জিজ্ঞাসু :– ‘আধ্যাত্মিক উন্নতি’_ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন ? আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য আমাকে কি করতে হবে ?
গুরুমহারাজ :– তুমি এতোক্ষণ আমার কথাগুলি মন দিয়ে শুনছিলে__তাই না (গুরু মহারাজ এর আগে অনেকক্ষণ ধরে মানবের আত্মিক উত্তরণের কথাই আলোচনা করছিলেন) ! দ্যাখো, আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে দুটো কথা রয়েছে_চেতনার উত্তরণ এবং বিবেকের জাগরণ। চেতনাকে উন্নত করতে হোলে, তোমাকে প্রথমেই কোনো উন্নত আদর্শকে অবলম্বন করতে হবে। ‘উন্নত আদর্শ’ কথাটা কেন বললাম বলোতো __চোর, গুন্ডা, বদমাশদের সামনেও আদর্শ রয়েছে, কিন্তু সেটা উন্নত আদর্শ নয় । আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য তোমাকে কোনো ‘আধ্যাত্মিক ব্যক্তি’-কে আদর্শ করতে হবে। সৎসঙ্গে, সৎ-সান্নিধ্যে ঘনঘন আসতে হবে – শুধু বই পড়ে বা লেকচার শুনে কোনো মানুষের কখনোই জীবন-যাপনের ধারার পরিবর্তন করা যায় না, তার স্বভাবের পরিবর্তনও হয় না। মানুষের সামনে যদি কোনো উন্নত আদর্শ না থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তি কখনোই উন্নত জীবনের সন্ধান পাবে না।
উন্নত আদর্শ সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কি হয় জানো – তাঁদের জীবনই হয় তাদের বাণী ! মোহনদাস গান্ধী এই কথাটা ব্যবহার করতো বটে – কিন্তু এইটি ওনার জীবনের ক্ষেত্রে একশভাগ কার্যকরী ছিল না ! ঐ কথাটা একমাত্র কোনো যুগপুরুষ, অবতারপুরুষ বা কোনো সদ্গুরুর ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ সঠিক ! যাদের সারা জীবনটাই ত্যাগ-সাধনা-বৈরাগ্য-প্রেম ইত্যাদি দিয়ে পূর্ণ – তাঁরাই তো মানবের আদর্শ হবে !
যাঁদের জীবনে আত্মসুখের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে বিরহিত হয়ে শুধুই পরার্থে জীবনধারণ – তাঁরা ছাড়া মানবের আদর্শ আর কেই বা হোতে পারে_ বলো! ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মে আমরা দুটি উল্লেখযোগ্য আদর্শের কথা পাই ! এক – প্রলয়ের নটরাজ অর্থাৎ মদন ভস্মকারী সর্বত্যাগী শংকর ! আর দ্বিতীয়জন__ নটবর শ্রীকৃষ্ণ, যিনি সহস্র রমনীর মাঝে থেকেও মদনমোহন !
যাইহোক, তুমি জিজ্ঞাসা করছিলে__ ‘আধ্যাত্মিক উন্নতি’ বলতে কি বোঝায়_তাই তো ! ওই যে একটু আগে বলছিলাম, ‘আধ্যাত্মিক উন্নতি’– মানে হোচ্ছে তোমার ‘বিবেকের জাগরণ’ এবং তোমার ‘চেতনার উত্তরণ’ ! আর যে কোনো মানবের বিবেকের জাগরণ বা চেতনার উত্তরণের সূত্রপাত হয়_ কোনো উন্নত আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ! যদি কোনো ব্যক্তির পরিবারের লোকজন, পিতা-মাতা আধ্যাত্মিক হয়__ তাহলে ওই ব্যক্তি (পুরুষ বা নারী) তার আত্মিক উন্নতির জন্য ছোট থেকেই সচেষ্ট হোতে পারে – অন্যথায় যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো উন্নত আদর্শের সন্ধান সে না পাচ্ছে – ততক্ষণ সে চেতনায় যেখানে ছিল, সেখানেই থাকতে বাধ্য হয় ! তাতে__ সে যতই শিক্ষিত হোক, ধনী হোক, উচ্চকূলে জাত হোক, বা এই ধরণের আর যাই হোক না কেন ?
