জিজ্ঞাসু :– “সন্তানকে তো মানুষ করতে হবে!”- এই অজুহাতে যেভাবে এখনকার অভিভাবকেরা, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অবহেলা করে_শহরমুখী হয়ে তাদের সন্তানদের নামী-দামী স্কুলে ভর্ত্তি করার rat-race-এ নেমেছে – তাতে কি শিশুরা প্রকৃত অর্থে মানুষ হোচ্ছে_ গুরুদেব ?
গুরুমহারাজ :– কি করে হবে ? শহরের নামী-দামী স্কুলে ভর্তি করলে সন্তান উচ্চ ডিগ্রির অধিকারী হোতে পারে, জীবনে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে_কিন্ত প্রকৃত অর্থে মানুষ কখনোই হয়ে উঠতে পারবে না। ওখানে অন্য theory ক্রিয়াশীল !
সন্তানদেরকে প্রকৃত ‘মানুষ’ করে গড়ে তোলার ব্যাপারে বাবা এবং মায়ের ভূমিকাই মুখ্য ! বাবার স্নেহ আর মায়ের মমতা – এই দুটোর সমন্বয় থাকলে সন্তানের মধ্যে কোমল সুকুমার-বৃত্তিগুলির বিকাশ ঘটে। কিন্তু এখন তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সন্তানের উপর_ ‘পিতার মায়া আর মায়ের মোহ’ কাজ করছে ! এর ফলে ছোটো থেকেই ছেলেমেয়েরা অতিরিক্ত আদর পেয়ে ‘বাঁদর’ হয়ে যাচ্ছে ! এই সব ছেলেমেয়েরা বয়সে যত বড় হোচ্ছে – বাবা-মায়ের ব্যথা না বুঝে, এরা তাদের পিতা-মাতাকে আরো পীড়ন করছে এবং বয়সকালে একা করে দিয়ে নিদারুণ কষ্ট দিচ্ছে !
যাই হোক, একটা কথা মনে রাখবেন – মানুষ প্রকৃতপক্ষে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠে সদগুরু বা আচার্যের সান্নিধ্যে এসে ! আবার দেখবেন__ পৃথিবীতে যত great man বা মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন_ তাঁদের প্রত্যেকের জীবন-ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অবশ্যই তাঁরা ছোটবয়সে স্নেহময় পিতা অথবা মমতাময়ী মাতার সান্নিধ্য লাভ করেছেন অথবা কৈশোরে বা যৌবনে কোনো সদ্গুরুর আশ্রয় পেয়েছেন !
দশ-বারোটা private tutor দিয়ে কোনো নামী দামী স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ালে কখনই ঐ ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে বিবেকবান বা শ্রদ্ধাবান হবে না – হোতে পারেও না ! দেখা যাবে, এই ছেলেমেয়েরা হয়তো বিভিন্ন competitive পরীক্ষায় ভালো rank করবে, Joint entrance পাশ করে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে, W.B.C.S অথবা I.A.S পাশ করে দেশের দায়িত্বপূর্ণ সরকারি পদ অলংকৃত করবে – কিন্তু প্রকৃত অর্থে ‘মানুষ’ হবে না!
নামী-দামী স্কুলে পড়াশুনার দ্বারা কোনো ব্যক্তি পন্ডিত নিশ্চয়ই হোয়ে উঠতে পারে কিন্তু ঐ পড়াশুনা জানা ব্যক্তি প্রকৃত “মানুষ” হয় না। বরং দেখা যায় এই ধরনের ছেলেমেয়েরা চরম স্বার্থপর হয়ে ওঠে! পরবর্তী জীবনে এরা হয়ে ওঠে এক একটা টাকা রোজগারের machine ! টাকার জন্য এরা বাবা-মা, পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের সঙ্গেও বেইমানি করতে পারে ! বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা থাকলে এরা তাদেরকে সময় দেবার কোনো প্রয়োজনই বোধ করে না, কারন শ্রদ্ধা-বোধটাই তো এদের তৈরি হয়না ! আর যারা নিজের জন্মদাতা পিতা বা গর্ভধারিনী মা-কে শ্রদ্ধা করতে পারে না, তারা কি করে দেশপ্রেমিক হবে _বলুন ? দেশের জন্য স্বার্থত্যাগ বা আত্মত্যাগ করা তো দূরের কথা –ঐ নিয়ে ভাবনা-চিন্তারই সময় পায় না ! বরং এরা দেশের চরম সর্বনাশ করতেও পিছপা হয় না !
