জিজ্ঞাসু :– হিমালয়ের উঁচু এলাকায় তো খুবই ঠাণ্ডা ! ওখানে শুধুই বরফ – তাহলে যে সমস্ত সাধুরা ওখানে থেকে সাধন-ভজন করে, তারা ওখানে দীর্ঘদিন বাঁচে কি করে ?
গুরুমহারাজ :– যে সমস্ত সাধুরা ওখানে থেকে সাধন-ভজন করেন, তাঁরা ছোট থেকেই ঠিক ঠিক ব্রহ্মচর্য পালন করেন এবং নিয়ম-সংযমে জীবন কাটান । ফলে তাঁদের জীবনে নানারকম সিদ্ধি এসে যায় । তাঁদের ধীশক্তি, সহ্যশক্তি_এগুলো সাধারণ মানুষ অপেক্ষা অনেকগুনে বেড়ে যায়। এই সব কারণে তাঁদের অত্যধিক ঠান্ডা অথবা অধিক গরম ইত্যাদি কোনো কিছুতেই কোনো অসুবিধা হয় না।
প্রথমটায় কিছুদিন সইয়ে নিতে হয় (adapt), তারপর আর কোনো কষ্ট হয় না। তুমি বা তোমার মতো বেশিরভাগ মানুষই ভোগবাদী জীবনচর্যাকে বেছে নিয়েছো, অপরপক্ষে ত্যাগী সাধুরা বেছে নিয়েছেন ঠিক তার উল্টো পথ ! তাঁদের জীবন ত্যাগের জীবন ! কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক সুখভোগ তাঁদের জীবনচর্যায় স্থান পায় না !
লোকনাথ বাবার জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়_ ওনারা তিনজন(ত্রৈলঙ্গ স্বামী, লোকনাথ বাবা, আব্দুল গফফার) সাধু মিলে হিমালয়ের বিভিন্ন বরফাবৃত শৃঙ্গ অতিক্রম করে তিব্বতের পামির গ্রন্থিতে পৌঁছান। এরপরে ওখান থেকে ইউরোপের দিকে যেসব পর্বতমালা গিয়েছে (ককেশাস !) ঐগুলি ধরে, ইউরাল পর্বতমালা, আল্পস্ হয়ে একেবারে পৃথিবীর উত্তরমেরু পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। কয়েক বৎসর ধরে শুধু বরফের রাজত্বেই ছিলেন।
ওখান থেকে ফিরে আসার অনেক পরে উনি যখন এইসব কথা ভক্তদেরকে বলেছিলেন, তখন মানুষ এই সব কথা জানতে পারে। উনি বলেছিলেন যে ওনাদের গায়ের চামড়া সব সাদা হয়ে গিয়েছিল। plain-এ নেমে আসার পরে কিছুদিনের মধ্যেই গায়ের ঐ সাদা চামড়া উঠে গিয়ে আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক চামড়ার রং ফিরে আসে। তাহলে বুঝতে পারছো তো – প্রকৃত সাধুসন্ত, যোগী, সন্ন্যাসীদের প্রাকৃতিক কোনো বিষয়েই কোনো কষ্ট হয় না। তাঁরা ধীরে ধীরে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যান !
নিজের অন্তঃপ্রকৃতিকে জয় করতে পারলেই বহি:প্রকৃতিকেও জয় করা যায়, বশ মানানোও যায়। বহিঃপ্রকৃতিকে অন্তঃপ্রকৃতির সাথে এক সুরে বাঁধতে পারলেই এটা সম্ভব হয় !
তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে অবশ্যই বরফাবৃত শৃঙ্গ অতিক্রম করা কষ্টসাধ্য ! যারা পর্বতারোহী, তাদের নানারকম training নিতে হয়, দামী দামী পোশাক ব্যবহার করতে হয়,অক্সিজেন সিলিন্ডার বয়ে নিয়ে যেতে হয়–সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির হাত থেকে বাঁচার জন্য চোখে দামি চশমা পরতে হয় ! তবুও বহু আরোহীরা দূর্ঘটনার কবলে পড়ে ।
যোগী-সাধুদের ওইসব নানারকম উপকরণের দরকার হয় না – তাঁরা চির-স্বাধীন !
সম্পূর্ণ উলঙ্গ কয়েকটি মানুষ ঐসব দুর্গমস্থানে বা সুউচ্চস্থানে উঠে প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে, এসবের রূপকার সেই পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে স্তব-স্তুতি করেন এবং অপার্থিব আনন্দে নৃত্য করতে থাকেন ! – এ এক বিরল দৃশ্য ! আশ্চর্য দৃশ্য ! পৃথিবীর সভ্যসমাজ থেকে দূরতম কোনো প্রান্তে, কোনো দুর্গম উচ্চতায় কয়েকজন উলঙ্গ সাধু আপন-মনে, নিজের অন্তরের ছন্দের তালে তালে নেচে চলেছে – যেখানে দেখার কোনো লোক নেই, খবর নেবার বা দেবার কেউ নাই – শুধু পরমেশ্বর দেখেন ! কারন এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ যে শুধু তাঁরই উদ্দেশ্যে !!