আজকের সমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করে দ্যাখো – এমনটাই তো হোচ্ছে ! শুধু শিক্ষার ‘মান’ দিয়ে, রাজনৈতিক ক্ষমতার ‘মান’ দিয়ে, জাতিগত সুবিধা দিয়ে (sc/st ইত্যাদি ভাগ করে) সমাজ-নেতা তৈরি করা হোচ্ছে – আর তারই কুফল হোলো__ দুর্নীতি, যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে!
‘বিবেকের জাগরণ’ ও ‘চেতনার উত্তরণ’– দিয়ে যদি মানুষের যোগ্যতার বিচার হোতো এবং সেই ‘বিচার’ অনুযায়ী যদি সমাজনেতাদের স্থান দেওয়া হোতো – তাহলে অবশ্যই সেই সমাজ অত্যন্ত উন্নত হোতো ! যে কোনো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের যখন জন্ম হয়, তখন শুরুটা করে এক বা একাধিক বিবেকবান এবং চেতনায় উন্নত মানুষ ! পরে যখন সেই দল ক্ষমতায় আসে – তখন সেই দলের উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন মানবেরা ছিটকে যায় (তাদেরকে ছিটকে দেওয়া হয় বা মেরেই ফেলা হয়) এবং তখন ক্ষমতা ভোগ করে কিছু ক্ষমতালিপ্সু, ভোগলিপ্সু ব্যক্তিরা। ফলে সমাজের সাধারণ মানুষের যে দুর্গতি সেই দুর্গতিই থেকে যায় !
সাধারণ মানুষের প্রকৃত সেবা কারা করে বলো তো – সর্বত্যাগীরা ! আজও রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ বা বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানুষের বিপদের দিনে(যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে) নিঃস্বার্থভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ! সরকারিভাবেও সবরকম ব্যবস্থা (স্বাস্থ্য, সেবাকেন্দ্র, হোম, হসপিটাল ইত্যাদি) আছে – প্রচুর বেতন দিয়ে অনেক সরকারি কর্মচারীদের সেখানে রাখা হয়, কিন্তু মানুষের প্রকৃত সেবা সেখানে হয় কি ? সেখানে শুধুমাত্র কর্তব্য পালন হয় – আর সেটাও সবক্ষেত্রে হয় না ! সেবার নামে সেখানে হয় চরম মিথ্যাচার ! …. (ক্রমশঃ)
গুরুমহারাজ :– তুমি এতোক্ষণ আমার কথাগুলি মন দিয়ে শুনছিলে__তাই না (গুরু মহারাজ এর আগে অনেকক্ষণ ধরে মানবের আত্মিক উত্তরণের কথাই আলোচনা করছিলেন) ! দ্যাখো, আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে দুটো কথা রয়েছে_চেতনার উত্তরণ এবং বিবেকের জাগরণ। চেতনাকে উন্নত করতে হোলে, তোমাকে প্রথমেই কোনো উন্নত আদর্শকে অবলম্বন করতে হবে। ‘উন্নত আদর্শ’ কথাটা কেন বললাম বলোতো __চোর, গুন্ডা, বদমাশদের সামনেও আদর্শ রয়েছে, কিন্তু সেটা উন্নত আদর্শ নয় । আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য তোমাকে কোনো ‘আধ্যাত্মিক ব্যক্তি’-কে আদর্শ করতে হবে। সৎসঙ্গে, সৎ-সান্নিধ্যে ঘনঘন আসতে হবে – শুধু বই পড়ে বা লেকচার শুনে কোনো মানুষের কখনোই জীবন-যাপনের ধারার পরিবর্তন করা যায় না, তার স্বভাবের পরিবর্তনও হয় না। মানুষের সামনে যদি কোনো উন্নত আদর্শ না থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তি কখনোই উন্নত জীবনের সন্ধান পাবে না।
উন্নত আদর্শ সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কি হয় জানো – তাঁদের জীবনই হয় তাদের বাণী ! মোহনদাস গান্ধী এই কথাটা ব্যবহার করতো বটে – কিন্তু এইটি ওনার জীবনের ক্ষেত্রে একশভাগ কার্যকরী ছিল না ! ঐ কথাটা একমাত্র কোনো যুগপুরুষ, অবতারপুরুষ বা কোনো সদ্গুরুর ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ সঠিক ! যাদের সারা জীবনটাই ত্যাগ-সাধনা-বৈরাগ্য-প্রেম ইত্যাদি দিয়ে পূর্ণ – তাঁরাই তো মানবের আদর্শ হবে !
