[“মেরা ভারত মহান”এই জিজ্ঞাসার উত্তরের শেষাংশ…] ……. কোনো জাতির মধ্যে কতো জন মহামানব জন্ম গ্রহণ করেছেন – সেটাই সেই জাতির গৌরব। ভারতবর্ষের ঋষিকুল, মহাত্মা-মহাপুরুষদের জন্যই যেমন “মেরা ভারত মহান”, তেমনি ইহুদী জাতির মধ্যে মুসা, যীশু ইত্যাদি মহামানব শরীর নিয়েছিলেন এবং আরবের জনজাতির মধ্যে থেকে শরীর নিয়েছিলেন হযরত মহম্মদ আর এটাই ওই সব দেশের গৌরব – তাছাড়া আর গৌরব করার মতো আছেটা কি ? যীশু, হযরত–এনারা মহান ছিলেন, এইজন্যেই এনাদের জন্মভূমি মহান হয়েছে।
হযরত প্রতিষ্ঠিত ইসলামের দুটো বিধি – ‘ফরজ’ আর ‘নিয়ত'(সুন্নৎ)! ‘ফরজ’ মানে হোলো কর্তব্য। হজ, নামাজ, জাকাৎ ইত্যাদি হোলো ‘ফরজ’ – যেগুলি অবশ্যপালনীয়। এইগুলি পালন না করলে তুমি মুসলমান নও ! আর ‘নিয়ত'(সুন্নৎ) হোচ্ছেঅন্যধরণের কিছু নিয়ম পালন বা আচার পালন । যেমন ধরো, ইসলাম ধর্মশাস্ত্রে রয়েছে একটি পুরুষ চারটি বিবাহ করতে পারে কিন্তু এটা মুসলমান হয়ে কেউ পালন করতেও পারে – নাও করতে পারে ! অবশ্যপালনীয় নয়ব্যাপারটা বুঝেছো ! আমার সাথে একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী হাফেজের এইসব নিয়ে খুব কথা-বার্তা হয়েছিল । আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – ” আপনি কি ইসলামের ইতিহাস খুব ভালোভাবে পড়েছেন ?” উনি সন্মতি জানালেন। তখন আমি বললাম ” তাতে আপনি দেখেছেন কি একটি যুদ্ধে হযরতের সৈন্যদের (হযরত আলী ও হযরত ওসমানের সেনাপতিত্বে এই যুদ্ধ হয়েছিল) সাথে যুদ্ধে যখন বিপক্ষদের সমস্ত পুরুষ মারা গিয়েছিল, তখন দেখা গেল সেইস্থানে মৃত সৈনিকদের অসহায় বিধবা স্ত্রীগুলি বসে বসে কাঁদছে ! হযরত সেই দৃশ্য দেখে করূনাদ্র হোলেন, উনি সেই হতভাগী মহিলাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে সান্ত্বনা দিলেন এবং তাদের ঐ অসহায় অবস্থা থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দিলেন। উনি মহিলাদের সংখ্যা গুনে দেখলেন যে, ওনার সৈন্যদের সংখ্যার চেয়ে তাদের সংখ্যা চারগুণ। তখন তিনি প্রতিটি সৈন্যকে আদেশ দিয়েছিলেন যে, “তোমরা প্রত্যেকে চারজন রমণীর ভার গ্রহণ করো।” এইটা হযরত একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে, বিশেষ স্থানে, বিশেষ ব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন ! আমি হাফেজকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম‘পরবর্তীতে এই ব্যাপারটা সার্বজনীন হোলো কি করে ?’
তখন সেই হাফেজ আমাকে উত্তর দিয়েছিলেন – “এইজন্যেই এই ব্যাপারটিকে ‘নিয়ত'(সুন্নৎ) বলা হয়েছে, ‘ফরজ’ বলা হয়নি অর্থাৎ তুমি এটি করতেও পারো – নাও করতে পারো।”
এরপর আমি আবার ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – ” আচ্ছা ? আল্লাহ্ আদমকে নিজের মতো করে সৃষ্টি করলেন, তার জন্য কত কি ব্যবস্থা করলেন –তবু আদমের বেহেস্ত থেকে পতন হোলো কেন ?” হাফেজের উত্তর যেন একেবারে ঠোঁটের ডগায় ছিল, ও বলল, “ইবলিশের জন্য ! ইবলিশ তো আল্লার পাশে পাশেই থাকে, ওই যত নষ্টের মূল ! মিখাইল (?), ইসমাইল, ইসরাইল ইত্যাদি নবীরা এবং ফেরেস্তারা আসমানে থাকে, ওরা জমিনের জন্য কিছু করতে পারে না! আর জমিনের লোকেরাও আসমানে কখনোই যেতে পারে না (শুধু মোমিনরা যেতে পারে একেবারে রোজকেয়ামতের দিনে)। কিন্তু ইবলিশ আসমান ও জমিনের মাঝামাঝি স্থানে বাস করে – তাই সে দু’জায়গাতেই গমনাগমন করতে পারে, আর দু-তরফকেই নষ্ট করতে পারে।”
এছাড়া _ ‘নারী-ই যে সমস্ত অনিষ্টের জন্য দায়ী’ঐ হাফেজ সে কথাও বলল। ও বলল, ” দেখুন ! নারীর আত্মা নাই, আল্লা আদমের ইচ্ছা পূরণের জন্য ওর (আদমের) পাঁজর থেকে হাভা (ইভ)-কে সৃষ্টি করেছে, তাই হাভা বা নারী সরাসরি আল্লাহর সৃষ্টি নয়। নারী সৃষ্টির পিছনে পুরুষের ইচ্ছাই দায়ী, তাই পুরুষের মনোরঞ্জন করে, তার অনুগ্রহ লাভ করেতবেই নারী আল্লার দরবারে প্রবেশ করতে পারে। তা নাহলে কোনোকালেই নারীর মুক্তি হবে না। আদি পাপ তো নারী-ই করেছিল (আদমকে প্রলুব্ধ কোরে) তাই নারীকে সেই পাপের স্খালন এইভাবেই করতে হবে।” আমি এইসব শুনে বললাম – ” কি সাংঘাতিক ! তাহলে পুরুষের মনোরঞ্জন করা ছাড়া নারীর মুক্তি নেই ? কিন্তু সনাতন ধর্মের শাস্ত্রাদিতে তো এরকম ভেদ করেনি! সেখানে বলা হয়েছে আত্মায় কোনো লিঙ্গভেদ নাই, কোনো জাতিভেদ, বর্ণভেদ নাই। সকলেই আত্মস্বরূপ। মানবের শুধু এই জ্ঞানটা নাই_ তাই হাহাকার করছে ! যখনই জ্ঞান হয়ে যাবে, বোধে বোধ হবে – তখনই সে চিরস্বাধীন ! তা সে নারীই হোক বা পুরুষ !” (ক্রমশঃ)