তবে সাধারণ মানুষের ওই প্রতিকূল আবহাওয়ায় adapt করা সত্যিই দূরহ ! এমনিতে মানুষ যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রজাতি – তাই তারা পৃথিবীর সব জায়গাতেই survive করতে পারে। মেরুপ্রদেশেও মানুষ বাস করে, আবার মরুপ্রদেশেও মানুষ থাকে। মেরুপ্রদেশে থাকে এস্কিমোরা বা ল্যাপল্যান্ডাররা – ওরা বরফের তৈরি ঘর বানায়। সেগুলিকে ‘ইগলু’ বলে। মেরুপ্রদেশের বিভিন্ন প্রাণীরাও বরফের মধ্যে গর্ত করে বসবাস করে। বিভিন্ন সাধু-সন্তরা বা অভিযাত্রীরাও রাত্রে বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে ভিতরে ঢুকে পড়লে – অপেক্ষাকৃত অনেক আরামে থাকে। বাইরের তাপমাত্রা অপেক্ষা ওখানে অর্থাৎ ঐ বরফের গর্তের ভিতর তাপমাত্রা অনেক high থাকে ! তাই মেরুপ্রদেশে বরফের ঝড় থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে বরফের গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়া !
উত্তরমেরুর কাছাকাছি স্থানে এমনকি নরওয়েতেও রয়েছে বরফাবৃত হোটেল। সেখানে ইউরোপের মানুষ ঠান্ডা enjoy করার জন্য, মেরুজ্যোতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বেড়াতে যায়। আমি যখন প্রথমবার (১৯৮৯-৯০)নরওয়ে যাই তখনই ঐ ধরণের হোটেলে প্রতিদিনের per head ভাড়া ছিল ১০০ ডলার। এখন বেড়ে আরো কতো হয়েছে কে জানে !
তবে জানো, শুধু বরফের সৌন্দর্যও অসাধারণ ! নরওয়েতে দেখেছি পথ, ঘাট, মাঠ, বন, জঙ্গল, শহর, নদী – সব বরফ আর বরফ। যেন মনে হবে কোনো শ্বেতশুভ্র স্বপ্নময় রাজ্যে এসে পৌঁছেছি। ওখানকার বরফ dry, ফলে তোমার হাত বা জামা-কাপড় ভিজবে না। আর ঝোড়ো হাওয়া না থাকলে ওখানকার পরিবেশ বেশ comfortable !!
গুরুমহারাজ :– যে সমস্ত সাধুরা ওখানে থেকে সাধন-ভজন করেন, তাঁরা ছোট থেকেই ঠিক ঠিক ব্রহ্মচর্য পালন করেন এবং নিয়ম-সংযমে জীবন কাটান । ফলে তাঁদের জীবনে নানারকম সিদ্ধি এসে যায় । তাঁদের ধীশক্তি, সহ্যশক্তি_এগুলো সাধারণ মানুষ অপেক্ষা অনেকগুনে বেড়ে যায়। এই সব কারণে তাঁদের অত্যধিক ঠান্ডা অথবা অধিক গরম ইত্যাদি কোনো কিছুতেই কোনো অসুবিধা হয় না।
প্রথমটায় কিছুদিন সইয়ে নিতে হয় (adapt), তারপর আর কোনো কষ্ট হয় না। তুমি বা তোমার মতো বেশিরভাগ মানুষই ভোগবাদী জীবনচর্যাকে বেছে নিয়েছো, অপরপক্ষে ত্যাগী সাধুরা বেছে নিয়েছেন ঠিক তার উল্টো পথ ! তাঁদের জীবন ত্যাগের জীবন ! কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক সুখভোগ তাঁদের জীবনচর্যায় স্থান পায় না !
লোকনাথ বাবার জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়_ ওনারা তিনজন(ত্রৈলঙ্গ স্বামী, লোকনাথ বাবা, আব্দুল গফফার) সাধু মিলে হিমালয়ের বিভিন্ন বরফাবৃত শৃঙ্গ অতিক্রম করে তিব্বতের পামির গ্রন্থিতে পৌঁছান। এরপরে ওখান থেকে ইউরোপের দিকে যেসব পর্বতমালা গিয়েছে (ককেশাস !) ঐগুলি ধরে, ইউরাল পর্বতমালা, আল্পস্ হয়ে একেবারে পৃথিবীর উত্তরমেরু পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। কয়েক বৎসর ধরে শুধু বরফের রাজত্বেই ছিলেন।
ওখান থেকে ফিরে আসার অনেক পরে উনি যখন এইসব কথা ভক্তদেরকে বলেছিলেন, তখন মানুষ এই সব কথা জানতে পারে। উনি বলেছিলেন যে ওনাদের গায়ের চামড়া সব সাদা হয়ে গিয়েছিল। plain-এ নেমে আসার পরে কিছুদিনের মধ্যেই গায়ের ঐ সাদা চামড়া উঠে গিয়ে আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক চামড়ার রং ফিরে আসে। তাহলে বুঝতে পারছো তো – প্রকৃত সাধুসন্ত, যোগী, সন্ন্যাসীদের প্রাকৃতিক কোনো বিষয়েই কোনো কষ্ট হয় না। তাঁরা ধীরে ধীরে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যান !
