[“ছেলেমেয়েদেরকে মানুষ করার জন্য নামী-দামী স্কুলে ভর্তি করতেই হবে কি”__ এই জিজ্ঞাসার উত্তরের শেষাংশ।]
……. এবার ওরা(নামী-দামী স্কুলে পড়া ছাত্ররা) বড় হবে –বড় চাকরিও পাবে ! তার কারণ হোলো__ঐ যে যেহেতু নামী বিদ্যালয়ের stamp মারা রয়েছে! এরপর ওরা (ছেলেরা) বিয়েতে যৌতুক হিসাবে প্রচুর টাকা নেবে –তাও ওই stamp-এর দৌলতেই ! শ্বশুরবাড়িতে, সমাজে এরা একটু বিশেষ সম্মান পাবার আশা করবে –এর‌ও কারণ ওই যে, যেহেতু ওদের ডিগ্রীর সাথে নামী বিদ্যালয়ের stamp রয়েছে !
এইভাবে সম্মান পেতে পেতে বা পাওয়ার আশা করতে করতে__ এরা এমন একটা stage-এ পৌঁছে যায় যে, এরা যে সমাজের আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা – তা দেখানোর জন্য বা প্রমাণ করার জন্যই এরা ব্যস্ত থাকে ! ফলে_ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা, দেশের কথা, এইসব ভাবার এদের সময় কোথায় ?
যে কোনোভাবে টাকা রোজগার করতে হবে, ধনী হোতে হবে, নিজের standard বা status বাড়াতে হবে – এইগুলোই যেন এদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যে পরিণত হয় । ফলে কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নিতেও এরা পিছপা হয় না ! এটাই হোলো বর্তমান সমাজের এই ধরণের মানুষদের চিত্র !
সুতরাং তোমরা যারা এই যুগের নতুন জেনারেশনের সদস্য, যারা এখন নতুন বাবা-মা হয়েছো বা হোতে চলেছো__ তারা অন্তত এই ইঁদুর-দৌড়ে নেমো না ! তোমরা তোমাদের সন্তানদের কাছে আদর্শ হও ! তাদেরকে সংগ্রাম করে মানুষ হোতে শেখাও ! না চাইতেই একডজন পেন্সিল, হাফডজন পেন, অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড়, একগাদা অহেতুক খেলনা দিয়ে শিশুবয়স থেকেই ওর চরিত্র বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-টা নষ্ট করে দিও না।
আমি এমন বাবা-মাকে ও দেখেছি, যারা তাদের ছেলেমেয়েদের আগেই প্রচুর খেলনা কিনে দিয়েছে, তবু ছেলের পরীক্ষার আগে বাবা তাকে বলছে, “এবার পরীক্ষায় যদি ফার্স্ট হও –তাহলে তোমাকে ‘কারবাইন'(এক ধরণের অত্যাধুনিক বন্দুক) কিনে দেবো।” এবার বলো তো__ কারবাইন(খেলনা) নিয়ে ঐ শিশু কি করবে ? কারবাইন থেকে ও কি শিখবে ?
এইজন্যেই বলছিলাম আদর্শ পিতা-মাতা হোতে ! কিসে সন্তানের মঙ্গল হবে – এটা সবসময় মাথায় রেখে কাজ করবে তোমরা। নিজেরাও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিও না, আর সন্তানদেরকেও ভেসে যেতে দিও না !
তবে একটা ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করে দিই__ছোটো ছোটো শিশুদেরকে যেন বোকা বা অবোধ ভেবো না – বিশেষতঃ আজকালকার শিশুদেরকে ! ওরা ভীষণ বুদ্ধিমান –এরা যুগ বিবর্তনের ফসল ! এখন তো মা-বাবা আর একটা বা দুটো শিশু – এই নিয়েই আজকালকার পরিবার ! আমি দেখেছি – এইরকম কোনো পরিবারে কোনো কারণে__ মা যদি ছেলেকে শাসন করে, তখন বাবা ঐ শিশুকে আদর করে ! আবার বাবা বকাবকি করলে, মা__ বাবার কাছ থেকে শিশুকে আদর করে সরিয়ে নিয়ে যায় ! শিশুরা এটা বোঝে ! বাবা-মায়ের মধ্যে যে সামান্য হোলেও একটা ego-র লড়াই রয়েছে – সেটা ওরা বোঝে এবং তার সুযোগ গ্রহণ করে। কোনো পরিবারে বাবা যদি স্ত্রৈন হয়, তবে সন্তান মায়ের দলে চলে যায়। আবার কোনো পরিবারের পুরুষ যদি স্ত্রীকে dominate করে, সেখানে শিশুটি বাবার দলে চলে যায়। এইভাবে শিশু-অবস্থা থেকেই তারা বাবা-মাকে exploit করা শুরু করে দেয়। শিশু অবস্থায় (পাঁচ বছর পর্যন্ত) স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর থাকে। বাবা-মায়ের কোনো হালকা কথা বা অনৈতিক,গর্হিত কাজ শিশুর বড় বয়েস পর্যন্ত স্মৃতিতে থাকে ! তাই শিশুকে ‘ছোটো’ মনে করে – তাদের সামনে পিতা-মাতার কোনোরূপ হালকা আচরণ করা উচিত নয় ! এতে ছোটবয়সেই সন্তান পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা হারায় !
ছোটো থেকেই সন্তানের কাছে যদি পিতা-মাতা আদর্শ না হয়, তাহলে সে বড় হয়ে কখনও তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে পারবে না। তাই বলছিলাম – তোমরা সন্তানের কাছে আদর্শ পিতা-মাতা হও। আর সন্তানকে অহেতুক আদর দিয়ে ‘বাঁদরে’ পরিণত কোরো না – এখানে ‘বাঁদর’ অর্থে স্বার্থপর, অমানবিক ব্যক্তিকে বোঝানো হোচ্ছে। তাদেরকে সংগ্রাম করে বড় হোতে শেখাও। এতে তার সমস্ত বিষয়ের উপরেই মূল্যবোধ তৈরি হবে।
তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি – সংগ্রাম করে যারা বড় হয়, তারা যদি পরবর্তী জীবনে কোনো উন্নত আদর্শের সাহচর্যে না আসে, তাহলে তারা পরবর্তীতে খুব খিটখিটে হয়ে যায় ! দেখবে অনেক বুড়োকর্তা হয়তো যৌবনে সফল ছিল – কিন্তু বার্ধক্যে এসে পরিবারের কারো সাথে adjust করতে পারছে না । তোমাদের অবশ্য সে চিন্তা নাই, তোমরা সর্বদা ভগবৎ-ভাবনায় থাকবে। আর তাতেই তোমাদের এবং তোমাদের সন্তানের মঙ্গল হবে।।