প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষে মিশনারী স্কুল (ইংরেজদের স্থাপিত, যেমন St.Pouls, St.Xavier’s school ইত্যাদি) যখন থেকে চালু হয়েছিল – তারপর থেকেই দেখা গেছে এইসব বিদ্যালয়ের পাশ করা ছেলেরাই বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদে বসতে শুরু করেছিল। আর সেই গোড়া থেকেই ভারতবর্ষে officer level-এ দুর্নীতিও শুরু হয়েছিল ! তখন বিদেশীয়রা অত্যাচারী ছিল বা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, এখন স্বদেশীয়রা !
এবার কথা হোচ্ছে, নামীদামী বিদ্যালয়ে পড়াশোনার ফলে এমনটা কেন হোচ্ছে ? এর কারণটা বলছি শোনো – এই যে খুব ছোটো বয়েস থেকেই ওদেরকে সমাজের অনেকের কাছ থেকে isolated করে দেওয়া হোচ্ছে এবং বলা হোচ্ছে তুমি সাধারণ আর পাঁচজনের মতো নও_তুমি নামী স্কুলে পড়ো_এখানে প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ_তোমাকে স্কুলে টাই-বুট-কোট পড়তেই হবে – ইত্যাদি ইত্যাদি ! ব্যস হয়ে গেল ! ঐ ছেলেমেয়েরা ছোটো বয়েস থেকেই সরকারি স্কুলে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হীন চোখে দেখতে শুরু করে দেয় !
বর্তমানের ভারতীয় সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা মিশন স্কুলগুলো অবশ্য তাদের ছাত্রদেরকে ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির শিক্ষা, ধুতি পরার শিক্ষা ইত্যাদি শিক্ষা দেয় – কিন্তু তবুও ঐসব নামী স্কুলের ছাত্রদের একটা ego থাকে যে, “আমরা অমুক স্কুলের ছাত্র”! এটা এমনকি তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও ক্রিয়া করে !
সাধারণ মানের মেধাবিশিষ্ট ছাত্ররা বা সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা তো ঐসব স্কুলে পড়তে পারে না – এতো খরচ, প্রচুর donation –গরীব মানুষেরা এসব কি করে যোগাবে ? ফলে ঐসব ছাত্রছাত্রীদের ছোটবেলা থেকেই একটা stamp লাগিয়ে দেওয়া হোচ্ছে “এরা ওমুক মিশনের ছেলে”! ব্যস্, এইভাবে ছোটো থেকেই সমাজ থেকে, সমাজের আর পাঁচজন সদস্যের থেকে ওরা isolated হয়ে যায় ! ….. (ক্রমশঃ)
গুরুমহারাজ :– কি করে হবে ? শহরের নামী-দামী স্কুলে ভর্তি করলে সন্তান উচ্চ ডিগ্রির অধিকারী হোতে পারে, জীবনে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে_কিন্ত প্রকৃত অর্থে মানুষ কখনোই হয়ে উঠতে পারবে না। ওখানে অন্য theory ক্রিয়াশীল !
সন্তানদেরকে প্রকৃত ‘মানুষ’ করে গড়ে তোলার ব্যাপারে বাবা এবং মায়ের ভূমিকাই মুখ্য ! বাবার স্নেহ আর মায়ের মমতা – এই দুটোর সমন্বয় থাকলে সন্তানের মধ্যে কোমল সুকুমার-বৃত্তিগুলির বিকাশ ঘটে। কিন্তু এখন তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সন্তানের উপর_ ‘পিতার মায়া আর মায়ের মোহ’ কাজ করছে ! এর ফলে ছোটো থেকেই ছেলেমেয়েরা অতিরিক্ত আদর পেয়ে ‘বাঁদর’ হয়ে যাচ্ছে ! এই সব ছেলেমেয়েরা বয়সে যত বড় হোচ্ছে – বাবা-মায়ের ব্যথা না বুঝে, এরা তাদের পিতা-মাতাকে আরো পীড়ন করছে এবং বয়সকালে একা করে দিয়ে নিদারুণ কষ্ট দিচ্ছে !
যাই হোক, একটা কথা মনে রাখবেন – মানুষ প্রকৃতপক্ষে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠে সদগুরু বা আচার্যের সান্নিধ্যে এসে ! আবার দেখবেন__ পৃথিবীতে যত great man বা মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন_ তাঁদের প্রত্যেকের জীবন-ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অবশ্যই তাঁরা ছোটবয়সে স্নেহময় পিতা অথবা মমতাময়ী মাতার সান্নিধ্য লাভ করেছেন অথবা কৈশোরে বা যৌবনে কোনো সদ্গুরুর আশ্রয় পেয়েছেন !