যাঁদের জীবনে আত্মসুখের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে বিরহিত হয়ে শুধুই পরার্থে জীবনধারণ – তাঁরা ছাড়া মানবের আদর্শ আর কেই বা হোতে পারে_ বলো! ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মে আমরা দুটি উল্লেখযোগ্য আদর্শের কথা পাই ! এক – প্রলয়ের নটরাজ অর্থাৎ মদন ভস্মকারী সর্বত্যাগী শংকর ! আর দ্বিতীয়জন__ নটবর শ্রীকৃষ্ণ, যিনি সহস্র রমনীর মাঝে থেকেও মদনমোহন !
যাইহোক, তুমি জিজ্ঞাসা করছিলে__ ‘আধ্যাত্মিক উন্নতি’ বলতে কি বোঝায়_তাই তো ! ওই যে একটু আগে বলছিলাম, ‘আধ্যাত্মিক উন্নতি’– মানে হোচ্ছে তোমার ‘বিবেকের জাগরণ’ এবং তোমার ‘চেতনার উত্তরণ’ ! আর যে কোনো মানবের বিবেকের জাগরণ বা চেতনার উত্তরণের সূত্রপাত হয়_ কোনো উন্নত আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ! যদি কোনো ব্যক্তির পরিবারের লোকজন, পিতা-মাতা আধ্যাত্মিক হয়__ তাহলে ওই ব্যক্তি (পুরুষ বা নারী) তার আত্মিক উন্নতির জন্য ছোট থেকেই সচেষ্ট হোতে পারে – অন্যথায় যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো উন্নত আদর্শের সন্ধান সে না পাচ্ছে – ততক্ষণ সে চেতনায় যেখানে ছিল, সেখানেই থাকতে বাধ্য হয় ! তাতে__ সে যতই শিক্ষিত হোক, ধনী হোক, উচ্চকূলে জাত হোক, বা এই ধরণের আর যাই হোক না কেন ?
আজকের সমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করে দ্যাখো – এমনটাই তো হোচ্ছে ! শুধু শিক্ষার ‘মান’ দিয়ে, রাজনৈতিক ক্ষমতার ‘মান’ দিয়ে, জাতিগত সুবিধা দিয়ে (sc/st ইত্যাদি ভাগ করে) সমাজ-নেতা তৈরি করা হোচ্ছে – আর তারই কুফল হোলো__ দুর্নীতি, যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে!
‘বিবেকের জাগরণ’ ও ‘চেতনার উত্তরণ’– দিয়ে যদি মানুষের যোগ্যতার বিচার হোতো এবং সেই ‘বিচার’ অনুযায়ী যদি সমাজনেতাদের স্থান দেওয়া হোতো – তাহলে অবশ্যই সেই সমাজ অত্যন্ত উন্নত হোতো ! যে কোনো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের যখন জন্ম হয়, তখন শুরুটা করে এক বা একাধিক বিবেকবান এবং চেতনায় উন্নত মানুষ ! পরে যখন সেই দল ক্ষমতায় আসে – তখন সেই দলের উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন মানবেরা ছিটকে যায় (তাদেরকে ছিটকে দেওয়া হয় বা মেরেই ফেলা হয়) এবং তখন ক্ষমতা ভোগ করে কিছু ক্ষমতালিপ্সু, ভোগলিপ্সু ব্যক্তিরা। ফলে সমাজের সাধারণ মানুষের যে দুর্গতি সেই দুর্গতিই থেকে যায় !
সাধারণ মানুষের প্রকৃত সেবা কারা করে বলো তো – সর্বত্যাগীরা ! আজও রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ বা বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানুষের বিপদের দিনে(যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে) নিঃস্বার্থভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ! সরকারিভাবেও সবরকম ব্যবস্থা (স্বাস্থ্য, সেবাকেন্দ্র, হোম, হসপিটাল ইত্যাদি) আছে – প্রচুর বেতন দিয়ে অনেক সরকারি কর্মচারীদের সেখানে রাখা হয়, কিন্তু মানুষের প্রকৃত সেবা সেখানে হয় কি ? সেখানে শুধুমাত্র কর্তব্য পালন হয় – আর সেটাও সবক্ষেত্রে হয় না ! সেবার নামে সেখানে হয় চরম মিথ্যাচার ! …. (ক্রমশঃ)