জিজ্ঞাসু :– মহাভারত থেকে একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি__ একে তো কুরুক্ষেত্র ছিল ধর্মক্ষেত্র, যেখানে মারা গেলেই মোক্ষ ! তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং সেখানে উপস্থিত – তবু মহামতি ভীষ্ম কেন শরশয্যায় অতো কষ্ট সহ্য করে, আরো কিছুদিন থেকে যেতে চাইলেন – উনি কি জ্ঞানী ছিলেন না ?
গুরুমহারাজ :– বলা হয়ে থাকে যে, মহাভারতের উল্লেখিত ভীষ্ম ছিলেন অষ্টবসুর [ধর, ধ্রুব, সোম, অনল, অনিল, বিষ্ণু (অহ/সাবিত্র), প্রত্যুষ ও প্রভাস (মতান্তরে প্রভব, দ্যু-বসু)] এক বসু ! দৈব-অভিশাপে হস্তিনাপুরের রাজা সান্তনু ও গঙ্গাদেবীর কাছে অষ্টবসুকেই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল ; বাকি সাতজনের তাৎক্ষণিক মুক্তি হয় (কেন না __জন্মাবার সাথে সাথেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।) কিন্তু যুগ প্রয়োজনে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলায় সহায়তা করার জন্য একজনকে শরীর রাখতে হয়েছিল। তাই রাজা শান্তনুর অনুরোধে দেবী গঙ্গা দেবব্রতকে (ভীষ্ম) বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। যৌবনে অসাধারণ বীর ও বিচক্ষণ রাজকুমার হিসাবে রাজ্যে তিনি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ! সেইসময় শান্তনু মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর প্রেমজালে জড়িয়ে পড়েন এবং তাকেই বিবাহ করতে চান। কিন্তু পূর্বপক্ষের স্ত্রীর সন্তান থাকায়, সেই পুত্র-ই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, এইটি ভেবে নিয়ে সত্যবতী বিবাহে অসম্মতি জানালো। ফলে পিতার ইচ্ছার সম্মান রাখতে এবং সত্যবতীর মনোবাসনা বজায় রাখতে _ রাজকুমার দেবব্রত তিনটি ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন,– প্রথমটি হোলো – তিনি জীবনে কখনও বিবাহ করবেন না। দ্বিতীয়টি হোলো – তিনি সিংহাসনের দাবী (রাজা হবার) করবেন না এবং তৃতীয়টি হোলো – তিনি আজীবন হস্তিনাপুরের সিংহাসন রক্ষা করবেন – তাতে রাজা যেই হোক !
কথিত আছে, এই ভীষণ প্রতিজ্ঞা পালন করার জন্যই দেবব্রতের পরবর্তীতে নাম হয় ভীষ্ম।
দ্যাখো, মহাভারতের চরিত্রগুলির মধ্যে ভীষ্মের চরিত্র অন্যতম মহান চরিত্র ! যাঁর জীবনে বারবার শুধু ত্যাগের এবং বীরত্বের মহিমা ফুটে উঠেছে ! তাছাড়া তিনি যে মহাজ্ঞানী ছিলেন – তাও মহাভারতে স্পষ্ট করা রয়েছে। উনি যখন শরশয্যায় শায়িত, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পঞ্চপান্ডবকে নিয়ে ওনার কাছে গিয়েছিলেন মহাজ্ঞানী ভীষ্মের কাছ থেকে “জীবন পথের পাথেয়” অর্থাৎ জীবনে চলার পথে উপযোগী কিছু জ্ঞান লাভ করার জন্য ! এটা চাট্টিখানি কথা নয় – ভগবান স্বয়ং এটা করছিলেন !!
সুতরাং তুমি যে জিজ্ঞাসা করছো ‘উনি জ্ঞানী ছিলেন কি না’ – এতে তুমি এই ধরনের একটা মহান চরিত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছো – এটা ঠিক কাজ নয় ! আমি এখানে সকলের সকল প্রকার জিজ্ঞাসার উত্তর দিই ঠিকই _ কিন্তু তোমাদের জিজ্ঞাসার মধ্যে তোমার দেশের (ভারতের) প্রাচীন পরম্পরার প্রতি একটা সমীহ থাকা দরকার! আমি একটা জিনিষ সম্প্রতি লক্ষ্য করছি __তোমরা young generation-রা ভীষন শ্রদ্ধাহীনতায় ভোগো। এইটা ঠিক নয় – “শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্”! প্রাচীন ভারতীয় পরম্পরার উপর, ভারতীয় প্রাচীন মনীষার উপর তোমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ !
মহামতি ভীষ্ম ঐ ধর্মক্ষেত্রকেই তার মৃত্যুর স্থান নির্বাচিত করে নিয়েছিলেন। কথায় রয়েছে স্থান-কাল-পাত্র ! স্থান তো নির্বাচিত হোলো, এবার পাত্র ! পাত্র বলতে এখানে উনি নিজেই – কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতিটাও কোনো সাধকের, কোনো জ্ঞানীর ক্ষেত্রে তো কাম্য হবেই, এই রকম সুযোগ পাওয়া যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রেই অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ! যাই হোক, এইবার বাকি থাকলো ‘কাল’ বা সময়। মহাজ্ঞানী, মহামতি ভীষ্ম কাল গণনা করে দেখলেন যে, মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই উত্তরায়ণের মহাসন্ধিক্ষণের মহেন্দ্রযোগ রয়েছে। উনি এটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন – ভাবলেন এই দুর্লভ সুযোগ-ই বা ছাড়ার দরকার কি ! বাকি দুটো যখন কার্যকরী হয়েই গেল – এটাই বা বাকি থাকে কেন, সেটাকেও গ্রহণ করা যাক !
কথিত আছে মহাভারতের যুদ্ধের সময় উত্তরায়নের ওই দিনটি সেই সময়কালে তিথি-নক্ষত্রের বিচারে খুবই শুভদিন ছিল ! (পূর্ণকুম্ভ!!!) অবশ্য আজও হিন্দু culture-এর লোকেরা উত্তরায়ণের দিনটি শুভদিন হিসাবেই মানে ! ঐদিনে অনেকেই নদী, গঙ্গা বা যে কোনো স্রোতস্বিনীতে পুণ্যস্নান সারে। এই উপলক্ষে স্থানে স্থানে মেলাও বসে,
সাগরমেলা, কুম্ভমেলা ইত্যাদি ধর্মীয় মেলা-অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থী আজও জমায়েত হয় এবং স্নান করে পুণ্য অর্জন করে ।৷
গুরুমহারাজ :– বলা হয়ে থাকে যে, মহাভারতের উল্লেখিত ভীষ্ম ছিলেন অষ্টবসুর [ধর, ধ্রুব, সোম, অনল, অনিল, বিষ্ণু (অহ/সাবিত্র), প্রত্যুষ ও প্রভাস (মতান্তরে প্রভব, দ্যু-বসু)] এক বসু ! দৈব-অভিশাপে হস্তিনাপুরের রাজা সান্তনু ও গঙ্গাদেবীর কাছে অষ্টবসুকেই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল ; বাকি সাতজনের তাৎক্ষণিক মুক্তি হয় (কেন না __জন্মাবার সাথে সাথেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।) কিন্তু যুগ প্রয়োজনে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলায় সহায়তা করার জন্য একজনকে শরীর রাখতে হয়েছিল। তাই রাজা শান্তনুর অনুরোধে দেবী গঙ্গা দেবব্রতকে (ভীষ্ম) বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। যৌবনে অসাধারণ বীর ও বিচক্ষণ রাজকুমার হিসাবে রাজ্যে তিনি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ! সেইসময় শান্তনু মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর প্রেমজালে জড়িয়ে পড়েন এবং তাকেই বিবাহ করতে চান। কিন্তু পূর্বপক্ষের স্ত্রীর সন্তান থাকায়, সেই পুত্র-ই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, এইটি ভেবে নিয়ে সত্যবতী বিবাহে অসম্মতি জানালো। ফলে পিতার ইচ্ছার সম্মান রাখতে এবং সত্যবতীর মনোবাসনা বজায় রাখতে _ রাজকুমার দেবব্রত তিনটি ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন,– প্রথমটি হোলো – তিনি জীবনে কখনও বিবাহ করবেন না। দ্বিতীয়টি হোলো – তিনি সিংহাসনের দাবী (রাজা হবার) করবেন না এবং তৃতীয়টি হোলো – তিনি আজীবন হস্তিনাপুরের সিংহাসন রক্ষা করবেন – তাতে রাজা যেই হোক !