দশ-বারোটা private tutor দিয়ে কোনো নামী দামী স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ালে কখনই ঐ ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে বিবেকবান বা শ্রদ্ধাবান হবে না – হোতে পারেও না ! দেখা যাবে, এই ছেলেমেয়েরা হয়তো বিভিন্ন competitive পরীক্ষায় ভালো rank করবে, Joint entrance পাশ করে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে, W.B.C.S অথবা I.A.S পাশ করে দেশের দায়িত্বপূর্ণ সরকারি পদ অলংকৃত করবে – কিন্তু প্রকৃত অর্থে ‘মানুষ’ হবে না!
নামী-দামী স্কুলে পড়াশুনার দ্বারা কোনো ব্যক্তি পন্ডিত নিশ্চয়ই হোয়ে উঠতে পারে কিন্তু ঐ পড়াশুনা জানা ব্যক্তি প্রকৃত “মানুষ” হয় না। বরং দেখা যায় এই ধরনের ছেলেমেয়েরা চরম স্বার্থপর হয়ে ওঠে! পরবর্তী জীবনে এরা হয়ে ওঠে এক একটা টাকা রোজগারের machine ! টাকার জন্য এরা বাবা-মা, পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের সঙ্গেও বেইমানি করতে পারে ! বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা থাকলে এরা তাদেরকে সময় দেবার কোনো প্রয়োজনই বোধ করে না, কারন শ্রদ্ধা-বোধটাই তো এদের তৈরি হয়না ! আর যারা নিজের জন্মদাতা পিতা বা গর্ভধারিনী মা-কে শ্রদ্ধা করতে পারে না, তারা কি করে দেশপ্রেমিক হবে _বলুন ? দেশের জন্য স্বার্থত্যাগ বা আত্মত্যাগ করা তো দূরের কথা –ঐ নিয়ে ভাবনা-চিন্তারই সময় পায় না ! বরং এরা দেশের চরম সর্বনাশ করতেও পিছপা হয় না !
প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষে মিশনারী স্কুল (ইংরেজদের স্থাপিত, যেমন St.Pouls, St.Xavier’s school ইত্যাদি) যখন থেকে চালু হয়েছিল – তারপর থেকেই দেখা গেছে এইসব বিদ্যালয়ের পাশ করা ছেলেরাই বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদে বসতে শুরু করেছিল। আর সেই গোড়া থেকেই ভারতবর্ষে officer level-এ দুর্নীতিও শুরু হয়েছিল ! তখন বিদেশীয়রা অত্যাচারী ছিল বা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, এখন স্বদেশীয়রা !
এবার কথা হোচ্ছে, নামীদামী বিদ্যালয়ে পড়াশোনার ফলে এমনটা কেন হোচ্ছে ? এর কারণটা বলছি শোনো – এই যে খুব ছোটো বয়েস থেকেই ওদেরকে সমাজের অনেকের কাছ থেকে isolated করে দেওয়া হোচ্ছে এবং বলা হোচ্ছে তুমি সাধারণ আর পাঁচজনের মতো নও_তুমি নামী স্কুলে পড়ো_এখানে প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ_তোমাকে স্কুলে টাই-বুট-কোট পড়তেই হবে – ইত্যাদি ইত্যাদি ! ব্যস হয়ে গেল ! ঐ ছেলেমেয়েরা ছোটো বয়েস থেকেই সরকারি স্কুলে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হীন চোখে দেখতে শুরু করে দেয় !
বর্তমানের ভারতীয় সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা মিশন স্কুলগুলো অবশ্য তাদের ছাত্রদেরকে ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির শিক্ষা, ধুতি পরার শিক্ষা ইত্যাদি শিক্ষা দেয় – কিন্তু তবুও ঐসব নামী স্কুলের ছাত্রদের একটা ego থাকে যে, “আমরা অমুক স্কুলের ছাত্র”! এটা এমনকি তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও ক্রিয়া করে !
সাধারণ মানের মেধাবিশিষ্ট ছাত্ররা বা সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা তো ঐসব স্কুলে পড়তে পারে না – এতো খরচ, প্রচুর donation –গরীব মানুষেরা এসব কি করে যোগাবে ? ফলে ঐসব ছাত্রছাত্রীদের ছোটবেলা থেকেই একটা stamp লাগিয়ে দেওয়া হোচ্ছে “এরা ওমুক মিশনের ছেলে”! ব্যস্, এইভাবে ছোটো থেকেই সমাজ থেকে, সমাজের আর পাঁচজন সদস্যের থেকে ওরা isolated হয়ে যায় ! ….. (ক্রমশঃ)