নিজের অন্তঃপ্রকৃতিকে জয় করতে পারলেই বহি:প্রকৃতিকেও জয় করা যায়, বশ মানানোও যায়। বহিঃপ্রকৃতিকে অন্তঃপ্রকৃতির সাথে এক সুরে বাঁধতে পারলেই এটা সম্ভব হয় !
তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে অবশ্যই বরফাবৃত শৃঙ্গ অতিক্রম করা কষ্টসাধ্য ! যারা পর্বতারোহী, তাদের নানারকম training নিতে হয়, দামী দামী পোশাক ব্যবহার করতে হয়,অক্সিজেন সিলিন্ডার বয়ে নিয়ে যেতে হয়–সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির হাত থেকে বাঁচার জন্য চোখে দামি চশমা পরতে হয় ! তবুও বহু আরোহীরা দূর্ঘটনার কবলে পড়ে ।
যোগী-সাধুদের ওইসব নানারকম উপকরণের দরকার হয় না – তাঁরা চির-স্বাধীন !
সম্পূর্ণ উলঙ্গ কয়েকটি মানুষ ঐসব দুর্গমস্থানে বা সুউচ্চস্থানে উঠে প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে, এসবের রূপকার সেই পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে স্তব-স্তুতি করেন এবং অপার্থিব আনন্দে নৃত্য করতে থাকেন ! – এ এক বিরল দৃশ্য ! আশ্চর্য দৃশ্য ! পৃথিবীর সভ্যসমাজ থেকে দূরতম কোনো প্রান্তে, কোনো দুর্গম উচ্চতায় কয়েকজন উলঙ্গ সাধু আপন-মনে, নিজের অন্তরের ছন্দের তালে তালে নেচে চলেছে – যেখানে দেখার কোনো লোক নেই, খবর নেবার বা দেবার কেউ নাই – শুধু পরমেশ্বর দেখেন ! কারন এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ যে শুধু তাঁরই উদ্দেশ্যে !!
তবে সাধারণ মানুষের ওই প্রতিকূল আবহাওয়ায় adapt করা সত্যিই দূরহ ! এমনিতে মানুষ যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রজাতি – তাই তারা পৃথিবীর সব জায়গাতেই survive করতে পারে। মেরুপ্রদেশেও মানুষ বাস করে, আবার মরুপ্রদেশেও মানুষ থাকে। মেরুপ্রদেশে থাকে এস্কিমোরা বা ল্যাপল্যান্ডাররা – ওরা বরফের তৈরি ঘর বানায়। সেগুলিকে ‘ইগলু’ বলে। মেরুপ্রদেশের বিভিন্ন প্রাণীরাও বরফের মধ্যে গর্ত করে বসবাস করে। বিভিন্ন সাধু-সন্তরা বা অভিযাত্রীরাও রাত্রে বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে ভিতরে ঢুকে পড়লে – অপেক্ষাকৃত অনেক আরামে থাকে। বাইরের তাপমাত্রা অপেক্ষা ওখানে অর্থাৎ ঐ বরফের গর্তের ভিতর তাপমাত্রা অনেক high থাকে ! তাই মেরুপ্রদেশে বরফের ঝড় থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে বরফের গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়া !
উত্তরমেরুর কাছাকাছি স্থানে এমনকি নরওয়েতেও রয়েছে বরফাবৃত হোটেল। সেখানে ইউরোপের মানুষ ঠান্ডা enjoy করার জন্য, মেরুজ্যোতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বেড়াতে যায়। আমি যখন প্রথমবার (১৯৮৯-৯০)নরওয়ে যাই তখনই ঐ ধরণের হোটেলে প্রতিদিনের per head ভাড়া ছিল ১০০ ডলার। এখন বেড়ে আরো কতো হয়েছে কে জানে !
তবে জানো, শুধু বরফের সৌন্দর্যও অসাধারণ ! নরওয়েতে দেখেছি পথ, ঘাট, মাঠ, বন, জঙ্গল, শহর, নদী – সব বরফ আর বরফ। যেন মনে হবে কোনো শ্বেতশুভ্র স্বপ্নময় রাজ্যে এসে পৌঁছেছি। ওখানকার বরফ dry, ফলে তোমার হাত বা জামা-কাপড় ভিজবে না। আর ঝোড়ো হাওয়া না থাকলে ওখানকার পরিবেশ বেশ comfortable !!