কথিত আছে, এই ভীষণ প্রতিজ্ঞা পালন করার জন্যই দেবব্রতের পরবর্তীতে নাম হয় ভীষ্ম।
দ্যাখো, মহাভারতের চরিত্রগুলির মধ্যে ভীষ্মের চরিত্র অন্যতম মহান চরিত্র ! যাঁর জীবনে বারবার শুধু ত্যাগের এবং বীরত্বের মহিমা ফুটে উঠেছে ! তাছাড়া তিনি যে মহাজ্ঞানী ছিলেন – তাও মহাভারতে স্পষ্ট করা রয়েছে। উনি যখন শরশয্যায় শায়িত, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পঞ্চপান্ডবকে নিয়ে ওনার কাছে গিয়েছিলেন মহাজ্ঞানী ভীষ্মের কাছ থেকে “জীবন পথের পাথেয়” অর্থাৎ জীবনে চলার পথে উপযোগী কিছু জ্ঞান লাভ করার জন্য ! এটা চাট্টিখানি কথা নয় – ভগবান স্বয়ং এটা করছিলেন !!
সুতরাং তুমি যে জিজ্ঞাসা করছো ‘উনি জ্ঞানী ছিলেন কি না’ – এতে তুমি এই ধরনের একটা মহান চরিত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছো – এটা ঠিক কাজ নয় ! আমি এখানে সকলের সকল প্রকার জিজ্ঞাসার উত্তর দিই ঠিকই _ কিন্তু তোমাদের জিজ্ঞাসার মধ্যে তোমার দেশের (ভারতের) প্রাচীন পরম্পরার প্রতি একটা সমীহ থাকা দরকার! আমি একটা জিনিষ সম্প্রতি লক্ষ্য করছি __তোমরা young generation-রা ভীষন শ্রদ্ধাহীনতায় ভোগো। এইটা ঠিক নয় – “শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্”! প্রাচীন ভারতীয় পরম্পরার উপর, ভারতীয় প্রাচীন মনীষার উপর তোমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ !
মহামতি ভীষ্ম ঐ ধর্মক্ষেত্রকেই তার মৃত্যুর স্থান নির্বাচিত করে নিয়েছিলেন। কথায় রয়েছে স্থান-কাল-পাত্র ! স্থান তো নির্বাচিত হোলো, এবার পাত্র ! পাত্র বলতে এখানে উনি নিজেই – কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতিটাও কোনো সাধকের, কোনো জ্ঞানীর ক্ষেত্রে তো কাম্য হবেই, এই রকম সুযোগ পাওয়া যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রেই অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ! যাই হোক, এইবার বাকি থাকলো ‘কাল’ বা সময়। মহাজ্ঞানী, মহামতি ভীষ্ম কাল গণনা করে দেখলেন যে, মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই উত্তরায়ণের মহাসন্ধিক্ষণের মহেন্দ্রযোগ রয়েছে। উনি এটাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন – ভাবলেন এই দুর্লভ সুযোগ-ই বা ছাড়ার দরকার কি ! বাকি দুটো যখন কার্যকরী হয়েই গেল – এটাই বা বাকি থাকে কেন, সেটাকেও গ্রহণ করা যাক !
কথিত আছে মহাভারতের যুদ্ধের সময় উত্তরায়নের ওই দিনটি সেই সময়কালে তিথি-নক্ষত্রের বিচারে খুবই শুভদিন ছিল ! (পূর্ণকুম্ভ!!!) অবশ্য আজও হিন্দু culture-এর লোকেরা উত্তরায়ণের দিনটি শুভদিন হিসাবেই মানে ! ঐদিনে অনেকেই নদী, গঙ্গা বা যে কোনো স্রোতস্বিনীতে পুণ্যস্নান সারে। এই উপলক্ষে স্থানে স্থানে মেলাও বসে,
সাগরমেলা, কুম্ভমেলা ইত্যাদি ধর্মীয় মেলা-অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থী আজও জমায়েত হয় এবং স্নান করে পুণ্য অর্জন করে ।৷