু বছর ধরে এইসব কুপ্রথা বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসছে।
কিন্তু ঐসব স্থানে কি হয় জানো – মানুষের ধর্মীয় দুর্বলতার সুযোগ নিয়েপান্ডা বা পুরোহিতরা একই গরু ভিন্ন ভিন্ন পুণ্যলোভীদেরকে বার বার দানের জন্য বিক্রি করছে ! মাত্র ১০০১ টাকায় গো-দান ! এ পুণ্য কি ছাড়া যায় ! দাতাও জানে – আর যে নিচ্ছে সেও জানে, যে এতে কতটা পুণ্য হোচ্ছে ! তবু নিয়মতান্ত্রিক ভাবে তা পালন করছে, আর ভাবছে পুণ্য অর্জন হোচ্ছে ! এই কি এদেশের ঋষিদের প্রদর্শিত পথ – কোনো মহামানব, অবতারপুরুষ কি বলে গেছেন এইসব করতে ? তবু মানুষ করছে – পান্ডা-পুরোহিতদের ফাঁসে পড়ে। ইসলাম জগতে, খ্রিস্টান জগতেও এই রকমটাই হোচ্ছে ! আসলে, ধর্মীয় নেতা বা গুরুরাই সাধারণ মানুষের বারোটা বাজাচ্ছে ! গয়ায়–কাশীতে দেখেছি মানুষজন গঙ্গার জলে গরুর লেজ ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর চালাক ব্রাহ্মণ পাড়ে বসে বসে মন্ত্রোচ্চারণ করছে। কি হোচ্ছে – না বৈতরণী পার ! কত সহজ না? তরণী মানে নৌকা। যার তরণী নাই(সাধন ভজন, ভগবৎ-কৃপা নাই), তারজন্য রয়েছে ভগবতীর (গরুর) লেজ! ঐ লেজ ধরে ভবসাগর পার হয়ে চলে যাও পরপারে !
কিন্তু এখানে প্রকৃত তাৎপর্য ছিল(যা ঋষিরা বলতে চেয়েছিলেন) চতুঃস্পদ গরু – অর্থাৎ ব্রহ্মের চতুষ্পদ(চারটি পা) মানে স্থূল, সূক্ষ্ম, কারণ‌ এবং তুরীয়। সমস্ত মানবকেই এই চার অবস্থা পার হোতে হবে ! আরও বলা হয় যে, মৃত্যুর পর (যমালয়ে) চিত্রগুপ্ত সব হিসাব রাখছে – এটার অর্থ হোলো মানবের সারাজীবনের বাসনাদি মৃত্যুর সময় চিত্তে সুপ্ত অবস্থায় (গুপ্ত) থেকে যায়, ওখানে একেবারে print হয়ে যায়। জীবন নদীতে বাসনার প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে – তা থেকে পার হবার উপায় সদ্গুরু লাভ অর্থাৎ গুরুর কাছ থেকে ইষ্টমন্ত্র লাভ ! মন্ত্রকে আশ্রয় করে এবং সদ্গুরুর শিক্ষা ও উপদেশ জীবনে যোজনা করলে – তখন গুরুই ভবের কান্ডারী হয়ে ভবনদী (কেউ কেউ বলে ভবসাগর) পার করে দেন বা পার হতে সাহায্য করেন !
এইসব প্রকৃত তত্ত্ব বাদ দিয়ে ১০০১ টাকায় বৈতরণী পার করা হোচ্ছে !
পুরীতে দেখেছি – পতিতপাবন ডান্ডা ! “গোটে টঙ্কা, গোটে ডান্ডা”(এক টাকায় এক ডান্ডা), এখন হয়তো দুই টাকা (১৯৯৫) হয়েছে ! ব্যাপারটা বুঝতে পারছ – “পতিতপাবন ডান্ডা”- মানে হোচ্ছে ওই ডান্ডার বাড়ি খেলে তোমার শরীরের পাপস্খলন হয়ে যাবে। আমি দেখেছি মোটা মোটা লোকেরা বসে বসে ডান্ডার বাড়ি খাচ্ছে, এক একজন ৫০/৬০ ঘা-ও খাচ্ছে, সব পাপ-তাপ ঘোচাতে হবে তো !! আবার দেখেছি বিকৃত মানসিকতার পান্ডারা মহিলাদেরকে জোরে জোরে মারছে !!
এইতো তোমার মহান দেশের মহান মানুষদের কাণ্ড-কারখানা ! ধর্মাচরণের কি অবস্থা ! বিদেশে যখন আমি উপনিষদ বলছিলাম – ওরাও আমাকে ভারতবর্ষের এইসব চিত্র তুলে ধরেছিল। আর বলছিল আপনি আমাদেরকে উপনিষদের শিক্ষা দিচ্ছেন – আর আপনার দেশের মানুষেরা কি করছে ?
এইসব দেখে আমার কি মনে হয় জানো__মনে হয় ইউরোপীয়রা তোমাদের থেকে অনেক ভালো, অনেক উন্নত ! ….. (ক্রমশঃ)